শেষমেশ আদালতের নির্দেশে ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভা করল বঙ্গ বিজেপি। বুধবারের সমাবেশের প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বক্তব্যে সেই হুঙ্কার, সেই ঝাঁঝ উধাও। দুর্নীতির কথা মুখে আনলেও সিবিআই বা ইডির তদন্ত নিয়ে কোনও কথা বলেননি বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি। একদিকে ২৪-এ মোদীকে জয়ের ডাক, পাশাপাশি ফের সিএএ লাগু করা হবে বলে জানিয়ে দিলেন অমিত শাহ।
দলকে বঙ্গে চাঙ্গা করার সভায় অমিত শাহর দুদিকে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দিলীপ ঘোষসহ আদি বিজেপি নেতৃত্ব ছিলেন পিছনের সারিতে। এদিনের সভায় আদি বিজেপি নেতৃত্বের অনেকেই আবার হাজির ছিলেন না। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বঙ্গ বিজেপির আদি নেতার বক্তব্য, 'বাড়তি ট্রেন বা বাস দিলেও সভায় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কোনও জোশ ছিল না। এমনকী ২০১৪ সালে রাহুল সিনহা সভাপতি থাকার সময় ধর্মতলার সভায় যে ভিড় বা মানুষের উৎসাহ ছিল তার ছিটেফোঁটাও এদিন দেখা যায়নি।' এই সভাকে কেন্দ্র করে কলকাতা স্তব্ধ করে দেওয়ার হুঙ্কার দিয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদার। কতক্ষণ সেই স্তব্ধতা ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দলের অন্দরমহলে। এখন রাজ্যে বিজেপির যে বিস্তার রয়েছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই সভার ভিড় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলেও।
আরও পড়ুন- ২৪-শে দিল্লিতে মোদীকে আনুন, ২৬-শে বাংলায় আসবে বিজেপি: অমিত শাহ
আরও পড়ুন- বাংলায় কবে CAA চালু হবে, ধর্মতলার সভা থেকে দিনক্ষণ জানিয়ে দিলেন অমিত শাহ
আরও পড়ুন- বাংলায় DA-র ভবিষ্যৎ কী? বিধানসভায় জানিয়ে দিলেন মমতা
লোকসভা নির্বাচনের আগে চাঙ্গা করতেই এই সভার উদ্যোগ নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। রাজনৈতিক মহলও এদিন অমিত শাহর গলায় সেই ঝাঁঝ শুনতে পায়নি। প্রায় ২৫ মিনিটের বক্তব্যে পুরনো সুর শোনা গিয়েছে অমিত শাহর গলায়। নাম না নিয়ে দুর্নীতি ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন অমিত শাহ। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মন্ডলরা চুরির অভিযোগে গ্রেফতার সত্বেও কেন তাঁদের তৃণমূল সাসপেন্ড করছে না? সেই প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বাকি দুজনের বিরুদ্ধে তৃণমূল ব্যবস্থা না নিলেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের কয়েক দিনের মধ্যেই দল সাসপেন্ড করার পাশাপাশি মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, অমিত শাহর কাছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিয়ে বঙ্গ বিজেপি কি কোনও রিপোর্ট দেয়নি? যদিও সম্প্রতি অন্যদের গ্রেফতার নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণের সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম নিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সিএএ থেকে সুরবার্দীর ডাইরেক্ট অ্যাকশনের কথা বলেছেন অমিত শাহ। মুখে এনেছেন রামমন্দিরের প্রসঙ্গও। দুর্নীতির কথাও বলেছেন। কিন্তু ধর্মতলায় এদিনের সভায় অমিত শাহের বক্তব্যে হুঙ্কার বা ঝাঁঝ ছিল না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূলের বিরুদ্ধে শুধু দুর্নীতির অভিযোগ নয়, পাশাপাশি ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যমে এরাজ্যে বাইনারি পলিটিক্সেই ভরসা রাখতে চাইছে বিজেপি, এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।