পঞ্চায়েত নির্বাচন চলাকালীন দল থেকে পদত্যাগ করলেন বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। তিনি রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও ২০২৩ পঞ্চায়েত নির্বাচন কমিটির সদস্য, হুগলি জেলা (জোনাল-6) থেকে ইস্তফার কথা ঘোষণা করেছেন। তবে এখনই বিধায়ক পদ ছাড়ছেন না তিনি। এর আগে বহুবার বিদ্রোহ করেছেন। তবে এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর দেওয়া প্রার্থীরা দলের প্রতীক না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ এই তৃণমূল বিধায়ক। দলের নানা সমস্যার কথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা দলের সর্বভারতীর সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অবগত আছেন বলেই মনোরঞ্জন বাবু দাবি করেছেন। কেন পদত্যাগ? তা নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বিস্তারিত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী।
প্রশ্ন- হঠাৎ কি হল?
মনোরঞ্জন ব্যাপারী- অনেক দিন ধরেই হয়েছে, সেটা আজ বার্স্ট করল। চেপে চেপে থেকে ভাবছিলাম আমার কথা ভেবে দল কিছু ব্যবস্থা নেবে। দল কোনও কথা কানেই নিচ্ছে না। তাহলে আর কি দরকার।
প্রশ্ন- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়গুলি জানেন?
মনোরঞ্জন ব্যাপারী- সবাই সব জানে। এত দিন ধরে লড়াই চলছে জানবেন না। কোথায় একটা গাছের পাতা নড়লে ওঁরা জানেন। এত দিন ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করছি জানেন না। এতদিন ডেকে কোনও আলোচনা করেছে? করেনি।
প্রশ্ন- আগামী তিন বছর কি করবেন?
মনোরঞ্জন ব্যাপারী- আমার লেখা আছে। যতক্ষণ পেনশন না পাচ্ছি বিধায়ক পদ ছাড়ব না। ওই পেনশন চালু হলে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেব। খেয়ে বাঁচতে হবে তো। আমি এক স্কুলে রাঁধুনির কাজ করতাম। সেই পেনশনও এখনও চালু হয়নি।
প্রশ্ন- তাহলে দলের কোনও সাংগঠনিক কাজে থাকবেন না?
মনোরঞ্জন ব্যাপারী- আমি আর কোনও সাংগঠনিক কাজে থাকব না। কি লাভ আমার? আমি যা বলছি দলের ভালর জন্য। ঠিক তার উল্টোটা করছে। উল্টোটা কেন করে সবাই জানে।
প্রশ্ন- পঞ্চায়েতে প্রার্থী নিয়ে ধাক্কা হল?
মনোরঞ্জন ব্যাপারী- একদম। একদম। যে দলের কর্মীরা আমার ভোটে জানপ্রান দিয়ে খাটল তাঁদের টিকিট দেওয়া হল না। এত এক্সট্রা টিকিট কি করে নবীন গঙ্গোপাধ্যায়ের কছে এল(বলাগড়ের ব্লক সভাপতি)? যাঁকে তাঁকে ডেকে টিকিট দিল। পান দোকানে দাঁড়িয়ে প্রার্থী তৈরি করল। আমার যে কজন প্রার্থী দাঁড়িয়েয়েছে সেখানে অন্য প্রার্থী দিয়ে আমাদের মনোনয়ন তুলিয়ে নিতে বাধ্য করেছে। প্রথম মনোনয়ন দিয়েছিল তাই নাকি এমন ঘটেছে। আমরা তো দলের তালিকার জন্য অপেক্ষা করেছি। দুপক্ষকেই প্রতীক দিয়েছে। ওরা প্রথমে দেওয়ায় ওরা প্রার্থী হয়ে গেল! ইচ্ছা করেই দল এই কাজ করেছে। আমার কোনও প্রার্থী নেই।
প্রশ্ন- আপনার কথা মানছে না?
মনোরঞ্জন ব্যাপারী- আমার কোনও কথাই টিকল না। আর কিছু করার দরকার নেই। এখানে থলি ছাড়া কোনও গল্প নেই। যার কাছে থলি নেতা তাঁর পিছনে।
প্রশ্ন- তাহলে আপনি দল ছেড়ে দিলেন?
মনোরঞ্জন ব্যাপারী- আমি দল ছাড়লাম। তবে পেনশন না পেলে বিধায়ক পদ ছাড়ব না।
প্রশ্ন- তৃণমূলে আসা তাহলে ঠিক হয়নি?
মনোরঞ্জন ব্যাপারী- আমি তো ভেবেছিলাম দলটা পরিশুদ্ধ হবে। সেই সময় দলে এসেছি যখন ১৪৯ জন দল থেকে ছেড়ে গিয়ছে। ৩৬ হাজার ভোটে হারা সিটে আমি দাঁড়িয়েছিলাম। জেতার সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু মানুষ আমাকে ভালবেসে ছিল। মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তোমাদের সঙ্গে বিপদে আপদে থাকব। দলটাকে সুস্থভাবে দাঁড় করাব। প্রচেষ্টা ছিল। দল যে অন্য কিছু ভেবে রেখেছে তা তো আমি জানি না। দল কি ওখানে জেতার জন্য পাঠিয়ে ছিল?
প্রশ্ন- দলের কাছে আপনার কি কোনও মূল্য নেই মনে করছেন?
মনোরঞ্জন ব্যাপারী- কোনও মূল্য নেই তো। অত লড়াই করে কঠিন আসনে জিতলাম। দলে মূল্য আছে মাটি মাফিয়াদের, দুর্নীতিগ্রস্তদের। আমি থেকে কি করব এই দলে? রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি চোর চোর বলে চিৎকার করছে লোকজন। শুনতে কি ভাল লাগে? আমি জিজ্ঞেস করছি আমি কি চুরি করেছি? বলছে আপনাকে না। আপনার সামনে যাঁরা যাচ্ছে ওদের জিজ্ঞাসা করুন। আমি কেন নিজের গায়ে কাদা লাগাতে যাব? ৪০ বছর ধরে অনেক সম্মান অর্জন করেছি। চোরদের সঙ্গে থেকে চুরির দাগ লাগাতে পারব না। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে জানানোর দরকার ছিল। আমি জানিয়ে দিয়েছি।
প্রশ্ন- দিদি অনুরোধ কররলে কি করবেন?
মনোরঞ্জন ব্যাপারী- দিদি অনুরোধ কি করবে? দিদির অনুরোধের একটাই জায়গা.. বিধায়ক পদে তো আছি। আমার পেনশন চালু হলে বিধায়ক পদ ছাড়ার কথা ভাবব। যে দলে এতটুক সম্মান নেই। দলের এতগুলি মুকুট মাথায় অথচ পঞ্চায়েতের সাধারণ সদস্য সম্মান দেয় না। আমার নামে যাতা বলে। দলটা টাইটানিকের মতো ডুবে যাবে।
প্রশ্ন- অন্য দলে যোগ দেবেন?
মনোরঞ্জন ব্যাপারী- আমি প্রতিবাদী মানুষ। আমি লখব, সক্রিয় কোনও দলীয় রাজনীতি করা শখ নেই। সংসদীয় রাজনীতিতে আর আসব না।