রোগীর মৃত্যু করোনায় হচ্ছে কিনা, তা নির্ণয় করতে বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে মমতা সরকার। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিস (নাইসেড) কলকাতার অধিকর্তা ডাঃ শান্তা দত্ত। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডঃ দত্ত বলেছেন, রোগীর কী কারণে মৃত্যু হল তা সঠিক নির্ণয়ের দায়িত্ব চিকিৎসকদের উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত। এর আগে তিনি বলেছিলেন, করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত কিট নাইসেডের কাছে থাকলেও তুলনায় নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে রাজ্যে। এই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
করোনা মৃত্যু কিনা তা নির্ণয়ের জন্য রাজ্য সরকার নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রসঙ্গে ডাঃ শান্তা দত্ত বলছেন, 'বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যদের- চিকিৎসকরাই রোগী সম্পর্কে সব তথ্য দিচ্ছেন। তাই চিকিৎসকরাই মৃত্যুর কারণ নিয়ে সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন। যাইহোক, সংক্রমণ, ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যা যাই থাক না কেন- কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু শ্বাস-প্রশ্বাস সমস্যা জনিত কারণেই হবে। তাই, রোগীর মৃত্যুর কারণ কমিটি সদস্যরা নয়, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরাই সবচেয়ে ভাল বিবেচনা করে বলতে পারবেন।' এই ধরনের কমিটি গঠন নিয়ে কেন্দ্রীয় কোনও নির্দেশিকা নেই বলেও জানিয়েছেন নাইসেড-কলকাতার অধিকর্তা।
এদিকে, বাংলার পথ অনুসরণ করে বৃহন্মুম্বই পুরনিগমও রোগীর মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই পরিকল্পনা গ্রহণ করছে উত্তরপ্রদেশ যোগী সরকারও।
আরও পড়ুন- “বুঝতে পারছি না যথেষ্ট কিট থাকা সত্ত্বেও বাংলায় কেন বেশি করে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না”
প্রসঙ্গত, কোনও রোগীর মৃত্যু করোনাভাইরাসে হয়েছে কিনা তা নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কোনও হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হলে সেই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর সরকার গঠিত কমিটি খতিয়ে দেখে জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট-মৃত ব্যক্তির করোনা সংক্রমণের ফলেই মৃত্যু হয়েছে কিনা।
অন্যদিকে আবার,বাংলায় করোনায় মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ বিজেপির। রাজ্য সরকার প্রকাশিত করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্যের পার্থক্য সামনে এসেছে। শুক্রবারই, নবান্ন জানিয়েছে, তখনও পর্যন্ত রাজ্যে করোনা আক্রান্ত ১৬১। তবে, কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, বাংলায় ভাইরাস সংক্রমিত ২৫৫। করোনা রুখতে দেশজুড়ে লকডাউন জারি রয়েছে। তবু, বাংলার বহু জায়গায় লকডাউন ঠিকমত মানা হচ্ছে না, এই মর্মে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছে মোদী সরকার।
এ প্রসঙ্গে বাংলার মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'স্বাস্থ্য বিষয়টি রাজ্য়ের আওতাধীন। এটা জাতীয় মহামারী বলে বিবেচিত। তাই কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেই কাজ এগোচ্ছে।' রাজ্য নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির কাজে সরকার হস্তক্ষেপ করছে না বলেই মত মুখ্যসচিবের।
আরও পড়ুন- Live: ভারতে করোনা আক্রান্ত বেড়ে ১৪৩৭৮, মৃত ৪৮০
এদিকে, শুক্রবার করোনা মোকাবিলায় রীতিমতো রণংদেহী মেজাজে দেখা যায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। হাওড়া এলাকা নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “হাওড়া এখন খুব স্পর্শকাতর এলাকা হয়ে পড়ছে। মূলত শিবপুর, সাঁকরাইল এবং হাওড়া শহর এলাকায় ঝুঁকি বেশি।প্রয়োজনে হাওড়ায় বাজারের কাছে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী নামান হতে পারে। হাওড়ার মতো একই ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে কলকাতার বিভিন্ন এলাকাতেও (এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এলাকার নাম করা হয়নি)।” এমনকি বাজার করার ক্ষেত্রে এদিন চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছেন মমতা। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “মাস্ক না পরে বাজারে ঢোকা যাবে না। বাজারে একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি যাওয়া যাবে না। বাজার থেকে বেরনোর সময়ও হাত স্যানিটাইজ করতে হবে।”
নাইসেডের অধিকর্তা ডাঃ শান্তা দত্ত জানিয়েছেন, অন্যসব রাজ্য়ের তুলনায় বাংলায় কেন নমুনা পরীক্ষা কম হচ্ছে তা তিনি বলতে পারবেন না (পশ্চিমবঙ্গেএ পর্যন্ত ৪,২১২টি নমুনা পরীক্ষা হয়ছে)। এছাড়াও তিনি জানান, নাইসেডে প্রত্যেকদিন ২৫০ নমুনা পরীক্ষার ক্ষমতা রয়েছে। শান্তাদেবী আরও জানান, তাঁর সংস্থার কাছে পর্যাপ্ত পরিমানে করোনা পরীক্ষার কিট রয়েছে এবং আইসিএমআর নাইসেড-এ ব়্যাপিড টেস্ট কিট পাঠিয়েছে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন