scorecardresearch

বাঙালির স্বাদ বদলের ইতিহাস; সংগ্রহে তিনহাজার মেনুকার্ড

“নোটবন্দির সময় পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল হল, তখন দেখলাম অনেকে ওই নোটের মডেলে মেনু কার্ড করছেন। আবার আধার কার্ড নিয়ে যখন হইচই চলছে তখন আধার কার্ডের আদলে মেনু কার্ড পেয়ে গেলাম”।

বাঙালির স্বাদ বদলের ইতিহাস; সংগ্রহে তিনহাজার মেনুকার্ড
ভাস্কর চক্রবর্তীর সংগ্রহের এক টুকরো। ছবি- ছোটন সেনগুপ্ত

বাঙালি মাত্রেই ভোজনরসিক। এ এমন এক জাতি, যাদের কাছে উদযাপনের প্রাথমিক শর্তই হল পেট পুজো। আর বিয়েবাড়ি হলে তো কথাই নেই। বাকি জাঁকজমক ছাপিয়ে যাবে মেনুতে থাকা দই ইলিশ কিমবা ভেটকির পাতুরির খরচা। বাঙালির আভিজাত্য প্রকাশ পাওয়া যায় অনুষ্ঠান বাড়ির মেনুতে। মেনুকে ছাপিয়েও বৈচিত্র এসেছে ভোজনের নানা অনুসষ্গে, যেমন   মেনু কার্ডে। রুচিশীল বাঙালির সাহিত্য, কবিতা, উপহার এমনকি সমসাময়িক বিষয়ও উঠে আসে মেনু কার্ডের ডিজাইনে। আধার কার্ড থেকে ফেসবুক পেজ, দু’হাজার টাকা মডেলের নোট থেকে সংবাদ পত্রের প্রথম পাতার আদলেই তৈরি হচ্ছে মেনু কার্ড। বাঙালির বিয়ে বাড়ির বিবর্তনের খাদ্য তালিকা ও পরিবর্তিত মেনু কার্ডের রকমারি সংগ্রহশালার খোঁজ মিলল আসানসোলে।

স্বঘোষিত গডম্যানের ‘মহাপ্রয়াণ’, আসানসোলে ভক্তদের ভিড়

বিয়েবাড়ি হোক, বা অন্নপ্রাশন, অনুষ্ঠান বাড়ি গিয়ে আমরা সবাই ক্যাটারারের দেওয়া মেনু কার্ডটায় প্রথমেই একবার চোখ বুলিয়ে নিই । খেতে বসে কিছু বাদ পড়ল না তো, মিলিয়ে দেখার জন্যেও হাতে রাখা থাকে মেনু কার্ডটি। তারপর তার আর কদর নেই। এখানেই আর পাঁচজনের চেয়ে আলাদা আসানসোলের কল্যাণপুরের বাসিন্দা ভাস্কর চক্রবর্তী। তিনি যত অনুষ্ঠানে যান, যাবতীয় মেনু কার্ড সংগ্রহ করে রাখেন। ভাস্করবাবু চাকরি করেন সালানপুরে মাইথন অ্যালয়েজের পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট দফতরে। অর্থাৎ পেশাগত জীবনের সঙ্গে এ সবের কোনও সম্পর্কই নেই।  মেনু কার্ড সংগ্রহ করে রাখা তাঁর অন্যতম শখ। এই মুহূর্তে সব মিলিয়ে তিনহাজার মেনু কার্ড রয়েছে ভাস্কর চক্রবর্তীর ঝুলিতে।

