Malda Crime News: গত পাঁচ বছর ধরে ভাইপোর বিকৃত যৌন লালসার শিকার হয়ে আসছিল কাকিমা। মানসিক এবং শারীরিকভাবেও নির্যাতন করা হচ্ছিল তাকে। অবশেষে এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরেই ভাইপোকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা। যদিও পরবর্তীতে ওই মহিলার স্বামীও ভাইপোকে খুনে স্ত্রীকে সাহায্য করে।
১৮ মে যেদিন রাতে নিখোঁজ হয়েছিল ভাইপো সাদ্দাম নাদাপ (৩৬)। সেদিন রাতেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন এলাকার ওই মহিলা তার বাবার একটি নির্মীয়মান বাড়িতেই ভাইপোকে গলা কেটে খুন করে। অন্ধকার ঘরে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে আচমকায় বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখা ধারালো চাকু দিয়েই গলাকাটা হয় ভাইপোর। আর তখন ওই বাড়িতে লুকিয়ে ছিল ওই মহিলার স্বামী রহমান নাদাপ। মালদার ব্যবসায়ী ঠিকাদার সাদ্দামকে খুনের ঘটনার পর তার কাকিমা ও কাকুকে গ্রেপ্তার করে সর্বশেষ জেরায় এমন তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।
যদিও এই খুনের ঘটনায় বহিরাগত কোনো দুষ্কৃতীদের সাহায্য নেয়নি ওই দম্পতি। শুধুমাত্র আক্রোশ এবং অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতেই পথের কাঁটা ভাইপোকে এভাবে খতম করে কাকিমা নিজেই। গলা কেটে খুন করার পর ওই মহিলার স্বামী রক্তাক্ত মৃতদেহটি হাত,পা বেঁধে নির্মীয়মান বাড়ির একটি দেওয়ালের কুঠুরিতে প্লাস্টিকে মুড়িয়ে ঢুকিয়ে দেয়। তার ওপর সিমেন্ট, বালি দিয়ে ঢেকে দেয়। আগে থেকে এমন পরিকল্পনা ছিল ওদের। এমনকি সারা রাত ধরে নির্মীয়মান ওই বাড়ির একটি ঘরে রক্ত ধোয়াধুয়ি করে স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে।
ইংরেজবাজার শহরের থেকে অন্তত দেড়শ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে ভাইপো সাদ্দাম কে এমন পরিকল্পনা করে খুন করলে জানতে পারবে না কেউই, এই ভাবনা থেকেই অপরাধ সংগঠিত করে ওই দম্পতি। অবশেষে পুলিশি তদন্তে সবটাই সামনে চলে আসে। বুধবার রাতে একটানা জেরার পর ধৃত মৌমিতা হাসানের স্বামী রহমান নাদাপকে গ্রেপ্তার করেছিল ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাকে মালদা আদালতে পেশ করে তদন্তকারী পুলিশ কর্তারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮ মে যেদিন সন্ধ্যা রাতে নিখোঁজ হয়েছিল ঠিকাদার ব্যবসায়ী সাদ্দাম নাদাপ। সেদিন ট্রেনে করে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে যাওয়ার কথা ছিল। ট্রেন লেট থাকায় ওইদিন রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন এলাকার কাকিমার বাবার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায় সাদ্দাম। এরপর ওই রাতেই একটি নির্মীয়মান বাড়ির ঘরে কাকিমার সাথে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হয় ভাইপো সাদ্দাম। সেই সময় বালিশের তলায় ধারালো অস্ত্র রেখেছিল তার কাকিমা। বাড়ির এক কোণে লুকিয়ে ছিল ওই মহিলার স্বামীও। পরিস্থিতি বুঝে সে সময় আচমকাই অন্ধকারের মধ্যে সাদ্দামের গলায় ধারালো অস্ত্র চালিয়ে শ্বাসনালী কেটে দেয় কাকিমা।
প্রাথমিক জেরায় ধৃত ওই দম্পতি পুলিশকে জানিয়েছে, তপন এলাকার মৌমিতা নাদাপের বাবার ওই বাড়িতে কেউ ছিল না। মৌমিতার বাবা-মা , ভাই তাদের অন্য একটি বাড়িতে ছিল। সেই বাড়ির দূরত্ব ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০ মিটার। ওরা ভেবেছিল মালদা ইংরেজবাজার শহর থেকে দূরে কোন জায়গায় এই অপরাধ সংগঠিত করলে কেউ জানতে পারবে না প্রাথমিক তদন্তে ধৃত ওই দম্পতি পুলিশকে জানিয়েছে, ১৮ মে গভীর রাতে এই খুনের ঘটনাটি ঘটে। সেদিন গভীর রাতে প্রচন্ড ঝড়, বৃষ্টি হয়েছিল। ফলে রাস্তা দিয়ে ভাইপো সাদ্দামকে কাকিমার বাবার বাড়িতে ঢুকতে আশেপাশের লোকজন দেখে নি। বিদ্যুৎ না থাকার কারণেই আশেপাশের কোনও সিসিটিভি ফুটেজ সেভাবে ছবিও পাওয়া যায় নি। তবে এটা যে পরিকল্পিত খুন, সেটা অবশ্য ধৃত ওই দম্পতি স্বীকার করেছে। পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন, এই খুনের ঘটনায় বহিরাগত দুষ্কৃতিদের সাহায্য নেওয়া হয় নি বলেই পুলিশি জেরায় ধৃত ওই দম্পতি জানিয়েছে। ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নিয়েই ঘটনার তদন্ত চালানো হচ্ছে।