করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে দেশজুড়ে। এরাজ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছেছে। হাসপাতালগুলিতেও একের পর এক চিকিৎসক, নার্স-সহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। উদ্বেগজনক পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। পরপর সংক্রমিত হচ্ছেন কলেজের চিকিৎসক পড়ুয়ারা। আক্রান্ত মেডিক্যাল কলেজের বহু স্বাস্থ্যকর্মীও। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পরিকাঠামো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের। যদিও যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও চিকিৎসা পরিষেবায় কোনও ঘাটতি না হওয়ার আশ্বাস কর্তৃপক্ষের।
মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন চিকিৎসক পড়ুয়া, নার্স-সহ মোট ২৫ জন। বুধবার নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন চারজন অধ্যাপক এবং ২৮ জন পড়ুয়া। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে মোট ৫৭ জন। করোনার উপসর্গ থাকায় মঙ্গলবার রাতে ৪০ জনের লালারসের নমুনা পাঠানো হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ভাইরাল রিসার্চ অ্যান্ড ডায়গনস্টিক ল্যাবরেটরিতে(ভি আর ডি এলে)।
সেই পরীক্ষায় ২৮ জন এমবিবিএস পড়ুয়া ও চার অধ্যাপকের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সব মিলিয়ে বর্তমানে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত ৪৪ জন পড়ুয়া, ১৩ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মী। আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ইতিমধ্যে ১২ জন পড়ুয়াকে মেডিক্যাল কলেজের কোভিড ব্লকে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও যাঁদের মৃদু উপসর্গ আছে তাঁদের হস্টেলের একটি ব্লককে সেফ হাউজ বানিয়ে আলাদা করে রাখা হয়েছে। তবে যেসব পড়ুয়া এখনও করোনায় আক্রান্ত হননি তাঁদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর তরফে। অন্যদিকে, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একটা বড় অংশ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় অন্যান্য বিভাগের থেকে চিকিৎসক ও পোস্ট গ্রাজুয়েট ছাত্রদের চিকিৎসা পরিষেবার কাজে লাগানো হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অন্দরে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে পড়ুয়াদের অবিভাবকরা। আলিপুরদুয়ারের এক ছাত্রের বাবা দেবব্রত মজুমদার বলেন, "১ জানুয়ারি ছেলে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল। আমরা খবর পাওয়া মাত্রই আজ ছেলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। সে আলাদা রয়েছে হোস্টেলে।"
আরও পড়ুন- কাল থেকেই বাড়বে রাতের তাপমাত্রা, শীতের আমেজ ফিকে হওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট
আক্রান্ত পড়ুয়ার মা কৃষ্ণা মজুমদার বলেন, "আমরা খুবই চিন্তিত। দূর থেকে কথা বলতে হলো। প্রথমে শরীরে ব্যথা ছিল। এখন একটু কমেছে।" উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, "পরিষেবা যাতে বজায় থাকে সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। সংক্রমিত পড়ুয়াদের হোস্টেলের একটি ব্লকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। তাঁদের ওষুধ ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা তাঁদের দেখভাল করছেন। তবে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত আমরা।''
এদিকে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালেও। এই হাসপাতালে করোনায় সংক্রামিত হয়েছেন ৫ জন নার্সিং স্টাফ। পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের ডেপুটি সুপারও। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সুপার ডাঃ গয়ারাম নস্কর বলেন, সদর হাসপাতালের ৫ জন নার্স করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। একজন ডেপুটি সুপারের দেহেও করোনার সংক্রমণ মিলেছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় জলপাইগুড়ি বিশ্ববাংলা কোভিড হাসপাতালে অস্থায়ীভাবে ৩২ জন নার্স নতুন করে নিয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া যাঁরা সাফাইকর্মীর কাজ করতেন তাঁদেরও পুনরায় নিয়োগ করা হচ্ছে। করোনার বাড়বাড়ন্তের দিকে নিজর রেখে কোভিড হাসপাতালে নার্সিং স্টাফ থেকে শুরু করে অন্যান্য অস্থায়ী সাফাই কর্মীদের আগামিকাল থেকে নতুন করে নিয়োগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সুপার।