নানা রকমের মেনু কার্ড। ছবি- ছোটন সেনগুপ্ত

ভাস্করবাবু বলেন ম্যারাপ বেঁধে খাসির মাংস, লুচি, ছোলার ডাল রান্না বা কোমরে গামছা বেঁধে পরিবেশন আজ ইতিহাস। এমনকি বাঙালির অনুষ্ঠান বাড়িতে ক্যাটারারকেও ছাপিয়ে নামীদামি শেফদের তৈরি কন্টিনেন্টাল বা প্রাদেশিক খাবার এখন বিয়ের ভোজের নতুন মেনু। এই অভিনবত্বের ছোঁয়া লাগা মেনু কার্ডের সংগ্রহ রয়েছে তাঁর কাছে। মেনুকার্ডের ভাবনা জনপ্রিয় হয়েছে এই তিন থেকে চার দশক আগে। তবে তার আগেও অভিজাত বাঙালির ঘরে এর চল ছিল, তা অবশ্য হাতে গোনাই।  ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যখন উত্তাল বাংলা তখন শোভাবাজার রাজবাড়িতে মেনু কার্ড তৈরি হয়েছিল। ১১২ বছর আগের সেই মেনু কার্ডে ৩৬ রকম খাবারের তালিকা ছিল। সেই পরম্পরা আজও অব্যাহত।

দুর্গাপুরের কারখানা ঘিরে বিক্ষোভ, চাকরি না দেওয়ার অভিযোগে রাস্তা অবরোধ স্থানীয়দের

ভাস্কর বাবু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন, “বাবা সাইকেল ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। হঠাৎই কারখানা বন্ধ হলে বাবা কর্মহীন হয়ে পড়েন। ছোটবেলা থেকে স্বাচ্ছন্দ্য পাইনি। তারই মধ্যে বাবা আমাকে পড়াশোনা করিয়েছেন। একসময় ডাকটিকিট সংগ্রহ নেশা ছিল। এরপর বছর পাঁচেক হল এই মেনু কার্ড সংগ্রহ শুরু করি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি যাই বা না যাই, সেখানকার মেনু কার্ড জোগাড় করি। আমার স্ত্রী শ্বাশতী, ছেলে অভিনব ছাড়াও পরিচিত অনেকেই আমাকে কার্ড সংগ্রহ করে এনে দেন। এভাবেই সংগ্রহের সংখ্যা বাড়ছে দিনদিন। নোটবন্দির সময় পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল হল, তখন দেখলাম অনেকে ওই নোটের মডেলে মেনু কার্ড করছেন। আবার আধার কার্ড নিয়ে যখন হইচই চলছে তখন আধার কার্ডের আদলে মেনু কার্ড পেয়ে গেলাম। যখন সিডি ডিভিডির বাজার তখন গানের সিডির গায়ে মেনু তৈরি হয়েছে। যেন এক একটা সময় এই মেনু কার্ডে ধরা পড়েছে”।

ছবি- ছোটন সেনগুপ্ত

আরও একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, বছর পাঁচেক আগে অনুষ্ঠান বাড়ির মেনুতে যে সমস্ত পদ থাকত, তাতেও বদল এসেছে। মানুষের খাদ্যাভ্যাসও পাল্টাচ্ছে। এইসব মেনু কার্ডে আমি ওই পরিবর্তনটা দেখতে পাই। শ্রাদ্ধ, বাসীশ্রাদ্ধ এমনকি চড়ুইভাতির মেনু কার্ডও আমার সংগ্রহে রয়েছে”, বললেন ভাস্করবাবু।

অনেকেই ভাস্করের এই আজব নেশা বা শখে হাসাহাসি করেন। আবার অনেকে উৎসাহও দেন। ভাস্করের মতে তাঁর সংগ্রহে মূল্যবান অনেক কিছু রয়েছে যা আগামী প্রজন্ম বুঝতে পারবে। বাঙালির রসনার  আস্ত একটা ইতিহাস সে ধরে রাখতে পেরেছে বলেই বিশ্বাস করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে বললেন, “জানেন, নিলামে উঠেছিল টাইটানিকের শেষ মধ্যাহ্নভোজের মেনু কার্ড। ৮৮ হাজার ডলারে ওই মেনু কার্ডটি নিলাম হয়েছে বছর দুয়েক আগে। তাই কোনও সংগ্রহই ছোট নয়”।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Westbengal news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Asansol man has three thosands menu cards in his personal collection