Advertisment

স্বপ্নদীপের মৃত্যু! 'উপাচার্যদের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের গায়ে কালি', বললেন অধ্যাপক অভিজিৎ চক্রবর্তী

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যু তদন্তে এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

author-image
Joyprakash Das
New Update
abhijit chakraborty says dignity of ju is being undermined because of few vc

যাদবপুরে বেনিয়মকে কার্যত প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ প্রাক্তন এই উপাচার্যের।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র নদিয়ার স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যু-রহস্য এখনও অধরা। ইতিমধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের বড় কর্তারা অন্দরমহলে বলছেন, ক্লোজ সার্কিট টিভি থাকলে কিছুটা হলেও তদন্তে ক্লু মিলতে পারত। এই র‍্যাগিং কাণ্ডের জন্য পরবর্তী উপাচার্যদের ওপর দায় চাপিয়েছেন অধ্যাপক অভিজিৎ চক্রবর্তী। ২০১৩-২০১৪-তে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অভিজিৎ চক্রবর্তী। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে প্রাক্তন এই উপাচার্য নানা ব্যবস্থা নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে। তাঁর দাবি, তিনি চলে যেতেই আগের অবস্থায় ফিরে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisment

প্রশ্ন- সিসিটিভির রহস্যটা কি?

অভিজিৎ চক্রবর্তী- আমি আসার পরে পরেই সিসিটিভি খুলে দেওয়া হয়েছিল। ১০ থেকে ১৫টা সিসিটিভি বসেছিল। আরও ৩০টা সিসিটিভি বসানোর প্রক্রিয়া চলছিল। সমস্ত গেট, খোলামেলা জায়গায় যেখানে নেশা, মদ চলে সেখানেও নজরদারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। হস্টেলের সামনে এনআইএল ক্যাম্পাসে, তাছাড়া মেইন হস্টেলের দরজায়ও সিসিটিভি বসানোর কথা হয়েছিল।

প্রশ্ন- কবে বন্ধ হল এই উদ্যোগ?

অভিজিৎ চক্রবর্তী- আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যাওয়ার পর প্রো-ভিসি আশিস ভার্মা কিছুদিন দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী উপাচার্য সুরঞ্জন দাস দায়িত্ব নিয়েই সমস্ত সিসিটিভি খুলে দিয়েছেন। তিনি হইচই করে সমস্ত সিসিটিভি খুলে দেন বা বন্ধ করে দেন।

প্রশ্ন- সিসিটিভি খুলল কেন?

অভিজিৎ চক্রবর্তী- সস্তার স্টুডেন্ট পপুলারিটির জন্য সিসিটিভি খুলেছেন। কিছু বাকি সিসিটিভি পাইপলাইনে ছিল। তা যদি একবছরের মধ্যে লাগানো হয়ে যেত এবং চালু রাখা হত তাহলে বোঝা যেত কি অপরাধ হয়েছে, কে করেছে। সিসিটিভি লাগানো থাকলে অপরাধ প্রবণতাও কমে যায়। অপরাধ করতে সাহস পেত না। সেই কারণে সিসিটিভি এখনও লাগানো দরকার। এখনও যদি না লাগায় তাহলে যে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

আরও পড়ুন- ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে, দেওয়ালেই ঘাম মোছা’, স্বপ্নদীপের হস্টেলযাপনের দুই ভয়ঙ্কর রাত!

প্রশ্ন- আপনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অস্থিরতা বন্ধ করতে কি ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন?

অভিজিৎ চক্রবর্তী- মদ, গাঁজা, অসভ্যতা ক্যাম্পাসে পুরো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি নিজে মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে ঢুকতাম। যে কোনও ধরনের বদমায়েসি দেখলে আমি তা আটকাতাম, স্টেপ নিতাম। প্রত্যেকটা হস্টেলে নিজে মাসে দুবার করে ভিজিট করতাম। সেই সময় বাইরের লোককে দেখলে রিকোয়েস্ট করতাম। ভাই তোমরা এখানে থাকবে না। তোমরা চলে যাও। চলে যেতে বাধ্য করতাম। আমি চলে আসার পরে এগুলি সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

প্রশ্ন-ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়ের কী ভূমিকা?

