রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে বাংলার মন্ত্রী অখিল গিরির অবমাননার জেরে বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব জমা দিয়েছিলেন বিজেপি পরিষদীয় দল। মন্ত্রীকে বরখাস্তের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অধ্যক্ষ তা খারিজ করতে প্রতিবাদে মুখর হন গেরুয়া বিধায়করা। বিধানসভার অন্দরে আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান তোলেন শুভেন্দু অধিকারী, অগ্নিমিত্রা পালরা। বিধানসভা কক্ষের অন্দরে বিজেপি বিধায়কদের প্রতিবাদের মাঝেই তৃণমূলের মহিলা বিধায়করা পদ্ম বিধায়কদের আচরণের প্রতিবাদ করতে থাকেন।
পরে অধিবেশনের প্রথম পর্ব শেষে কক্ষ ত্যাগ করে সোচ্চার হন বিজেপি বিধায়করা।
কক্ষের বাইরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'রাষ্ট্রপতিকে নিশানা করে এমন কুকথা বলায় মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার দাবি তুলেছিলাম। কিন্তু স্পিকার তা খারিজ করলেন। এটা কোনও বিচারাধীন বিষয় নয়। মুখ্যমন্ত্রী চাইলেই মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে পারেন। ফলে মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করতেই পারতেন। কিন্তু তা হল না। আমরা প্রতিবাদ করতেই কার্যত হাউস মুলতবিতে বাধ্য হলেন স্পিকার। বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হওয়ার পর এই প্রথম এই স্পিকার এমন করলেন। বলতে গেলে গত সাড়ে ১১ বছরে এই প্রথম। এরকম আরও হবে। বিরোধী দলের চাপ ওরা টের পাচ্ছেন। এই আন্দোলন চলবে।'
রাষ্ট্রপতিকে কুকথা বলার পরই তৃণমূলের তরফে রাজ্যের আরেক মন্ত্রী বীরবাহা হঁসদাকে নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর একটি মন্তব্য সমাজমাধ্যমে তুলে ধরা হয়। যা নিয়েও হইচই পড়ে যায়। অখিল গিরির মন্তব্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চাইলেও শুভেন্দুর ওই বক্তব্য নিয়ে বিরোধী দলনেতার নিন্দা করেছিলেন তিনি। কেন বিজেপির কোনও শীর্ষ নেতা ক্ষমতা চাইছেন না সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন।
কক্ষের অন্দরে বিজেপি বিধায়কদের প্রতিবাদ, চিৎকারের মাঝে সেই প্রশ্নই এদিন ছুড়ে দেন তৃণমূলের মহিলা বিধায়করা। পরে মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, 'অখিল গিরির মন্তব্যে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীতো নিজে আমার মতো এক আদিবাসী মহিলাকে অপমান করেছেন। তার জন্য এখনও ক্ষমা চাননি। বোঝাই যাচ্ছে আদিবাসীদের প্রতি বিজেপির কোনও সম্মান নেই। এখন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এসব চিৎকার করে মুলতবি প্রস্তাব আনছেন।'
আরও পড়ুন- ‘কয়লা ভাইপো বলে কাকে বুঝছেন তাঁরা?’ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনকে প্রশ্ন শুভেন্দুর
সোমবার আদিবাসীদের পাঞ্চি উত্তরীয় পরে এবং দ্রৌপদী মুর্মুর স্টিকার জামায় সেঁটে বিধানসভা কক্ষে প্রবেশ করেন বিজেপি বিধায়করা।
কী বলেছিলেন অখিল গিরি?
গত ১১ নভেম্বর নন্দীগ্রামের একটি জনসভায় রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কুমন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছিল কারামন্ত্রী তথা পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের বিধায়ক অখিলের বিরুদ্ধে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে আক্রমণ করতে গিয়ে অখিল ছিলেন, 'আমরা রূপের বিচার করি না। তোমার রাষ্ট্রপতির চেয়ারকে আমরা সম্মান করি। তোমার রাষ্ট্রপতিকে কেমন দেখতে বাবা?' পঞ্চায়েত ভোটের আগে অখিলের এই মন্তব্য ঘিরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আসরে নামে বিজেপি। অখিলের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় নালিশ থেকে আদালতে মামলা রুজু, জাতীয় মহিলা কমিশনে নালিশ— সবই করা হয়।