Bangla Awas Yojana: খড়-মাটির ঘরই সম্বল, তবুও আবাসের বাড়ি চান না তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান

Bangla Awas Yojana: মাটির দেওয়াল আর খড়ের চালার বাড়িতে অতি কষ্টেই তিনি দিনযাপন করেন। তবুও বাংলা আবাসের পাকা বাড়ি পাওয়ার জন্য সুশীলা তাঁর পদের ক্ষমতা কায়েম করেননি। উল্টে, তিনি তাঁর এলাকার গরিব পরিবারগুলি যাতে আবাসের ঘর পায় তার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।

author-image
Pradip Kumar Chattopadhyay
New Update
TMC Panchayat Pradhan: সুশীলার এই স্বার্থত্যাগই এখন তৃণমূল সুপ্রিমোর চাওয়া বিবেকবান তৃণমূল কর্মীর পরিচায়ক হয়ে উঠেছে

TMC Panchayat Pradhan: সুশীলার এই স্বার্থত্যাগই এখন তৃণমূল সুপ্রিমোর চাওয়া বিবেকবান তৃণমূল কর্মীর পরিচায়ক হয়ে উঠেছে

Bangla Awas Yojana: পাকা বাড়ি থাকতেও ’বাংলার আবাস’ যোজনার তালিকায় নাম থাকায় তৃণমূলের নেতাই এখন মুখ লুকোচ্ছেন। ওইসব নেতাদের আরও লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন আদিবাসী সম্প্রদায় ভুক্ত তৃণমূলের নেত্রী সুশীলা কিস্কু। তিনি শুধুমাত্র একজন নেত্রীই নন। পূর্ব বর্ধমান জেলার সাতগেছিয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানও তিনি। মাটির দেওয়াল আর খড়ের চালার বাড়িতে অতি কষ্টেই তিনি দিনযাপন করেন। তবুও বাংলা আবাসের পাকা বাড়ি পাওয়ার জন্য সুশীলা তাঁর পদের ক্ষমতা কায়েম করেননি। উল্টে, তিনি তাঁর এলাকার গরিব পরিবারগুলি যাতে আবাসের ঘর পায় তার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। সুশীলার এই স্বার্থত্যাগই এখন তৃণমূল সুপ্রিমোর চাওয়া বিবেকবান তৃণমূল কর্মীর পরিচায়ক হয়ে উঠেছে। 

Advertisment

সুশীলা কিস্কুর বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি ২ ব্লকের অধীন সাতগেছিয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ঝিকড়া গ্রামে। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। গ্রামের এক প্রান্তে মাটির দেওয়াল আর খড়ের চালার দু’কুঠুরি ঘরে স্বামী সুনীল কিস্কু, নাবালিকা কন্যা সুহানি এবং শিশুপুত্র ক্রিসকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বসবাস করেন। ওই বাড়ির বারান্দার চালাটি অবশ্য টালির। সুশীলার স্বামী পেশায় খেত মজুর। মেয়ে ঝিকড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তিন বছর বয়সী ছেলে ক্রিস এখন সবে মাত্র হাঁটতে শিখেছে। সুশীলার শ্বশুর ভোম্বল কিস্কু ও শাশুড়ি মুটকি কিস্কু বয়সে প্রবীণ হলেও রুটিরুজি জোগাড়ের জন্য তাঁরাও খেত মজুরের কাজ করেন। অবিবাহিত মেয়ে লক্ষ্মী কিস্কুকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরাও বসবাস করেন মাটির বাড়িতে। তবুও সুশীলা-সহ এই গোটা কিস্কু পরিবারের কেউই ’বাংলা আবাস’ যোজনার পাকা বাড়ি পাওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত কোনওরকম ব্যাকুলতা দেখাননি। 

