স্বপ্ন ছিল ভারতীয় দলের হয়ে ফুটবল খেলার। সেই স্বপ্নই বাস্তবের রং পেল আসানসোলের রূপনারায়ণপুরের অদ্রিজা সরখেলের জীবনে। ছোটবেলার সেই ইচ্ছেপূরণের গল্পকে এবার বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে দিতে চলেছে রূপনারায়ণপুরের মহাবীর কলোনির নবম শ্রেণীর ছাত্রী অদ্রিজা। সম্প্রতি অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য ইন্ডিয়া ক্যাম্পে সুযোগ পেয়েছে রূপনারায়ণপুরের এই কন্যা।
আরও পড়ুন, আজব কাণ্ড! রাতের আঁধারে পুড়ছে বাইক-গাড়ি, আতঙ্কে প্রহর গুনছে দুর্গাপুর
আসানসোলের ছোট্ট গ্রাম রূপনারায়ণপুরের মহাবীর কলোনি। শহুরে ছোঁয়া লাগলেও এলাকাটি এখনও গ্রাম পঞ্চায়েতেরই অন্তর্গত। জন্মসূত্রেই বিস্ময়! আরও দুই ভাইবোনের সঙ্গে একযোগে জন্ম হয় অদ্রিজার। পরিভাষায় যাকে বলে ত্রিমজ বা ট্রিপলেট। বাড়িতে বাবা, দাদা, মামা, দাদু, সবাই ফুটবল অন্ত প্রাণ। ছোট থেকেই তাই ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নেই বিভোর থাকত অদ্রিজা। প্রসঙ্গত, নিজের বাড়ি বার্ণপুরে হলেও রূপনারায়ণপুরের মামাবাড়িতেই কেটেছে ছোটবেলা। মামাবাড়ির দাদু সমর ভট্টাচার্যের উৎসাহেই ফুটবল খেলা শুরু অদ্রিজার।
নাতনীর স্বপ্নকে পূরণ করতে দাদুর অবিরাম পরিশ্রমের গল্প বলে অদ্রিজার এই লড়াই। পেশায় রেলকর্মী সমরবাবু অবসর নেওয়ার পরে নাতনীর ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছেপূরণের লড়াইয়ে সামিল হয়ে সারা ভারত ছুটে বেড়িয়েছেন। তাঁর পেনশনের টাকা থেকেই অদ্রিজার প্রশিক্ষণের বেতন মেটাতেন সমরবাবু। শুধু তাই নয়, স্পনসর ছাড়াই শুধুমাত্র পেনশনের টাকাকে হাতিয়ার করে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় নাতনীকে নিয়ে ছুটেছেন সমরবাবু।
বর্তমানে আসানসলের চিত্তরঞ্জন মহিলা সমিতি হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অদ্রিজা। স্কুলের মেয়ের এহেন কীর্তিতে গর্বিত স্কুলের শিক্ষিকারাও। তাঁরাই জানান, পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকেই পুরোদমে ফুটবল ধ্যানজ্ঞান হয়ে ওঠে অদ্রিজার। এরপর স্বপ্ন ছোঁয়ার যাত্রা শুরু হয়। ২০১৪ সালে প্রথমে জাতীয় স্তরে খেলা। এরপরই মণিপুরে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৪ ন্যাশনাল মিটে অংশ নেয় অদ্রিজা। শুরুতেই নজর কাড়ে সে। গোলকিপিং করে তাক লাগিয়ে দেয় তাবড় তাবড় কোচদের।
তারপর থেকে গোলকিপার হিসেবেই খেলা শুরু, চলে পুরোদমে প্রশিক্ষণ। ২০১৮ সালে স্কুল ন্যাশনাল মিটে এবং চলতি বছরেই মহারাষ্ট্রে কোহলাপুরে ওপেন ন্যাশনাল মিটে অংশ নেয় অদ্রিজা। নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পর সেখান থেকেই আন্ডার সেভেনটিন ওয়ার্ল্ড কাপের জন্য ইন্ডিয়া ক্যাম্পে নির্বাচিত হয়ে যায় সে।
আরও পড়ুন- জল বাঁচাতে অভিনব প্রকল্প আসানসোলের গ্রামে
ইচ্ছেপূরণের এমন স্বপ্ন ছুঁয়ে আত্মবিশ্বাসী অদ্রিজা নিজেও। কারণ নিজের সেরাটুকু দিতে পারলে এই ক্যাম্প থেকেই সরাসরি ২০২০ সালের বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারবে অদ্রিজা। রাজ্য থেকে একমাত্র অদ্রিজাই ইন্ডিয়া ক্যাম্পে সুযোগ পেয়েছে বলে দাবি পরিবারের। ঘরের মেয়ের সাফল্য কামনা করে পরিবার থেকে শুরু করে ফুটবল কোচ এবং এলাকার সবার চাওয়া এখন একটাই, বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়ে বিশ্বজয় করুক আসানসোলের মেয়ে। মিরাকল যার জন্মলগ্নে, সেই শুভলগ্ন সঙ্গে নিয়েই বিশ্বজয় করতে মরিয়া অদ্রিজা নিজেও।