অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারিতে এবার সুর আরও চড়ালেন একদা তাঁরই ঘনিষ্ঠ তথা বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ বর্তমানে বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা। পাহাড়-প্রমাণ এই দুর্নীতিতে আষ্ঠেপৃষ্টে জড়িত তৃণমূলের একগুচ্ছ নেতা, এমনই অভিযোগ অনুপমের। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি একাধিক আইএএস, আইপিএস ও ব্যবসায়ী দুর্নীতিতে জড়িত বলে দাবি বিজেপি নেতার। এমনই ৭২ জনের নামের একটি তালিকা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন অনুপম হাজরা।
বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা তৃণমূলে থাকাকালীন অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বোলপুর থেকে তৃণমূলের টিকিটেই প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন অনুপম। সেই অনুপমই এবার একদা তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুব্রতর বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছেন। শাসকদলের একাধিক নেতা, আইএএস, আইপিএস অফিসাররা অনুব্রতর সঙ্গেই দুর্নীতিতে সমানভাবে দায়ী বলে অভিযোগ তাঁর। অনুব্রত ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকেও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বলে মনে করেন বিজেপি নেতা। এমনই মোট ৭২ জনের নামের একটি তালিকা তৈরি করেছেন অনুপম হাজরা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তিনি বলেন, ''অনুব্রত মণ্ডলের বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সদস্য, কয়েকজন ব্লক সভাপতি, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ীর কাছে ওঁর টাকা ঘোরে। আগামী সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হাতে মোট ৭২ জনের নামের তালিকা তুলে দেব।''
উল্লেখ্য, পরপর ৯ বার ডাকা হলেও গরু পাচার মামলায় সিবিআই হাজিরা এড়িয়েছেন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বারবার শারীরিক 'অসুস্থতা'কে ঢাল করেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের সামনে হাজিরা এড়িয়েছেন তৃণমূলের এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। তবে শেষরক্ষা হয়নি।
বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি বয়ে গিয়ে কার্যত অনুব্রত মণ্ডলকে তুলে নিয়ে যায় সিবিআই। গরু পাচার মামলায় তদন্তে নেমে এর আগেই অনুব্রতর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী সায়গলকে জালে পুরেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাঁকে জেরা করেও গুরুত্বপূর্ণ একাধিক তথ্য তদন্তকারীদের হাতে এসেছে বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন- ‘বাকি জীবনটা যেন জেলেই থাকে’, অনুব্রতর গ্রেফতারিতে সোচ্চার দিলীপ
সপ্তাহখানেক বীরভূম ও কলকাতার মোট ১৩টি জায়গায় সিবিআই তল্লাশি চালায়। বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা, ব্যবসায়ীর বাড়িতেও চলে তল্লাশি অভিযান। সেই তল্লাশিতে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা, বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন, গুরুত্বপূর্ণ নথি ও হার্ডডিস্ক উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সেই তল্লাশিতে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার বেশ কিছু 'প্রমাণ'ও হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তার পরেই গরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে ফের ডেকে পাঠায় সিবিআই। এবারও তিনি হাজিরা এড়িয়েছেন। শেষমেশ বৃহস্পতিবার সকালে বোলপুরের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই।