Advertisment

Corruption in animal farms: পশু খামার নিয়ে রাজ্যের ভিজিল্যান্স কমিশনে বিরাট দুর্নীতির অভিযোগ, তুলকালাম পূর্ব বর্ধমানে

Allegations of corruption: লালুপ্রসাদ যাদবের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির সঙ্গে এতবড় দুর্নীতির তুলনা উঠছে

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Farm, Scam, খামার, দুর্নীতি,

Farm-Scam: কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠতেই রীতিমতো বিপাকে শাসক দল। (নিজস্ব চিত্র)

Allegations of corruption in animal farms in East Burdwan: জায়গা সরকারের। সেই সরকারি জায়গাতেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সরকারি 'ছাগল খামার'। যে খামারে ছাগল প্রতিপালন তো দূরের কথা, ছাগলের কোনও অস্তিত্বই নেই। কোনও কালে কেউ দেখতে পায়নি। তবুও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মত পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের এই ছাগল খামারকে 'নীল-সাদা' রঙে রাঙানো হয়েছে। কিন্তু, কোনও এক কারণে আজও 'অজ্ঞাত' রাখা হয়েছে ছাগল খামারটির পরিচিতি। তবে উন্নয়নের বাহানায় হওয়া আর্থিক 'কেলেঙ্কারির' অভিযোগের তালিকায় এই ছাগল খামারটি যথারীতি তার স্থান করে নিয়েছে। যা জেনেও রাজ্যের ভিজিল্যান্স কমিশন নীরব বলে অভিযোগ। কিন্তু, সেই অভিযোগ জানানোর জেরে বিত্তবান তৃণমূল নেতাদের চূড়ান্ত রোষানলে পড়তে হচ্ছে তৃণমূলেরই বিবেকবান জনপ্রতিনিধিদেরকে।

Advertisment

মেমারি-তারকেশ্বর রোডের ধারে জামালপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কৃষ্ণচন্দ্রপুর এলাকায় সেচ ক্যানেলের পাড়ে রয়েছে ছাগল খামারটি। তৈরি হয়েছিল বাম আমলে। তখন খামারটির দেওয়ালের রং ছিল অন্য। ছাগলহীন খামারটি ২০২২ সালে শুধু যে 'নীল সাদা' রঙে রাঙানো হয়েছে, তা-ই নয়। অভিযোগ উঠেছে, এই ছাগল খামারে 'উন্নয়ন'-এর জোয়ারের ছোঁয়া লাগানোর অছিলায় সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাও করা হয়েছে।

সেই মত তদানীন্তন তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড 'টেন্ডার' ঘোষণা করে। যার NIT NO-ছিল 53/E.O/2021-2022 এবং MEMO NO ছিল-158/E.O/JAM SL.NO 5,6,7,8,9। ছাগল খামারের উন্নয়নের জন্যে পাঁচ ভাগে ভাগ করা ওই টেন্ডার অনুযায়ী জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি নিজস্ব তহবিলের ১৭,১৩,৮৭৪ টাকা অনুমোদন করে। সেই টেন্ডারপত্রে ছাগল খামারের কথা উল্লেখ থাকলেও আজ অবধি নীল-সাদা রঙের ছাগল খামারের কোনও দেওয়ালে ছাগল খামারের পরিচিতি উল্লেখ করা হয় নি। কেন হয়নি ,তা নিয়েও 'রহস্য'র শেষ নেই।

এদিকে এই টেন্ডার ঘোষণা হওয়ার পরেই প্রকাশ্যে চলে আসে ছাগল খামার সংক্রান্ত 'আর্থিক কেলেঙ্কারি'র যাবতীয় বিষয়টি। তা নিয়ে তদানীন্তন জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি-সহ ব্লকের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতস্তরের ১৯ জন জনপ্রতিনিধি রাজ্যের 'ভিজিল্যান্স কমিশন'-সহ প্রশাসনের নানা মহলে লিখিত অভিযোগ জানান। প্রশাসনকে তৃণমূলের ওই জনপ্রতিনিধিরা জানান, 'পঞ্চায়েত সমিতি যে টেন্ডার ঘোষণা করেছিল, সেটা ই-টেন্ডার ছিল না। ছিল চাপা টেন্ডার। ওই টেন্ডার ঘোষণাটা ছিল লোকদেখানো। আসল উদ্দেশ্য ছিল নির্দিষ্ট এজেন্সির সঙ্গে রফা করে নিয়ে ছাগল খামার উন্নয়নের সরকারি অর্থ আত্মসাৎ। সেই মতই তদানিন্তন পঞ্চায়েত সমিতির দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা আগাম তাঁদের মনোনীত এজেন্সিকে আসরে নামান বলেও অভিযোগ। ওই এজেন্সি ছাগল খামারের উন্নয়ন তো দূরের কথা, অতীব নিম্নমানের পাঁচ দফার কিছু কাজ, আর নীল-সাদা রং করে দিয়ে দায় সারে। আর তা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ প্রখর হতেই ঝোপ জঙ্গল গ্রাস করে নিয়েছে ছাগল-শূন্য এই খামারকে।

