করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে এলাকার মানুষের বাধায় বাড়ি ছেড়ে থাকতে হয়েছিল। তখন হাসপাতালই ছিল তাঁর ঘর-বাড়ি। এখনও তাঁকে দেখলে বা তাঁর অ্যাম্বুলেন্স দেখলেই চেনা-জানা অনেকেই দৌড়ে পালিয়ে যায়। এসব বাধাকে পাত্তা না দিয়ে অনড় সেলিনা এখনও কোভিড রোগীদের বাড়ি থেকে হাসপাতাল, হাসপাতাল থেকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন।
উত্তর দিনাজপুরের দক্ষিণ হেমতাবাদের সেলিনা বেগম বাংলায় স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোনও কাজ না পেয়ে শেষমেশ অ্যাম্বুলেন্সে চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। সরকারিভাবে চালকের প্রশিক্ষণ শেষ করে দেরি করেননি সেলিনা। ২০১৮-য়ের ২৭ জুলাই থেকে তিনি অ্য়াম্বুলেন্স চালাতে শুরু করেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সেলিনা বলেন, "আগে টেলিরিং ও বিউটশিয়ানের কাজ করতাম। সরকারি ট্রেনিংয়ের সুযোগ পেতেই আর দেরি করিনি। অতিমারী পরিস্থিতিতে প্রথম থেকে করোনা আক্রান্তদের পরিষেবা বজায় রেখেছি। এতে বহু বাধাও পেয়েছি। তবে হাল ছাড়িনি।" বাংলায় প্রথম মহিলা অ্য়াম্বুলেন্স চালক হিসাবে অনেকেই তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছে, জানায় সেলিনা।
অ্যাম্বুলেন্সে করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে কখনও দ্বিধা হয়নি? "সেলিনার জবাব, না তা কখনও হয়নি। বরং বিবেকের টানে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর কথাই ভেবেছি। তখন তো অনেক অ্যাম্বুলেন্সই কোভিড আক্রান্তদের পরিষেবা দিত না।"
আরও পড়ুন- DRDO-র করোনা ওষুধ ২-ডিজি ব্যবহারে গাইডলাইন, রোগীদের জন্য কী করণীয়?
এলাকার মানুষের বাধাকে উপেক্ষা করেছেন সেলিনা। বছর তিরিশের সেলিনা বলেন, "অ্য়াম্বুলেন্সে কোভিড রোগী নিয়ে যেতাম বলে ২০২০-তে স্থানীয়রা প্রথম দিকে আমাকে গ্রামেই ঢুকতে দিত না। বাবা মসজিদে গেলে নামাজ পড়তে দিত না। বাজার করতে গেলে জিনিস দিত না। আমাকে দেখলেই গ্রামের মানুষজন ভয় পেত। ৬ মাস এভাবেই কেটে যায়। হেমতাবাদ ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আমাকে থাকার জন্য় একটা ঘর দিয়েছিল। আমি সেখানে ওই ৬ মাস ছিলাম। বাড়ি যেতাম না। পুরো বিষয়টা প্রাশসনকে জানিয়েছিলাম। তাঁরা উদ্য়োগী হয়ে বুঝিয়েছিল গ্রামের মানুষকে। তবে এখনও আমাকে বা আমার অ্য়াম্বুলেন্স দেখলে গ্রামের লোকজন পালিয়ে যায়।"
উত্তর দিনাজপুরের দক্ষিণ হেমতাবাদের ঠকঠকি মোড়ে বাড়ি সেলিনা বেগমদের। বাবা নাজিরুদ্দিন আহমেদ বয়সের ভারে কোনও কাজ করতে পারেন না। দিদি কোহিনূর বেগমের গ্রামেই ছোট্ট একটা টেলারিংয়ের দোকান। বাড়িতে থাকেন মা ও এক ভাইপো। সংসারের বেশিরভাগ ভারটাই সেলিনার কাঁধে। এখনও পর্যন্ত ২০০-র ওপর কোভিড আক্রান্তকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন সেলিনা। রোগী নিয়ে সে ১০০-১৫০ কিলোমিটার পথ সে হামেসাই পাড়ি দেয়। সেলিনা জানায়, শুধু কালিয়াগঞ্জ বা রায়গঞ্জ হাসপাতাল নয়, শিলিগুড়ি, মালদাও রোগী নিয়ে যান রাত-বিরেতে। তখন তাঁর সঙ্গী দিদি কোহিনূর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন