মেঘালয় থেকে উত্তরবঙ্গে ফিরেই আলিপুরদুয়ারের হাসিমারায় প্রশানিক বৈঠক সারলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই এসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু, প্রশাসনিক সভার মঞ্চে অনুপস্থিত থাকলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন অভিষেকের এই সিদ্ধান্ত? মঞ্চে ভাষণের শুরুতেই তার ব্যাখ্যা দিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।
মঞ্চে উত্তরবঙ্গের মন্ত্রী, প্রশাসনিক কর্তা ও প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত শীর্ষ কর্তাদের নাম সম্বোধনের পরই মুখ্যমন্ত্রী অভিষেকের বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে না থাকার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বলেন, 'আমার সঙ্গে অভিষেক ব্যানার্জীও এসছেন যেহেতু ও মেঘালয়ে গিয়েছিল। আমি ওকে বললাম তুই মঞ্চে আয়, কিন্তু ও বললো না গভর্মেন্টের প্রোগ্রাম, আমি পলিটিক্যাল লোক তাই মঞ্চে যাবো না। আমি বললাম তুইতো একটা এমপি-ও আছিস, মেম্বার অফ পার্লামেন্টও আছিস। অন্তত আমি একবার এসে মানুষকে নমস্কারের জন্য মঞ্চে আসতে বলবো। আমি বলবো যখন এসছে তখন একবার মঞ্চে এসো, মানুষকে নমস্কার করে নেমে যাও।'
একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি খুব পছন্দ করি এটা। সরকারি প্রোগ্রামে পলিটিক্যাল লোক কেন থাকবেন? এখানে যাঁরাই আছেন তাঁদেরই কোনও না কোনও সরকারি পদ আছে।' এতকিছুর পরও অবশ্য মমতা বলেছেন, 'কিন্তু ও মেম্বার অফ পার্লামেন্ট বলে থাকতে পারে।'
মুখ্যমন্ত্রীর এসব বলার মধ্যেই মঞ্চে আসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জোড় হাতে সকলকে নমস্কার করে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ ছাড়েন তিনি।
আরও পড়ুন- ২০১৬-র পর নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের চিন্তা বাড়ল! ডিআই-দের কড়া নির্দেশ হাইকোর্টের
দল ও সরকারকে এক করে ফেলার নানা অভিযোগ ইতিমধ্যেই উঠেছে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তাই দল ও সরকারের ভামূর্তি ফেরাতে মরিয়া তৃণমূল নেত্রী। যা এ দিন অভিষেকের প্রশাসনিক মঞ্চে না ওঠা দিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ দিতে চাইলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছর 'ন্যায্য' চাকরি দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অভিষেকের বৈঠক হয় তাঁর ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরে। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও। কেন প্রশাসনের কোনও অংশ না হয়েও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক? এই প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। যা যুৎসই জবাব দিতে তৃণমূল নাস্তানাবুদ খেয়েছিল বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। ফলে এদিনের ঘটনা দিয়ে তৃণমূল নেত্রী সেই বিতর্কে জল ঢালার চেষ্টা করলেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- টাকা ডাবলের ‘ধামাকা’ সুযোগ পোস্ট অফিসে, বিভিন্ন স্কিমে বেড়েছে সুদের হার
অন্যদিকে জেলায় জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশানিক বৈঠকে ডাক পান না বিরোধী সাংসদ, বিধায়ক সহ অন্যান্যস্তরের জনপ্রতিনিধিরা। দীর্ঘদিন ধরেই এই অভিযোগ করছেন বিরোধী বিজেপি, বাম ও কংগ্রেস। বিরোধীদের দাবি, দল ও প্রশাসনকে এক করে ফেলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আলিপুরদুয়ারের উদাহরণ তুলে সেই ভাবমূর্তিও অন্যখাতে মোড় দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় মুখ্যমন্ত্রী।