আবাসের তালিকায় শাসক দলের ঘনিষ্ঠদের নাম থাকা, আবার কারোওর নাম না থাকা নিয়ে রাজ্যে বিবাদ অশান্তির শেষ নেই। এ নিয়ে মারপিট, এমনকি খুনোখুনির ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। এই সব থেকে নিজেকে অনেক দূরে সরিয়ে রেখেছেন মেমারির সাতগেছিয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুশিলা কিস্কু। কিন্তু কেন সুশীলা মাটির বাড়িতে বসবাস করেও বাংলা আবাসের পাকা বাড়ি পাওয়ার জন্য উৎসাহ দেখাননি তা জানলে তৃণমূলের অনেক নেতাই হয়তো লজ্জায় মুখ লুকোবেন। 

আরও পড়ুন 'বহুরুপীর বেশে' শাসক নেতা, কারণ জানলে চমকে যাবেন

Advertisment

এ নিয়ে সুশীলা জানিয়েছেন, “তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর তাঁর বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়িতে তাঁর শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ ও স্বামী খেতমজুরির কাজ করেন। পঞ্চায়েত অফিস ছুটি থাকলে তিনিও খেতমজুরির কাজে যান। এর জন্য তিনি কোনও লজ্জা বোধ করেন না। তবে সুশীলার  আক্ষেপ, তিনি ’গ্রাজুয়েট’ হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাংসারিক অভাব অনটনের কারণে তাঁর ’গ্রাজুয়েট’ হওয়া আর হয়নি। তবে রাজনীতিকে আঁকড়ে তিনি এখন সমাজসেবা মূলক কাজে নিজেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলেছেন বলে জানান। 

রাজনীতির আঙ্গিনায় পা রাখার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস দলকে বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যাও করেছেন সুশীলা। তিনি তাঁর ব্যাখ্যায় জানান, “তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর আকর্ষণ বাড়ে বিয়ের অনেক আগে, স্কুল জীবনে“। সুশীলার কথা অনুযায়ী, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র একজন লড়াকু নেত্রী’ই নন, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেও তিনি সফল। তিনি গরিবদের জন্য যেসব জনমুখী প্রকল্প রাজ্যে চালু করেছেন, তার সুফল আজ বাংলার আদিবাসীরা-সহ লাখো লাখো মানুষ পাচ্ছেন। পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে আমি প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে যে ’সান্মানিক’ পাই তাতে সংসারের অভাব অনেকটাই মেটে। তাই দলনেত্রীর আদর্শকে মান্যতা দিয়ে নিজেও পরিবারের স্বার্থকে বড় করে দেখার আকাঙ্খা দেখাইনি। বরং আমার এলাকার গরিব মানুষের স্বার্থপূরণের বিষয়টাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সেই কারণেই নিজের পরিবারের জন্য আবাসের পাকা বাড়ির ব্যবস্থা করে নেওয়ার কোনও উৎসাহই দেখাইনি। তাঁর বক্তব্য, বাংলা আবাসের ঘর পেয়ে গরিব মানুষদের মুখে হাসি ফুটুক না। পরে না হয় তাঁর পরিবারের ঘর হবে।"

সুশীলা কিস্কুর এমন ভাবনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তিনি বলেন,“মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কর্মীদের বিবেকবান হওয়ার কথা বলেছেন। সেই বিবেকেরই প্রকাশ পেয়েছে সাতগেছিয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুশিলা কিস্কুর জীবনযাত্রা  ও কর্মকাণ্ডে।” তৃণমূল কংগ্রেসের আদিবাসী সেলের রাজ্য সভাপতি দেবু টুডু বলেন, “সুশীলা কিস্কুদের মতো পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়েই সমৃদ্ধ তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধী দলে এসব  দুষ্প্রাপ্য।“ এর পাল্টা জবাবে জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “তৃণমূলে সুশিলা কিস্কুদের মত পঞ্চায়েত প্রধানরাই আসলে দুষ্প্রাপ্য। পার্থ, অনুব্রত, কালীঘাটের কাকু- এঁরাই তৃণমূলের উজ্জ্বল মুখ“।

tmc burdwan Panchayat Head Memari PM Awas Yojana Bangla Awas Yojana