Political Equation Of Alipurduar Lok-Sabha Constituency: আগামিকাল পার হলে পরশু ভোট। উত্তরবঙ্গের ৩ কেন্দ্রের ভোট দিয়ে শুরু হয়ে যাবে লোকসভা জয়ের ভোটযুদ্ধ। গত লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রেই পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। আবার ওই লোকসভার অধীনে ৭টি বিধানসভায় ২০২১ নির্বাচনেও পরাজিত হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘাসফুল শিবির। এ দিকে ৫ বছর আগে বিজেপি প্রার্থী জন বার্লা জয়ী হয়েছিলেন ২,৪৩,৯৮৯ ভোটের ব্যবাধানে। আলিপুরদুয়ারে ৫৪.৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালকে দলে টেনে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের আদৌ কোনও ফায়দা হবে কি না তা নিয়ে ধন্দে রয়েছে রাজনৈতিক মহল। তবে ৭ বিধানসভা এলাকায় দু'টি নির্বাচনে ব্যপক ভাবে পিছিয়ে থাকার পর এবারের লোকসভা নির্বাচন তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে বেশ বড় চ্যালেঞ্জ।
আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে ২০০৯ সালে বিজেপি প্রার্থী হয়েছিলেন মনোজ টিগ্গা। রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির চিফ হুইফ মনোজ। মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ এবার এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী। এর আগে ২০০৯ সালেও মনোজ প্রার্থী ছিলেন। আবার আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল প্রার্থী রাজ্যসভার সদস্য প্রকাশ চিক বরাইক। পরিচিত প্রার্থী করাই যেন বিজেপি ও তৃণমূলের লক্ষ্য ছিল।
আলিপুরদুয়ারের ৭টি লোকসভাতেই ২০২১-এ জয়ী হয়েছিল বিজেপি। তারমধ্যে তুফানগঞ্জ বিধানসভা কোচবিহার জেলায় ও নাগরাকাটা জলপাইগুড়ি জেলায়। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে কুমারগ্রাম, কালচিনি, আলিপুরদুয়ার, ফালাকাটা ও মাদারিহাট, এই জেলার পাঁচটি বিধানসভাতেই জয় পেয়েছিল পদ্মশিবির। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী জন বার্লা আলিপুর বিধানসভা এলাকা থেকে ১,১৪,৮৭৯ ভোট পেয়েছিলেন। তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তিরকে পেয়েছিলেন ৭৭,৮৫৯ টি ভোট। বিজেপি এই কেন্দ্রে লিড পায় ৩৭,০২০ ভোট। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল ২০২৩-এর প্রথম দিকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেয়। তবে কি আলিপুরদুয়ার থেকে তেমন কোনও লিড পেতে পারে ঘাসফুল শিবির? ২০২১-এ ১৬,০০৭ ভোটের ব্যবধান ছিল তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির।
বিজেপি বিধায়কের দলবদল কিন্তু খুব ভালো ভাবে নেয়নি আলিপুরদুয়ারের ভোটারদের বড় অংশ। জয়ী বিধায়ক অন্য দলে চলে যাওয়ার ভিন্ন অর্থ দেখছেন তাঁরা। বিজেপি বিধায়ককে দলে নিলেও আলিপুরদুয়ার বিধানসভা থেকে আদৌ তৃণমূল লীড নিতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। তবে এবারের নির্বাচনে তৃণমূল কর্মীরাও যে মাটি ছাড়বেন না তা স্পষ্ট। দফায় দফায় সেখানে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আলিপুরদুয়ার শহরে বিধায়কের দলবদলের যে প্রতিক্রিয়া ভোটাররা দিয়েছেন তা গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে। পাশাপাশি লোকসভায় প্রায় আড়াই লক্ষের ওপর ব্যবধান কমিয়ে লড়াইয়ে থাকাও তৃণমূলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন জায়গায় পদ্মপতাকার থেকেও রাম বা বজরঙ্গবলীর ছবি-সহ গেরুয়া পতাকা বেশি দেখা গিয়েছে। তাও আবার রামনবমীর কয়েকদিন আগে। এই গেরুয়া পতাকায় ছেয়ে যাওয়ার মধ্যে বিশেষ কারণ দেখতে পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রচার করে গিয়েছেন উত্তরবঙ্গে। পাশাপাশি এই লোকসভা এলাকার বিভিন্ন চা বাগানের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন। বেশ কয়েকটি চা বাগান বছরের পর বছর বন্ধ। কাজ না থাকায় চা বাগানের হাজার হাজার শ্রমিক পেটের তাগিদে বাইরের রাজ্যে চলে গিয়েছেন। চা বাগানের শ্রমিকদের পরিবারগুলো নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর। তবে আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক ভাঙিয়ে নিলেও পরিস্থিতি কতটা সামাল দিতে পারবে তৃণমূল কংগ্রেস, সেদিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।