আদৌ কি কৃষ্ণনগর পুরসভায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হবে? নাকি বসতে চলেছে প্রশাসক? বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অথৈ জলে ভাসছে কৃষ্ণনগরবাসী। কৃষ্ণনগর পুরসভার পুর পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় ২৪ জন কাউন্সিলরকে শোকজ করেছে রাজ্যের পুর নগরোন্নয়ন ও পুরবিষয়ক দপ্তর। কয়েক দিন আগে পুরসভার কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে এক সরকারি নির্দেশ পাঠায় নগরোন্নয়ন ও পুরবিষয়ক দপ্তর।
প্রসঙ্গত, নিয়মিত পুরসভার পরিষেবা ভবন পরিকল্পনা অনুমোদন, সম্পত্তি কর আদায় পদ্ধতি, স্যানিটেশন ইত্যাদি স্থগিত হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও নিকাশি-নালা পরিষ্কার, ড্রেনেজের অনিয়মিত পরিস্কারে বর্জ্য থেকে ছড়াচ্ছে দূষণও। ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো ভেক্টর বাহিত রোগে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এর সঙ্গে পুরকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতিরও অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদার ও সরবরাহকারীদের সময়মতো বিল না দেওয়ার বিষয়টিও আছে।
গোটা পুর ব্যবস্থা ও নাগরিক পরিষেবা ভেঙে পড়ায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ নগরোন্নয়ন ও পুরবিষয়ক দপ্তর। পুর পরিষেবা ভেঙে পড়ার নিয়ে দপ্তরের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ সম্বলিত চিঠিও জমা পড়েছে। রাজ্যের পুর আইনের ১৯৯৩-এর ৪৩১(১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাজ্যপাল নির্বাচিত পুরবোর্ডকে তাই নির্দেশ দিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেন তাদের বরখাস্ত করা হবে না? তার উপযুক্ত কারণ সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা করতেও বলা হয়। সেই মতো কাউন্সিলররা ৭ দিনের মধ্যে শোকজের চিঠিও পাঠিয়েছে। প্রসঙ্গত, এই শোকজের চিঠির ২৪ ঘন্টা আগে ২৮ জুলাই কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারম্যান রীতা দাসকে অপসারিত করা হয়।
তারপর পুরসভার আইন অনুযায়ী ৭ দিনের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান মিটিং ডেকে চেয়ারম্যান বা চেয়ারপার্সন নির্বাচিত করতে পারে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর আইন অনুযায়ী ভাইস চেয়ারম্যানের পর ৭ দিনের মধ্যে ৩ জন কাউন্সিলর মিটিং ডেকে চেয়ারম্যান বা চেয়ারপার্সন নির্বাচিত করতে পারে। ভাইস চেয়ারম্যান অসুস্থ থাকায় এ নিয়ে কিছু না হলেও বর্তমানে এই অবস্থায় ৩ কাউন্সিলরের মাধ্যমে কি চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হবে? এই দিকেও তাকিয়ে রয়েছে কৃষ্ণনগরবাসী। ফের ফিরবে কি আগের মতো পুর পরিষেব? তবে এ নিয়ে তলবি সভা ডেকে চেয়ারম্যান অপসারিত করা কাউন্সিলরদের মুখে কিন্ত অন্য সুর।
শোকজের জবাবেও তারা সে কথা উল্লেখ করেছেন বলেও জানাচ্ছেন। চেয়ারম্যান অপসারিত করা দলে থাকা তথা সি আই সি মেম্বার শিশির কর্মকার, সৌগতকৃষ্ণ দেবরা এ নিয়ে বলেন, 'চেয়ারম্যান অপসারিত করা উদ্দেশ্য ছিল। আমাদের কারুর চেয়ারম্যান হওয়াটা লক্ষ্য ছিল না। সে কথা আমরা প্রশাসনিক মিটিংয়েও জানিয়েছি।' বিশেষ সভা ডেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার পথে হাঁটার সংখ্যা এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। তবে তার জন্য ক'দিন অপেক্ষা করতে হবে। এ নিয়ে শিশির কর্মকার আরও বলেন,' আমি শহর সভাপতি থাকা অবস্থায় মানুষ ভরসা করে ভোট দিয়েছিল। কিন্ত এই চেয়ারম্যানের কাজে মানুষ আশাহত হয়েছে। মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। তাই চেয়েছিলাম এই চেয়ারম্যান অপসারিত হোক। প্রশাসক বসুক। মানুষের কাজ হোক। দলের প্রতি আস্থা ফিরুক।'
সৌগতকৃষ্ণ দেব আরও বলেন, "এই বিষয়টি নিয়ে দল যা বলবে আমরা তাই মেনে নেব। সেখানে প্রশাসন বসুক কোন আপত্তি নেই। আমরা চেয়েছিলাম চেয়ারম্যান অপসারিত হোক। আমি তাই লিখে পাঠিয়েছি।' এ নিয়ে চেয়ারম্যান অপসারিত করা দলে থাকা তথা সি আই সি মেম্বার মলয় দত্ত বলেন, 'চেয়ারম্যান অপসারিত হোক চেয়েছিলাম। তারপর দল যা করবে তাই হবে।' এ নিয়ে চেয়ারম্যান অপসারিত করা দলে থাকা কংগ্রেস কাউন্সিলর শান্তশ্রী সাহা বলেন, শোকজের চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানের জন্য আমরা কাজ করতে পারিনি সে কথা উল্লেখ করেছি।'
চেয়ারম্যান রীতা দাসের সঙ্গে থাকা তৃণমূল কাউন্সিলর গৌতম মালাকার বলেন,' মানুষ পুরসভার কাজে বঞ্চিত হচ্ছে। এটা সত্যি। তাই ই ও, চেয়ারম্যানকে জানিয়ে ছিলাম। বোর্ড অব কাউন্সিলর না ভেঙে কি ভাবে চালানো যায় সেই নিয়ে আমি আমার বক্তব্য জানিয়ে শোকজের চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি।'এই পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর বর্ণালী দত্ত বলেন, যে চেয়ারম্যান হবে হোক, আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার জন্য এই বোর্ডটা থাকুক সেটাই চাইছি। কি জন্য কাজ করতে পারিনি সে কথা আমরা শোকজের জবাবে জানিয়েছি।' প্রশাসনিক সূত্রে জানাগিয়েছে, এরপরেও যদি অচলাবস্থা থাকে তাহলে জেলাপ্রশাসন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে বিশেষ মিটিং পুরসভাতে ডাকাতে পারেন। তিনি কাউকে সভাপতি করে আসবেন। এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হলে তার নাম সরাসরি পাঠানো হবে রাজ্যের পুর নগরোন্নয়ন দপ্তরে। সেখান থেকে গেজেট নোটিফিকেশন হয়ে জেলাপ্রশাসনের কাছে আসলে নতুন চেয়ারম্যান হয়ে যাবে। তবে এর মধ্যে রাজ্য সরকারের সমস্ত কিছু বুঝে 'প্রশাসক' বসিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও রয়েছে। এখন দেখার বিষয় কৃষ্ণনগরবাসীর নাগরিক পরিষেবা প্রশাসন' বসিয়ে হবে নাকি চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার মাধ্যমে। এ নিয়ে পুরসভা এক্সিকিউটিভ অফিসার ওয়াহিদ আনোয়ার খান বলেন, 'পুর আইন অনুযায়ী যা আছে তাই হবে।'