ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের শংসাপত্র হাতে ছোট্ট আত্মজা। ছবি: মধুমিতা দে।
দেশের সবচেয়ে ছোট কাগজের ব্যাগ তৈরি করে মাত্র ৭ বছর বয়সেই ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছে আত্মজা কর। একরত্তি মেয়ের হাতে তৈরি কাগজের ব্যাগ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল। অবাক-কন্যের দারুণ এই কীর্তির ভূয়সী প্রশংসা নেটপাড়ায়। নজরকাড়া কাগজের ব্যাগ তৈরি করে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের স্বীকৃতি ঝুলিতে পড়েছে আত্মজা। ই-মেলে সংস্থার তরফে শংসাপত্রও পাঠানো হয়েছে আত্মজাকে। ছোট্ট আত্মজার এই কৃতিত্বে তাঁর পরিবারে সদস্যদের পাশাপাশি গর্বিত তার প্রতিবেশীরাও।
Advertisment
আত্মজা কর, মাত্র সাত বছর বয়সী এই মেয়েটির বাবা বাবুসোনা কর একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। মালদহের রতুয়ার বাহারাল এলাকার একটি স্কুলে কর্মরত তিনি। চাকরি সূত্রে মাত্র ছ’মাস আগে রানাঘাট থেকে পরিবার নিয়ে মালদহে এসেছে কর পরিবার। বর্তমানে তাঁদের ঠিকানা রতুয়ার নাপিতপাড়া। মা মৌসুমী কর হস্তশিল্পী। সরকারি মান্যতাও পেয়েছেন তিনি। সংসার সামলে এখনও নিত্য-নতুন জিনিস বানান মৌসুমীদেবী। তাঁর কাছেই হাতের কাজের তালিম পেয়েছে ছোট্ট আত্মজা।
বাড়িতে মায়ের সঙ্গে আত্মজা।
Advertisment
করোনার জেরে চলা লকডাউনে শিশুদের মানসিক বিকাশ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তা একবাক্যে স্বীকার করে নেন মনোবিদরা। তবে এই লকডাউনই আত্মজার কাছে নতুন একটা দরজা খুলে দিয়েছিল। আত্মজার মা মৌসুমী কর বলেন, ''ও আমার পাশে বসে রং-তুলি নিয়ে খেলত। ওর সেই খেলা দেখে আমি ওকে ছবি আঁকতে শেখাই। কীভাবে ছবিতে রং করতে হয় দেখিয়ে দিই। ছবি আঁকার পাশাপাশি আমার মতো অন্যান্য জিনিস তৈরির চেষ্টা শুরু করে দেয় মেয়ে। এভাবেই ওকে বিভিন্ন জিনিস বানাতে শেখাই।''
আদরের মেয়ের নাম উঠেছে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে, এখবরে স্বভাবতই বেশ খুশি মৌসুমীদেবী। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, ''মেয়ের এই কীর্তির পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে ওর বাবার। মেয়ের এই সাফল্যে মা হিসেবে আমার গর্ব তো হবেই। ওকে কোনও কিছুতেই চাপ দেব না। শুধু চাই, ও আনন্দে থাকুক।''
অন্যদিকে, আত্মজার বাবা বাবুসোনা কর বলেন, ''ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে মেয়ের জায়গা পাওয়া অনেক চেষ্টার একটা ফসল। গোটা বিশ্বেই প্লাস্টিকের ব্যবহার আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর বিকল্প কাগজের ব্যবহার। আমার চোখে পড়েছিল, মেয়ে তার পুতুলের জন্য অনেক জিনিস তৈরি করছে। আমিই তাকে বলি, পুতুলের জন্য ছোট কাগজের ব্যাগ করা যায় কিনা। ও চেষ্টা করতে শুরু করে। এভাবেই দেশের সবচেয়ে ছোট কাগজের ব্যাগ বানিয়ে ফেলে। যেটা তাকে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে জায়গা করে দিয়েছে।''
উল্লেখ্য, গত ৬ সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের তরফে আত্মজাকে ই-মেইল করে জানানো হয়, তার তৈরি কাগজের ব্যাগ দেশের সবচেয়ে ছোট ব্যাগ হিসেবে মান্যতা পেয়েছে। তার জন্য আত্মজাকে একটি শংসাপত্রও পাঠানো হয়েছে। ২০২৪ সালের রেকর্ড বুকে তার নাম উঠবে।
সাত বছরের আত্মজা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। নতুন জায়গায় এসে নতুন বন্ধুও হয়েছে অনেক। ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসটা ঠিক কী এখনও পুরোপুরি বুঝে ওঠার বয়সই হয়নি ওর। তবে বন্ধুদের মধ্যে কেউ যদি তার কাছে জিনিস বানানো শিখতে চায় তবে তা সেখাতে সে একবাক্যে রাজি।