Bangladesh Crisis: শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই বাংলাদেশ জুড়ে চলছে চরম নৈরাজ্য। ভারত বিদ্বেষ যেন ডাল-পালা মেলে ছড়াচ্ছে পদ্মাপাড়ে। প্রতিদিনই সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার অব্যাহত। ভারতের বিরুদ্ধে ছোঁড়া হচ্ছে হুঙ্কার। তোলা হচ্ছে যুদ্ধ জিগির। এর মাঝে বাংলাদেশে আইনের শাসন ফেরার অপেক্ষায় আওয়ামী লিগের শীর্ষ নেতারা। এই মুহূর্তে যদিও অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে আত্মগোপন করে রয়েছেন দেশে-বিদেশে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব দলের কঠিন দিনেও শেখ হাসিনার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা। যদিও ক্ষমতার পালা বদলের পর আওয়ামি লিগ নেতৃত্বের এক-তৃতীয়াংশ জেলবন্দী। বড় অংশের নেতারা দেশ ছেড়েছেন প্রাণভয়ে।
৫ আগস্ট, ২০২৪! মুহূর্তে বদলে যায় বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট।শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরই সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের তিনবারের সাংসদের ঢাকার বাড়ি এবং পৈতৃক সম্পত্তিতে চলে দেদার লুটপাট। খামার, অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ফোনে জানিয়েছেন, "কিছুই পুনর্নির্মাণের কোনও সম্ভাবনা নেই," । ১১ বছর ধরে সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী থাকা আরেক সাংসদের বিরুদ্ধে ৩৭টি খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। তার ঠিকানায় প্রতিদিন একের পর এক "আইনি নোটিশ" পাঠাচ্ছে ইউনূস সরকার। আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা 'স্মরণ' করেছে যে কীভাবে তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে চূড়ান্ত হতাশার মধ্যেও কোথাও টিমটিম করে জ্বলছে আশার আলো। হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। ক্ষমতায় ফিরবে আওয়ামী লিগ। নেতৃত্ব দেবেন শেখা হাসিনা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস হাসিনা সরকারের বেশ কয়েকজন নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানিয়েছেন "আমরা আবার বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাই এবং জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।" অবস্থান প্রকাশ না করার শর্তে,নেতাদের একটা বড় অংশ স্বীকার করেন যে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকলেও শেষের দিকে শাসন ব্যবস্থায় কিছু কিছু ত্রুটি ছিল যার কারণে আজ তারা একটি "বিচ্ছিন্ন, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা" রাজনৈতিক ফ্রন্টে পরিণত হয়েছেন।
শেখ হাসিনার শেষ মন্ত্রিসভার অন্যতম হেভিওয়েট মন্ত্রী ৭৮ বছর বয়সি মহম্মদ হক বলেন, “হাজার হাজার আওয়ামী লীগ কর্মীকে তাদের বাড়িঘর থেকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে, তারা আত্মগোপন করে রয়েছেন। খাবারের জন্যও টাকা নেই তাদের কাছে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন… তবুও, নেতাকর্মীদের মনোবল তুঙ্গে। আমরা দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক 'মতামতকে'তুলে ধরার ক্ষেত্রে ভারতের দিকে তাকিয়ে আছি,”।
২০১২ সাল আওয়ামী লীগের সাংসদ তিনি, সেই বছর ৪৪-এর নাহিম রাজ্জাকের জানিয়েছেন, "আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রায় সকলের জামিন আবেদন বাতিল করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি "ভয়াবহ" এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব "অসহায়"। বর্তমানে, আমাদের পক্ষে ময়দানে নেমে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়।"
বেশ কয়েকজন নেতা দাবি করেছেন যে ভারতে লুকিয়ে থাকলেও শেখ হাসিনা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তাদের কথায়, আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তিনি আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ক্রমশ আশাবাদী।”
টেলিফোনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাথে কথা বলার সময়, "তিনবারের নির্বাচিত সাংসদ এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুল আলম হানিফের অনুমান দলের ৩ লক্ষেরও বেশি কর্মী এখনও বাংলাদেশে আত্মগোপন করে রয়েছেন। হানিফ বলেন “শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরেও বাংলাদেশে হত্যা ও হিংসা অব্যাহত রয়েছে। তাহলে এই সবকিছুর জন্য কে দায়ী? যদি ছাত্র আন্দোলনের সময় গণহত্যার জন্য হাসিনাকে অভিযুক্ত করা হয়, তাহলে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে"।