এক ঢিলে দুই পাখি মারার প্রবাদ আছে, কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে নয়া কর্মসূচি নিয়ে একাধিক লক্ষ্য পূরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূল নবজোয়ারে ভাসিয়ে দিতে চায় গত পুরনির্বাচনের প্রার্থী বাছাই থেকে ভোটপ্রক্রিয়া, ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচন, পাশাপাশি পঞ্চায়েতে মজবুত সংগঠন ও প্রার্থী বাছাইয়ের নয়া কৌশলও নেওয়া হয়েছে এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে।
গত ২০২২ পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী বাছাই নিয়ে রীতিমতো ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটেছিল। মুহুর্মুহু বদলে গিয়েছে প্রার্থীদের নাম। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বর সেই প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিরোধ একেবারে প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। সকাল, বিকেল, রাতে সময়ের সঙ্গে প্রার্থী তালিকায় একাধিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন হয়েছে। জল্পনা রয়েছে সেই সময় কয়েকজন শীর্ষ তৃণমূল নেতা ওই অগোছালো পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছিলেন। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস সেই ভুল করতে নারাজ। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এবার পঞ্চায়েতে প্রার্থী বাছাই নিজেই তদারকি করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সাধারণ সম্পাদক হলেও গত পুরসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিল ঘাসফুল শিবির।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন ২ মাস ব্যাপী বাংলা পরিক্রমার কর্মসূচিতে জনসংযোগের পাশাপাশি পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছাই করা হবে। মানুষই ঠিক করবে পঞ্চায়েতের তিন স্তরে কারা প্রার্থী হবে। রাজনৈতিক মহলের মত, গত পুরনির্বাচনে যে অগোছালো ভাবে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছিল তাতে দলের মুখ পুড়েছিল। এবার যাতে প্রার্থী বাছাই নিয়ন্ত্রিত ভাবে করা যায় সেই দিকেই নজর দিয়েছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক।
তাছাড়া গত পুরনির্বাচনের দিন ভোটলুটের অভিযোগ উঠেছিল শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। এমনকী কলকাতা কর্পোরেশনের ভোটের স্বচ্ছতা নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছিল। বিগত কয়েক মাস ধরেই দলের অভ্যন্তরে ও বাইরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ঘোষণা করে আসছেন, সামনের গ্রামপঞ্চায়েত নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। শুধু পুরভোট নয়, গত ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরের বছর ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে ১৮টি আসন পেয়ে ব্যাপক উত্থান হয় বিজেপির। আসন কমে তৃণমূলের। ২০১৮ নির্বাচনে যে সমস্যা ছিল তা পরে স্বীকারও করেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েতে বিরোধীদের প্রার্থী দিতে বাধা দেওয়া, ভোটের দিন ব্যাপক হিংসা সবই ২০১৯ লোকসভায় তৃণমূলের বিপক্ষে গিয়েছিল বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল।
সব থেকে বড় কথা এই প্রথম ২ মাস টানা বাংলা পরিক্রমা করতে চলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, এর ফলে সরাসরি স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ হবে অভিষেকের। তাঁদের সঙ্গে মত বিনিময় হবে। কোনও দিন লড়াই না-করেই ক্ষমতা পেয়েছেন অভিষেক, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু-সহ অনেকেই এই অভিযোগ করেন। আপাতত বাড়ি ছেড়ে মাঠে-ময়দানে গ্রামীণ রাজনীতির অ-আ-ক-খ রপ্ত করতে চাইছেন অভিষেক। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে যা অনেকটাই কাজে লাগবে।
এদিকে রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক তৃণমূলের মন্ত্রী, বিধায়ক ও নেতা জেলবন্দি। এছাড়াও গরুপাচার, কয়লাপাচার-সহ একাধিক বিষয়ে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ও সিবিআই। বগটুই, হাঁসখালি, আনিস হত্য়া-সহ নানা ইস্য়ু তৃণমূলের গলায় কাঁটা হয়ে আছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই পরিস্থিতিতে অভিষেকের রাজ্য পরিক্রমা জোড়াফুল শিবিরকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কতটা ফায়দা দেবে, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েই যাচ্ছে। তবে ঠান্ডা ঘরে বসে থাকা আর ময়দানে নেমে মানুষের মুখোমুখি হওয়া কিছুটা হলেও পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।