অভিজিৎ চক্রবর্তী- আমি ওঁনাকে বাধ্য করেছিলাম রাতের বেলা ক্যাম্পাসে ঘুরতে। হস্টেলে যেতাম। আমার সঙ্গে ওঁনাকে রাখতাম। অন্য উপাচার্যরা যদি না-করেন, তাহলে তা তাঁদের ব্যাপার।

প্রশ্ন- চুরির ঘটনাও কি ঘটে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে?

অভিজিৎ চক্রবর্তী- ডিপার্টমেন্ট থেকে বহু জিনিস চুরি হয়ে যায়। আমি তা বন্ধ করেছিলাম। গাছ কেটে গাছের গুঁড়ি ট্রাকে করে পাচার হয়। আমি পুরো বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরবর্তী উপাচার্যরা ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে এমন দিন আসত না।

আরও পড়ুন- ‘ইন্ট্রো’র নামে মাত্রাছাড়া ‘মানসিক অত্যাচার’! যাদবপুর-কাণ্ডে ধৃত আরও ২

প্রশ্ন- প্রাক্তন ছাত্ররাও নাকি ক্যাম্পাসে থাকেন?

অভিজিৎ চক্রবর্তী- প্রাক্তন ছাত্র শুনেছেন। আমি বলছি প্রাক্তনী শুধু নয়, বাইরের লোকও থাকত। তারা এখনও থাকে। কিন্তু, তাদের ধরার মতো বা বের করে দেওয়ার মতো সাহস কারও নেই। আমি গিয়ে গিয়ে করতাম। নিজে যেতাম। তাই আমাকে সরে যেতে হয়েছিল। সাধারণত ৪ বছরের টার্ম হয়, আমি ২ বছর ছিলাম।

প্রশ্ন- দাবি, মুক্তমনার চিন্তায় নজরদারি চলবে না….

অভিজিৎ চক্রবর্তী- মুক্তমনা হও, মুক্ত চিন্তা করো। কিন্তু অপরাধকে প্রশ্রয় দেবে কেন?

প্রশ্ন- অ্যান্টি র‍্যাগিং কমিটি আছে। ভারী ভারী নামের বিরাট তালিকা রয়েছে।

তাঁরা তো কিছু করে না। তাঁদের ভিজিট করতে হবে। হস্টেলে গিয়ে থাকতে হবে। এই বড় তালিকা দিয়ে কি হবে? এসব নামেই কমিটি।

প্রশ্ন- স্বপ্নদীপের মৃত্যু তো পুরো সমাজকে নাড়া দিয়ে গেল।

অভিজিৎ চক্রবর্তী- প্রথমত মর্মান্তিক। বাবা-মায়ের কোল খালি হল। একজন উজ্জ্বল ছাত্রকে যাদবপুর হারাল। সায়েন্স থেকে আর্টসে এসেছিল, মানে তাঁর অনেক স্বপ্ন ছিল। উঁচুদরের স্কলার হতে পারত। জাতি একজন স্কলারকে হারল। পাশাপাশি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা মুখে কালি লাগল।

আরও পড়ুন- গারদে অভিযুক্ত, তবু সন্তানহারা মায়ের মনে ‘কু ডাকছে’! বড় আশঙ্কার কথা স্বপ্নাদেবীর মুখে

প্রশ্ন- কি পরামর্শ দেবেন?

অভিজিৎ চক্রবর্তী- এখনও যদি রাজ্য সরকার, রাজ্যপাল, পুলিশ ও কতৃপক্ষ একসঙ্গে বসে কড়া ব্যবস্থা না-নেয় তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যে সব শিক্ষকরা এসব চান না, তাঁদের এককাট্টা হতে হবে।

প্রাক্তন উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কোনও প্রশ্নের জবাব দেবেন না-বলে জানিয়ে দেন। সিসিটিভি খুলে নেওয়ার প্রশ্ন শুনেই মিটিংয়ে আছি বলে ফোন কেটে দেন। অন্য দিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়কে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি। এমনকী এসএমএসেরও কোনও জবাব মেলেনি।

Jadavpur University West Bengal Vice Chancellor Ju Student Death swapnadeep kundu
Advertisment