বর্ধমানের কাঁকসা থানার এলাকায় গভীর জঙ্গলে ঘেরা এক মন্দির পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান হলেও সেই শিল্পেই জন্মাচ্ছে আগাছা। অভিযোগ, ঐতিহাসিক এই স্থাপত্য শিল্পটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ার ফলে ক্রমশই জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। আনুমানিক অষ্টদশ শতকে রাজা ইছাই ঘোষ গভীর জঙ্গলের মাঝে তৈরি করেন এই দেউল মন্দির। গোটা মন্দিরে রয়েছে পোড়া ইটের নকশা এবং টেরাকোটার কাজ। কাঁকসার ঘন জঙ্গলের মাঝে অজয় নদীর ধার ঘেঁষা এই মন্দিরটি ইছাই ঘোষ তৈরি করেছিলেন যুদ্ধ জয়ের নিশান হিসেবে। বর্তমানেও এই পুরাতন মন্দিরের সৌন্দর্য্য এবং কারুকাজ দেখতে আসেন বহু মানুষ। কিন্তু সেই স্থাপত্যের এমন অবস্থা দেখে শঙ্কিত এলাকাবাসীরাই।
আরও পড়ুন: বিষাক্ত আগাছায় ঢেকেছে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার এলাকা, নির্লিপ্ত পুরসভা
ইতিহাস থেকে জানা যায়, তৎকালীন রাজা ইছাই ঘোষ দেবী ভগবতীর পূজা করতেন এই দেউল মন্দিরে। তবে দেওয়ালের গায়ে টেরাকোটায় আঁকা রয়েছে বহু দেবদেবীর মূর্তি। যদিও পরবর্তীকালে এই মন্দিরে শিবলিঙ্গ স্থাপন করে পূজা করা হয়। বাংলার এমন স্থাপত্যের জরাজীর্ণ পরিস্থিতির পিছনে প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতাকেই দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও মন্দিরের সংস্কার হয় নি। ফলে মন্দিরের চূড়ায় দেখা দিয়েছে ফাটল। আর ফাটলের মাঝেই জন্ম নিচ্ছে গুল্ম এবং গাছ। এমনকি দীর্ঘদিনের সংস্কারের অভাবে ক্ষয়িষ্ণু টেরাকোটার কারুকার্যও।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ, প্রতিবাদ মিছিল দুর্গাপুর এনআইটির গবেষকদের
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ২০০৬ সালে এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে দেউল পার্ক। এবং সেই পার্ক ঘিরে ছোটখাটো দোকানপাটও। বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ববিদদের আওতায় এই টেরাকোটার মন্দির। তবে পার্ক কর্তৃপক্ষ কিংবা প্রশাসন, কোনও তরফেই গাফিলতি স্বীকার করছেন না কেউই। তাঁদের দাবি, যেহেতু দেউলটি 'সংরক্ষিত', তাই এর নির্মাণকার্যে কোনও রকম হাত লাগাবেন না তাঁরা। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে এই বিষয়ে জানানো হবে বলে জানান তাঁরা। অন্যদিকে স্থানীয়দের এবং পর্যটকদের মত, মন্দির অবিলম্বে সংস্কার না হলে যে কোনও দিন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ঐতিহাসিক এই স্থাপত্য।