বিধানসভায় নাকি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে একান্ত বৈঠকে ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দুর দাবি অনুযায়ী একা ডাকলেও তিনি আরও তিন বিজেপি বিধায়ককে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে হাজির হয়েছিলেন। এবার কিন্তু নবান্নের ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে মুখোমুখি বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আদৌ কি আলোচনা হয়েছে তা কিন্তু দুই শীর্ষ নেতৃত্ব প্রকাশ্যে কিছু খোলসা করেননি। যথারীতি ফের সেটিং তত্ব নিয়ে বিরোধীরা হইচই শুরু করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করতে কসুর করলেন না শুভেন্দু অধিকারী। তাতে কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে সন্দিহান গেরুয়া শিবিরের একাংশ।
সারদাকাণ্ডের তদন্তে তৎকালীন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই কর্তারা। কলকাতা পুলিশ বাধা দিয়েছিল তদন্তকারীদের। ঘটনার প্রতিবাদ করতে ওই দিনই ধর্মতলায় ধরনা শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীতে দিল্লিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে। শিলংয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজীব কুমারকে ডাকা হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। সেটিং সেটিং বলে চিৎকার জুড়েছিল বিরোধী দলগুলি। তাছাড়া দিল্লিতে গিয়ে পৃথক ভাবে একান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেই একই অভিযোগের সামনে দাঁড় করায় কংগ্রেস-সিপিএম। নবান্নে অমিত শাহর সঙ্গে একান্তে ২০ মিনিট কথা বলার পর ফের সেই অভিযোগ সামনে এসেছে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, এই শীর্ষ নেতৃত্বের সাক্ষাতে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব প্রমাদ গুনছেন। সেক্ষেত্রে জল অন্যদিকে গড়ানোর আগেই চটজলদি শাহকে সিঅফ করেই বিমানবন্দরে শুভেন্দু অধিকারী সাফাইয়ের পথে হেঁটেছেন।
আরও পড়ুন- শাহ-মমতা বৈঠক, বেজায় অস্বস্তি বঙ্গ বিজেপির, ড্যামেজ কন্ট্রোলে শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি ‘টাইম হো গয়া’
শুভেন্দুর ডিসেম্বর হুংকারের মাঝেই অমিত শাহ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ইতিমধ্যে ১২ ও ১৪ ডিসেম্বর দুটি তারিখ চলে গিয়েছে। সামনে রয়েছে ২১ ডিসেম্বর। উল্লেখ্য ১২ ডিসেম্বর বগটুই কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের সিবিআই হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে, ১৪ ডিসেম্বর আসানসোলে এক অনুষ্ঠানে শুভেন্দু চলে যাওয়ার পর কম্বল বিতরণ চলাকালীন ৩ জন পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন। এই দুই ঘটনাকে হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। এই বাতাবরণের মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বৈঠক নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, বিজেপি ও তৃণমূলের দুই সর্বভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্ব একান্তে বৈঠক করলে নানা সম্ভাবনা তৈরি হওয়া খুব স্বাভাবিক। সৌজন্যের কথা বললেও বা শুভেন্দু আলোচনার প্রসঙ্গ বলার চেষ্টা করলেও প্রচলিত কথা রয়েছে দুই রাজনৈতিক শীর্ষ নেতৃত্ব যখন বৈঠক করেন তখন রাজনীতির কথা হবে না তা কখনও হয় না। তাছাড়া তাঁরা দুজনই কি কথা হয়েছে বলেননি। শুধু তাই নয়, দুই গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ নেতৃত্ব একান্ত বৈঠক তাঁরা প্রকাশ্যে বলবেন সেটাও ভাবাই ঠিক নয়।
আরও পড়ুন- ঘরে ডেকে কী বলেছেন মমতা? শাহের কথা শুনেই সব ‘ফাঁস’ করলেন শুভেন্দু
দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে হত বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে। আর তা নিয়েই কটাক্ষ করতেন বিরোধীরা। এবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে গিয়ে কথা বললেন অমিত শাহ। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, বিরোধীদের দাবি করা সেটিং তত্ব নিয়ে অস্বস্তি বাড়ল বঙ্গ বিজেপির। সহজে যে ড্যামেজ কন্ট্রোল হবে না তা টের পাচ্ছে গেরুয়া শিবির। সেটিং তত্বে তৃণমূলের থেকে বঙ্গ বিজেপির চাপ যে বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ডিসেম্বর ডেডলাইনে শাহ-মমতা বৈঠক নতুন ভাবে গুঞ্জন ছড়িয়ে দিল বঙ্গ রাজনীতিতে।