৪৮ জনের নামের তালিকা। রোল নম্বর-সহ, সেই তালিকা প্রাথমিক শিক্ষকদের। আরও কিছু নথি যেগুলি গ্রুপ ডি নিয়োগের। যার মধ্যে পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড এবং প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের লেটারপ্যাডে কিছু প্রার্থীর তালিকা। শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দিয়ে তল্লাশি চালিয়ে এগুলি উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করেছে ইডি। সূত্র মারফত জানতে পেরেছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
শনিবার আদালতে তোলার সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে কী কী বাজেয়াপ্ত হয়েছে তার একটি তালিকা পেশ করে ইডির তদন্তকারী দল। সেই সঙ্গে অ্যারেস্ট মেমোতে ছিল একটি বিস্ফোরক নাম। তিনি আর কেউ নন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। হেফাজতে নেওয়ার সময় ঘনিষ্ঠ কেউ বা নিকটাত্মীয়কে খবর দেওয়ার জন্য একজনের নাম উল্লেখ করতে হয়। সেই নামটা মুখ্যমন্ত্রীর নিয়েছিলেন পার্থ। গভীর রাত ১.৫৫ মিনিটের পর গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত পার্থ চার বার ফোন করেন মমতাকে। কিন্তু একবারও ফোন ধরেননি মুখ্যমন্ত্রী।
কলকাতা জোনাল অফিসের সহকারী অধিকর্তা মিথিলেশ কুমার মিশ্রর সই ছিল অ্যারেস্ট মেমোতে। তাতে দাবি করা হয়েছে, গভীর রাত ২.৩২, ২.৩৩ ৩.৩৭ এবং পরদিন সকাল ৯.৩৫ মিনিট, এই চার বার মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন পার্থ। কিন্তু একবারও ফোনে মমতাকে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন পার্থ। তার পর অ্যারেস্ট মেমোতে সই করতেও রাজি হননি তিনি।
আরও পড়ুন ভোরে উড়িয়ে আনা হল পার্থকে, মন্ত্রী-অর্পিতাকে মুখোমুখি জেরা করতে পারে ইডি
ইডির রেকর্ড অনুযায়ী, বেশ কিছু নথি পাওয়া গিয়েছে যেগুলি পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতার নামে সম্পত্তি এবং সংস্থার দলিল। ইডি-র জোরালো দাবি, পার্থ অর্পিতার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। সেটাও আবার একটি বিশেষ মোবাইল নম্বর থেকে কথা হত দুজনের। ইডি-র দাবি, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় টাকা নিয়ে বেআইনি নিয়োগ করিয়েছেন পার্থ।
একটি তালিকা পাওয়া গিয়েছে পার্থর বাড়ি থেকে। তাতে প্রাক্তন বিধায়ক অনন্ত দেব অধিকারীর লেটারহেডে গ্রুপ ডি নিয়োগের প্রার্থীদের নাম ছিল। অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের জন্য সমাপ্তি ঠাকুর নামে একজনের অ্যাডমিট কার্ড, আপার প্রাইমারিতে ৪৮ জনের রোল নম্বর-সহ নামের তালিকা, এসবই প্রমাণ করে পার্থ চট্টোপাধ্যায় পুরোপুরি নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন ‘১০০টার মধ্যে ১টা চাকরি নিজের লোককে নয়?’ প্রশ্ন মমতার, ‘দুর্নীতি মানলেন’ পাল্টা শুভেন্দু
বর্তমানে ময়নাগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান অনন্তদেব এ প্রসঙ্গে সাফাই দিয়েছেন, "আমার মনে নেই, কোন বছরে আমি এই সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু একজন বিধায়ক হিসাবে একটা নামের তালিকা পাঠিয়েছিলাম। সব বিধায়করাই করেন। অন্য কয়েকজন বিধায়কের নামের তালিকা পাশ হয়। কিন্তু আমার সুপারিশে কারও চাকরি হয়নি। এই তালিকার কেউই চাকরি পাননি। আমার মনে হয়, এই কারণে সেই তালিকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে পাওয়া গিয়েছে।"
তিনি আরও বলেছেন, "আমার ছেলে এমএসসি এবং বিএড করেছে। মেয়ে এমএ পাশ করেছে ইংরাজি এবং বিএড-ও করেছে। কিন্তু তাঁদের আমি সরকারি স্কুল চাকরির ব্যবস্থা করতে পারিনি।"