কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের হয়ে মামলা লড়তে এসে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমকে দলীয় আইনজীবী নেতাদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল। ওই মামলার আবেদনকারী ছিলেন রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি সাংসদ অধীর চৌধুরী। কংগ্রেসের মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচি-সহ অন্যরা চিদম্বরম গো ব্যাক স্লোগান তুলে পথ আগলে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। এখানে এলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ফের ঘটবে বলেও হুঙ্কার ছেড়েছিলেন কৌস্তভ। এদিকে দিল্লিতে রাজ্য সরকার নয়, তৃণমূলের শীর্ষ নেতার হয়ে মামলা লড়ছেন কংগ্রেস নেতা আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। তার জেরেই তৃণমূলের অভিষেকের মামলা থেকে সরতে হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। এবার তৃণমূলের সেটিং তত্ত্বে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসেরও নাম জুড়তে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিজেপি-তৃণমূল সেটিং নিয়ে সিপিএমের সঙ্গে গলা ফাটাতে ছাড়ছে না রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী থেকে অন্যরা। বাংলার বাইরে গোয়া, ত্রিপুরা, মেঘালয় বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছিল কংগ্রেসের ভোট কাটতে, এই অভিযোগ তুলে সোচ্চার হয়েছিল হাত শিবির। এবার কিন্তু পাসা বদলে তৃণমূলের সঙ্গে গোপন আঁতাতের প্রশ্নের মুখে কংগ্রেস। হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সমর্থনে কলকাতার পথে নেমেছে রাজ্য কংগ্রেস। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলাকারী কংগ্রেস নেতা আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। তিনি আবার এরাজ্য থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভার সাংসদ।
পেশার সঙ্গে রাজনীতি গুলিয়ে দিতে নারাজ রাজনৈতিক মহলের একাংশ। কিন্তু যখন এরাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের অহি-নকুল সম্পর্ক তখন দলের রাজ্যসভার সাংসদ ঘাসফুল শিবিরের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল-জবাব করেন, তখন বিতর্ক ওঠা খুবই স্বাভাবিক। এমনই একজন বিচারপতির নাম তাতে জড়িয়ে আছে যাঁর হয়ে এরাজ্যে কংগ্রেস পথে নেমেছে। এই বিচারপতির রায়ের দরুন রাজ্যের বিরোধী দলগুলি তৃণমূল কংগ্রেসকে চেপে ধরেছিল। সেখানে অভিষেক মনু সিংভি যেন সব গুলিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছেন, মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পর্যবেক্ষক মহলের বক্তব্য, মনে রাখতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসের বাড়তি ভোটে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন অভিষেক মনু সিংভি। সেক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা বলেও একটা কথা রয়েছে!
আরও পড়ুন- স্ত্রীকে নিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে মিছিলে মন্ত্রী বেচারাম, তীব্র যানজটে প্রাণ ওষ্ঠাগত বাকিদের!
তবে শুধু অভিষেক মনু সিংভি নয়, আরেক প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরমও তৃণমূল নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের হয়ে মামলা লড়েছেন। যাঁকে কলকাতা হাইকোর্ট চত্বরে কংগ্রেস আইনজীবী নেতৃত্ব বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। তাঁদের হুঙ্কারে সম্ভবত এখনও দিল্লির কোনও কংগ্রেস নেতা এরাজ্যে আর মামলা লড়তে আসেননি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে দিব্বি তৃণমূলের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের আইনজীবী নেতৃত্ব। তৃণমূলের হয়ে মামলা লড়া প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বালকে আপাতত এসব ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না। তিনি সমাজবাদী দলে যোগ দিয়েছেন।
বঙ্গ রাজনীতিতে এখন আদালতের নানা মামলা-মোকদ্দমা ও রায়ের ওপর নির্ভর করে রাজ্যের বিরুদ্ধে পথে নামছে বিরোধীরা। তৃণমূল আমলের একাধিক দুর্নীতির খোলসা করতে একাধিক সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ওএমআর শিটে নম্বর বাড়ানোয় চাকরিও খুইয়েছেন অনেকে। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে হতাশার সুর শোনা গিয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের গলায়ও। তৃণমূলের সুপ্রিম কোর্টে ভরসা কংগ্রেসের আরেক অভিষেকের ওপর। বিজেপি-তৃণমূল, কংগ্রেস-তৃণমূলকে কার সঙ্গে ওপরতলায় সেটিং করছে তা নিয়ে মশগুল রাজনৈতিক মহল।