Ahmedabad plane crash: এয়ার ইন্ডিয়া ১৭১ (AI 171) বিমানের ভয়াবহ দুর্ঘটনার তদন্তে Aircraft Accident Investigation Bureau (AAIB) কর্তৃক প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্ট ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক ও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ১৫ পাতার এই রিপোর্টে কিছু তথ্য প্রকাশ পেলেও, বহু গুরুত্বপূর্ণ দিক এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে তদন্ত নিয়ে জনমানসে তৈরি হয়েছে অস্পষ্টতা-ধোঁয়াশা।
ককপিট কথোপকথনের খণ্ডিত তথ্য ঘিরে বিভ্রান্তি
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (CVR) থেকে একটি অংশ তুলে ধরা হয়েছে যেখানে এক পাইলট আরেকজনকে প্রশ্ন করেন, “তুমি কেন বন্ধ করে দিলে?”, জবাবে অন্যজন বলেন, “আমি করিনি।” এই কথোপকথন কোথায়, কখন এবং কী প্রেক্ষিতে বলা হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। সম্পূর্ণ কথোপকথন না থাকায় এই গুরুত্বপূর্ণ অংশের ব্যাখ্যা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন খণ্ডিত তথ্য শুধুই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
তথ্য গোপনের অভিযোগ, নীরব সরকার
রিপোর্ট প্রকাশের আগে বা পরে AAIB কিংবা অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক (MoCA)-র পক্ষ থেকে কোনো পূর্ণাঙ্গ বিবৃতি দেওয়া হয়নি। ১৪ জুন, দুর্ঘটনার দুই দিন পর একটি প্রেস ব্রিফিং হলেও, সেখানে কোনো প্রশ্ন নেওয়া হয়নি। এর পর থেকে সরকার পক্ষ থেকে তথ্যপ্রবাহ একপ্রকার বন্ধ। এর ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাড়ছে জল্পনা, গুজব এবং বিভ্রান্তিকর বিশ্লেষণ।
'Transitioned' শব্দ নিয়ে জোর বিতর্ক
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিমানের দুটি ইঞ্জিনের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে RUN থেকে CUTOFF মোডে “transitioned” করে। কিন্তু এই শব্দ ব্যবহারে স্পষ্ট নয়, এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটেছে না কি পাইলটের তরফে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছে। যদিও রিপোর্টে জানানো হয়েছে, thrust control module ২০১৯ ও ২০২৩ সালে প্রতিস্থাপিত হয়েছিল, তবুও FAA-এর ২০১৮ সালের একটি সতর্কতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বোয়িং বিমানে ফুয়েল সুইচের লকিং সমস্যার কথা বলা হয়।
কেন প্রকাশ করা হলো না সম্পূর্ণ CVR ডেটা?
বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, যখন সম্পূর্ণ CVR রেকর্ড তদন্তকারীদের হাতে রয়েছে, তখন কেন শুধু একটি নির্দিষ্ট অংশ জনসমক্ষে আনা হল? এর ফলে তথ্যের চেয়ে ধারণা ও অনুমানই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০১৯ সালের ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের Boeing 737 MAX দুর্ঘটনায় প্রথম তদন্তেই বিস্তারিত CVR তথ্য প্রকাশ করেছিল স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
প্রযুক্তিগত ত্রুটি? রিপোর্টে নেই সুনির্দিষ্ট কিছু
FADEC (Full Authority Digital Engine Control), TCMA (Thrust Control Malfunction Accommodation), এবং EWIS (Electrical Wiring Interconnect System)–এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিমানের প্রযুক্তিগত ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি ছিল কি না, সে বিষয়ে রিপোর্টে কোনো সুনির্দিষ্ট বিশ্লেষণ নেই। অথচ, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মাত্র এক সেকেন্ডে দু’টি সুইচের পরিবর্তন ইলেকট্রনিক সিগন্যাল বা সফটওয়্যার ত্রুটির কারণ হতে পারে।
দেশি-বিদেশি বিমান বিশেষজ্ঞদের মতে, তদন্ত সংস্থা এবং মন্ত্রকের এই নীরবতা ও অস্বচ্ছতা জনমনে ভুল বার্তা দিচ্ছে। তথ্য আড়াল না করে নিয়মিত ও স্বচ্ছ যোগাযোগ বজায় রাখা জরুরি, নইলে সরকারি প্রতিবেদন ঘিরে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।