তবে ছাগল খামারটি ঝোপ জঙ্গলে ঢাকা পড়ার মতই এতদিন ছাগল খামার নিয়ে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টিও ধাপাচাপা পড়েছিল। কিছুদিন হল, ছাগল খামার সংক্রান্ত দুর্নীতির 'ইস্যু'কে একেবারে প্রকাশ্যে এনে চাগিয়ে তুলেছেন তৃণমূলের প্রাক্তন জনপ্রতিনিধিরা। এর কারণ প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, 'ছাগল খামার নিয়ে হওয়া এতবড় কেলেঙ্কারিতে জড়িতরা কেউ আজ অবধি শাস্তি পায়নি। উলটে আরজি করের দুর্নীতির ঘটনার মতই ছাগাল খামার সংক্রান্ত দুর্নীতি ধাপাচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। আর অভিযোগ দায়ের করার জন্যে ব্লকের বিত্তবান তৃণমূল নেতাদের বদলার শিকার হতে হয়েছে তৃণমূলের বিবেকবান জনপ্রতিনিধিদেরকে।'

কী রকম বদলা? এই প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূলের প্রাক্তন জনপ্রতিনিধিরা যা জানান সেটা যথেষ্টই চমকে দেওয়ার মত। তাঁরা বলেন, 'ছাগল খামার নিয়ে হওয়া কেলেঙ্কারির অভিযোগপত্রে তদানীন্তন ১৯ জন জনপ্রতিনিধি স্বাক্ষর করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনকে আর ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হতে দেয়নি কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্লকের বিত্তবান তৃণমূল নেতারা। শুধুমাত্র শ্রীমন্ত রায় ২০২৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুনরায় জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ে জনপ্রতিনিধি হতে পেরেছেন। সেটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র তৃণমূলেরই সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে শ্রীমন্ত রায়ের পরিচিতি থাকার সুবাদে।'

Scam, Farm, দুর্নীতি, খামার,
Scam-Farm: বিরোধীরা বিষয়টিকে সহজে ছাড়তে নারাজ। (ছবি- নিজস্ব চিত্র)

এত কিছুর পরেও কেন তাহলে এতদিন ছাগল খামার দুর্নীতির ইস্যুকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল? এখন কেনই বা তা প্রকাশ্যে এনে তোলপাড় করার চেষ্টা হচ্ছে? এর উত্তরে ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন জনপ্রতিনিধি প্রদীপ পাল, গৌরসুন্দর মণ্ডল, অমল দলুই, চৈতালী হাত-রা বলেন, 'তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বিত্তবান তৃণমূল নেতাদের পরিবর্তে বিবেকবান তৃণমূল নেতাদের খুঁজছেন। এছাড়াও তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমাণ্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্নীতির ব্যাপারে দলের নো-টলারেন্স নীতির কথা সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দুর্নীতি করলে, দল কাউকে রেয়াত করবে না। এসবের প্রেক্ষিতেই দলের উচ্চ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ছাগল খামার দূর্নীতির বিষয়টি এখন আমরা প্রকাশ্যে আনছি। কারণ, দুর্নীতি-কাণ্ডে জড়িত মেহমুদ খান, ভূতনাথ মালিক ও তাঁদের সাগরেদরা তখনও ব্লক তৃণমূলের এবং পঞ্চায়েত সমিতির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন, এখনও রয়েছেন।'

আরও পড়ুন- আরজি কর-এ চিকিৎসক হত্যাকাণ্ডে বিরাট অস্ত্র সিবিআইয়ের হাতে, পলিগ্রাফ টেস্টেই বাজিমাত?

জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি বোর্ডের বর্তমান সহ-সভাপতি ভূতনাথ মালিক গত বোর্ডে ছিলেন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ। ছাগল খামার নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ার কথা তিনি স্বীকার করে নিলেও এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু তিনি বলতে চাননি। এমনকী, নীল-সাদা রং হলেও ছাগল খামারের পরিচিতি আজ্ঞাত রাখার কারণ নিয়েও তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে অভিযোগ দায়ের হওয়ার কারণে যে ছাগল খামারের উন্নয়নের গোটা প্রক্রিয়াটা এখনও জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে, তা ভূতনাথ মালিক কবুল করে নিয়েছেন। আর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্বতন সভাপতি মেহেমুদ খান বর্তমানে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ। ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্বেও তিনিই রয়েছেন। ছাগল খামার নিয়ে মেহেমুদ খান আবার সম্পূর্ণ ভিন্নকথা বলেছেন। তিনি বলেন, 'বাম আমলে তৈরি ছাগল খামারটিকে আমরা গেস্ট হাউস বানাতে চেয়েছিলাম। সেই কাজটা এখন বন্ধ হয়ে আছে।' কেন বন্ধ আছে? কী কারণে বন্ধ আছে? এই বিষয়টা তিনি খোলসা করেননি।

এনিয়ে কটাক্ষ করে জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, 'পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে চরম ফাঁসা ফেঁসেছিলেন বিহারের আরজেডি পার্টির সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব। আর এখন জামালপুরের তৃণমূল নেতারা ফেঁসেছেন পশুখামার কেলেঙ্কারিতে। দুই দলের নেতাদেরই কীর্তি অনেকটা একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠের মত। টাকা কামাতে তৃণমূলের নেতারা এখন ছাখল খামারকেও ছাড় দিচ্ছে না। এটাই সবথেকে বড় লজ্জার।' বিজেপির মতো সিপিএমের নেতারাও ছাগল খামার দুর্নীতি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।

CPIM Corruption bjp tmc
Advertisment