দিনে-দুপুরে শহর বর্ধমানের প্রাণকেন্দ্রে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে দুঃসাহসিক ডাকাতি। নগদ ৩৩ লক্ষ টাকা লুঠ করে চম্পট দেয় সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা, এমনই দাবি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। এদিন ঘটনা জানাজানি হতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে শহরে। খবর পেয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যান সিংহ রায়-সহ বর্ধমান থানার পুলিশ কর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছোন। পলাতক দুষ্কৃতীদের খোঁজে জেলার বিভিন্ন সড়কপথে শুরু নাকা চেকিং। ব্যাঙ্ক-সহ ঘটনাস্থলে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুস্কৃতীদের চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে।
ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনায় শুক্রবার চাঞ্চল্য ছড়ায় বর্ধমান শহরের প্রাণকেন্দ্র কার্জন গেট চত্বরে। ঘটনার তদন্তে সিট তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্ধমান শহরে ডাকাতির ঘটনা এই প্রথম নয়। বছর দুই আগে ২০২০ সালের ১৭ জুলাই বর্ধমানের বি সি রোড এলাকার স্বর্ণঋণ দানকারী সংস্থাতেও ডাকাতি হয়। এবার শহরের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় দুঃসাহসিক ডাকাতি।
এদিন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এই ব্যাঙ্কেরই এক কর্মীর স্ত্রী দীপা কুমার। তিনি এদিন জানান, অসুস্থ স্বামীকে পৌনে ১০টা নাগাদ ব্যাঙ্কে দিতে এসেছিলেন তিনি। ব্যাঙ্কে ঢোকার সঙ্গে-সঙ্গে হিন্দিভাষী কয়েকজন যুবক তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে বসতে বলে। এরপরেই তাঁদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় ওই যুবকরা। যুবকরা সংখ্যায় ৫-৬ জন ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা গিয়েছে এদিন ব্যাঙ্কে ডাকাতি করতে আসা দুষ্কৃতীদের সবার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। যুবকদের মুখ ঢাকা ছিল, পিঠে ছিল স্কুল ব্যাগ। সবাইকে বসিয়ে রেখে যুবকরা ব্যাঙ্কের এক আধিকারিকের কাছে চাবি চায়। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই অপারেশন চালিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে দুস্কৃতীরা ব্যাঙ্ক ছেড়ে পালায়। যাওয়ার আগে ব্যাঙ্কের মূল গেটের বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা।
ডাকাতির সময় ব্যাঙ্কের ভিতরে থাকা গ্রাহক অনিতা সরকার, সুষমা মল্লিকরা জানান, ব্যাঙ্কের কাজ শুরু হতেই ৬ জনের একটি দুস্কৃতী দল ঢুকে পড়ে। সব মিলিয়ে তখন হাতেগোনা ১০-১৫ জন গ্রাহক ব্যাঙ্কের ভিতরে ছিলেন। গ্রাহকদের সবার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে দুস্কৃতীরা ব্যাঙ্ককর্মীদের মারধর করে লুঠপাট শুরু করে।
আরও পড়ুন- মত্ত অবস্থায় এলোপাথাড়ি ছুরির কোপ, প্রতিবেশীর হামলায় নিহত দুই ভাই
এদিকে, টাকা লুঠের পরেই ব্যাঙ্কের অ্যালার্ম বেজে ওঠে। স্থানীয় থানা ও জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের পাশাপাশি ব্যাঙ্কের ভিতরে থাকা গ্রাহকদের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার কুন্দন কিশোর বলেন, ''ব্যাঙ্কের দুই কর্মীকে মারধর করে দুস্কৃতীরা ৩৩ লক্ষ টাকা লুঠ করে চম্পট দেয়।'' ব্যাঙ্কের এক কর্মী বলেন, ''আগ্নেআস্ত্র দেখিয়ে দুস্কৃতীরা ব্যাঙ্কের ভল্টের চাবি কেড়ে নেয়। ভল্ট থেকে টাকা বের করে একটি ব্যাগে ভরে নিয়ে দুস্কৃতীরা হেঁটে ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে যায়। দুস্কৃতীরা ব্যাঙ্কের 'হার্ড ডিস্ক' সঙ্গে নিয়ে পালিয়েছে।''
ব্যাঙ্ক ডাকাতির তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেন জানিয়েছেন, সিট গঠন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। দুস্কৃতীদের নাগাল পেতে বিভিন্ন এলাকায় নাকা চেকিং চালানো হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুষ্কৃতীরা স্থানীয়, নাকি বাইরে থেকে এসেছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।