পয়গম্বরকে নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মার মন্তব্যকে ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্ক তুঙ্গে। এরাজ্যে দলীয় কার্যালয় থেকে দোকান-বাড়ি ভাঙচুর-আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সরকারি জায়গায়ও হামলার হাত থেকে রেহাই পায়নি। এবার দেশের অন্য জায়গার সঙ্গে এরাজ্যেও পথে নামতে চলেছে বজরঙ্গ দল। আগামিকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কলকাতায় আলিপুরে জেলাশসকের কার্যলয়সহ জেলায় জেলায় জমায়েত-বিক্ষোভ দেখাবে বজরঙ্গ দল। কলকাতায় রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে রাজ্যাপালের কাছে স্মারকিলিপি দেবে এই হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। শীঘ্রই কলকাতায় কেন্দ্রীয় জমায়েত করার পরিকল্পনাও রয়েছে বজরঙ্গ দলের। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিডিয়া ইনচার্জ সৌরিশ মুখোপাধ্যায় বলেন, 'চরম অরাজকতা চলছে। পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ। তারই প্রতিবাদে বিক্ষোভ হবে।'
নূপুর শর্মার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কলকাতা, হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বর্ধমান সহ রাজ্যের সর্বত্র প্রতিবাদ করেছে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন। হাওড়ার পাঁচলা, নরেন্দ্র মোড়, সলপ সহ নানা জায়গায় আন্দোলন ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে বিজেপির কার্যালয় থেকে দোকানপাট। যদিও ওই হিংসাত্মক ঘটনার দায় নেয়নি কোনও সংগঠন। বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন হিংসাত্মক আন্দোলন থেকে সরে আসার আবেদন জানাতে থাকে। রাজ্যপুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একধিক আইপিএসের ওপর বিশেষ দায়িত্ব বর্তায়।
বৃহস্পতিবার পথে নামছে বজরঙ্গ দল। দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের সহ-সংযোজক সুমন কর্মকার বলেন, 'এক জায়গায় জমায়েত করে সেখান থেকে গিয়ে জেলাশাসক, এসডিপিও অফিসে স্মারকলিপি জমা দেবে আমাদের প্রতিনিধি দল। কলকাতায় আমরা রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি দেব। ওই স্মারকলিপি রাজ্যপালের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে যাতে পৌঁছায় তার জন্য আবেদন করব। পশ্চিমবঙ্গে যে পরিস্থিতি হচ্ছে বা পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে তা পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া হাতে দমন করতে। এটা আমাদের মূল দাবি।'
আরও পড়ুন- রাষ্ট্রপতি নির্বাচন: মমতার বৈঠক এড়ালেন একাধিক বিরোধী দল! বাধ্যবাধকতা নাকি কৌশল?
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ্গ দল নেতৃত্বের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে তারা বলে আসছে ভারতে দেহাদি চক্রান্ত চলছে। সুমনের কথায়, 'এর আগে বিষয়টা নিয়ে আমরা রাস্তায় নেমেছি। মানুষের ঘরে ঘরে লিফলেট দিয়ে বলেছি। বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আমরা এনআরসির সময় যে ঘটনা ঘটেছে তা দেখেছি, দুর্গাপুজোর সময় বাংলাদেশের ঘটনারও প্রতিবাদ করেছি। আজ একটা বিষয় পরিস্কার হয়ে গেল, একটা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এ রাজ্যে যে ঘটনা ঘটানো হল তা জেহাদের একটা পার্ট।'
নূপুর শর্মার বক্তব্য নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছে। রাজ্যের অশান্তির পিছনে বিজেপিকে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। তবে নূপুর শর্মার কথাগুলোয় রাজনৈতিক ইন্ধন আছে বলে মনে করে না বজরঙ্গ দলের এই যুব নেতা। সুমন কর্মকারের দাবি, 'ত্বহা সিদ্দিকী শিবলিঙ্গ নিয়ে অশ্লীল কথা বলেছেন। সায়নী ঘোষও শিবলঙ্গ নিয়ে অবমাননা করেছেন। হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করা হচ্ছে। কেন তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? পরিস্থিতি বুঝে আমাদের শক্তি অনুযায়ী আমরা আন্দোলন করব।' শিবলিঙ্গের অবমাননা ইস্যুতে ইতিমধ্যে ত্বহা সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে থানায় এফআইআরও হয়েছে।