পরম্পরাকে সঙ্গী করে শান্তিনিকেতনে তাঁর বেড়ে ওঠা। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে সেই চেনা শান্তিনিকেতন যেন তাঁর কাছে অনেকটাই অচেনা। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের খেদোক্তি, 'সত্যজিৎ রায়, নন্দলাল বসুর যে শান্তিনিকেতনকে আমি চিনতাম, সেই শান্তিনিকেতন আর নেই।' তাঁর শান্তিনিকেতন, বলা ভালো আপামর বাঙালির শান্তিনিকেতন মানেই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক। বিশ্বকবির তৈরি অন্যধারার সেই শিক্ষালয়ে একদিন নিজেও পড়তেন অমর্ত্য সেন। সেই বিশ্বভারতীর সঙ্গে এখন তাঁর মাত্র কয়েক ডেসিমেলের জমি নিয়ে যত বিবাদ। বলা ভালো, তাঁর মত বিশ্ববরেণ্য অধ্যাপকের কাছে যেটা চূড়ান্ত অপমানজনক ব্যাপার। তবে, এতে অবাক নন অধ্যাপক সেন। এর পিছনে কেন্দ্রের মোদী সরকারকে একহাত নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, 'আজ যদি আমি বিশ্বভারতীর কোনও ত্রুটিও খুঁজে পাই, সেটা যে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে কিছুটা আলাদা, তা কিন্তু নয়।'
কেন্দ্রের আর বিশ্বভারতীর সঙ্গে তাঁর চূড়ান্ত টানাপোড়েন। আর, তারই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে পেয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। এই পরিস্থিতিতে শান্তিনিকেতনের বাড়ি 'প্রতীচী'তে বসে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে অমর্ত্য সেন ফিরে গেলেন ছেলেবেলায়। তাঁর ছোটবেলার শান্তিনিকেতনে।
এই বাড়ি আর জমি আপনার কাছে ঠিক কতটা?
আমার জন্ম শান্তিনিকেতনে। জন্মের কথা মনে নেই। তবে ছোটবেলায় এখানে থাকার কথা মনে আছে। আমি এখানে টানা থাকিনি। বেশ কিছুদিন ঢাকায় থেকেছি। এখানে আমার দাদু ক্ষিতিমোহন সেন (বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য) এবং দিদা কিরণবালা সেনের সঙ্গে থাকতাম। সেই সময়গুলো ছিল চমৎকার। আমার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। মান্দালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর নিযুক্ত হয়েছিলেন। আমি সেখানে তিন বছর ছিলাম, তিন থেকে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত।
ছেলেবেলার কথা
আমার বার্মার (মায়ানমার) কথা মনে আছে। তারপর ঢাকায় ফিরে এলাম। সেটাও ভালো লেগেছিল। আমি যে কারণে এখানে চলে এসেছি, তা হল যুদ্ধ (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ)। আমার বাবা নিশ্চিত ছিলেন যে মহানগরী হওয়ায় ঢাকা এবং কলকাতা উভয় জায়গাতেই জাপানিরা বোমাবর্ষণ করবে। কিন্তু, কোনও বিবেকবান জাপানি শান্তিনিকেতনে বোমা ফেলার চেষ্টা করেনি। যখন জাপানিরা বাড়ি ফিরে গেল, আমি আর ফিরে যেতে চাইলাম না। আমি এখানে থাকতে চেয়েছিলাম, কারণ
আরও পড়ুন- ভয়াবহ ভূমিকম্প! ঘুমচোখেই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত্যুমিছিলে ১,৩০০, মাত্রা কত কম্পনের?
দাদুর কথা
আমার দাদু একজন বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ছিলেন। আর, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল। সেই জীবনটাকে আমার খুব ভালোলাগত। আমরা ভোর ৪টায় উঠে হাঁটতাম। সেই সময় আকাশ অন্ধকার থাকত। দাদু সংস্কৃতে সমস্ত নক্ষত্রের নাম বলতেন। আমরা জ্যোতির্বিজ্ঞান-সহ নানা ব্যাপারে কথা বলতাম। আমার সংস্কৃতের ইতিহাস এবং পালি ভাষার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। তাই আমি সাহিত্য, ভাষা এবং ভাষাবিজ্ঞানের জন্য অনেক সময় ব্যয় করেছি। ওই সময়টা খুব ভালো ছিল।