রাজ আমলের রীতি মেনে মহানবমীতে কুমারী পুজো, সর্বমঙ্গলা মন্দিরে উপচে পড়ল ভক্তদের ঢল

দেবী পক্ষের আজ মহানবমী। তাই রাজ আমলের রীতি মেনে বুধবার মহানবমী তিথিতে দেবীজ্ঞানে নয় কুমারীর পুজো হল বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে।

দেবী পক্ষের আজ মহানবমী। তাই রাজ আমলের রীতি মেনে বুধবার মহানবমী তিথিতে দেবীজ্ঞানে নয় কুমারীর পুজো হল বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
cats

রাজ আমলের রীতি মেনে মহানবমীতে কুমারী পুজো, সর্বমঙ্গলা মন্দিরে উপচে পড়ল ভক্তদের ঢল

দেবী পক্ষের আজ মহানবমী। তাই রাজ আমলের রীতি মেনে বুধবার মহানবমী তিথিতে দেবীজ্ঞানে নয় কুমারীর পুজো হল বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে।নয়জন কুমারীকে দেবী দুর্গার নয়টি রূপে এখানে পুজো করা হয়ে থাকে। এই রূপগুলির মধ্যে  অন্যতম হল কালিকা, মালিনী,সুভগা,কব্জিকা,কালসন্দর্ভা ও উমা। কুমারী পুজো দেখার জন্য ভক্তদের ভিড উপচে পড়ল সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। 

Advertisment

প্রথা মেনে প্রতিপদে ঘটস্থাপন হয় সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। ওই দিন রাজাদের খনন করা কৃষ্ণসায়র থেকে জল ভরা হয় ঘটে। ঘটস্থাপনের মাধ্যমে কার্যত প্রতিপদ থেকেই বর্ধমান সহ গোটা রাঢ়বঙ্গে দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে যায়। বর্ধমানের রাজারা জন্মসূত্রে ছিলেন পাঞ্জাবী। পরে বধূ হিসেবে নানা রাজ্যের মেয়েরা এসেছেন পরিবারে। তাই নানা সংস্কৃতি, লোকাচারেরও মিশেলও হয়েছে। তবে নবমী অর্থাৎ নবরাত্রি অবধি সমস্ত লোকাচার মেনে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পুজোপাঠ আজও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়ে থাকে। 

আরও পড়ুন-'ত্যাগ, শৃঙ্খলা এবং জাতির প্রতি সেবার এক উদাহরণ', RSS-এর শতবর্ষে আবেগঘন ভাষণ প্রধানমন্ত্রী মোদীর

Advertisment

বর্ধমান রাজ পরিবারের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দির হল রাঢ়বঙ্গের ঐতিহাসিক মন্দির গুলির অন্যতম। বর্ধমানের বাহির সর্বমঙ্গলা অঞ্চলে বাস করা চুনুরীদের কাছ থেকে পাওয়া কষ্ঠি পাথরের অষ্টাদশী ভূজা দেবীমূর্তি  বর্ধমানবাসীর  অধিষ্ঠাত্রী দেবী। ১৭৪০ সালে রাজা কীর্তি চাঁদ অষ্টাদশী দেবী মূর্তিকে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে সর্বমঙ্গলা নামেই দেবী পূজিত হয়ে আসছেন। বর্ধমানবাসী আজও মনে করেন, মন্দিরে থাকা সর্বমঙ্গলার মূর্তিটি মন্দিরের থেকেও বেশি প্রাচীন। অনেকের মতে ১০০০ বছর, আবার কারও মতে তা ২০০০ বছরের পুরনো। এই মূর্তিটি হল কষ্টিপাথরের অষ্টাদশভূজা সিংহবাহিনী মহিষমর্দিনী। দৈর্ঘ্যে ১২ ইঞ্চি, প্রস্থে ৮ ইঞ্চি।

এহেন দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সময়ে রাজা মহতাব চাঁদ দেবীর মন্দির তৈরী করেন। রাজা নেই, রাজ আমলও আর নেই ,তা বলে দেবীর বন্দনায় কোন খামতি পড়েনি । রাজ আমলের রীতি  মেনে এখনও পুজোর দিনগুলোয় নিষ্ঠার সঙ্গে সর্বমঙ্গলা মায়ের পুজো হয়ে আসছে। নিয়ম নিষ্ঠায় কোন খামতি পড়েনি। অন্যান জায়গায় অষ্টমীতে কুমারী পুজো হলেও যেহেতু সর্বমঙ্গলা মন্দিরে নবরাত্রীর পুজো হয় তাই এখানে নবমী তিথিথেই কুমারী পুজো হয়ে আসছে। 

আরও পড়ুন-মণ্ডপে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর পরিচয় বিভ্রাট, ক্ষোভ উগরে দিলেন বিপ্লবী কন্যা

ররাজ আমলের অবসান হবার পর তৎকালীন মহারাজা উদয় চাঁদ ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেন। সেই ট্রাস্টি বোর্ডের হাতেই তিনি  প্রাচীন মন্দিরটি পরিচালনার দায়িত্ব দেন ও তার পর থেকে এখনো পর্যন্ত সেই ট্রাস্টি বোর্ডই এই মন্দিরের পুজো অর্চনার যাবতীয়  দায়দায়িত্ব সামলে আসছে। জেলার বাইরে ভিন জেলার বহু ভক্ত এদিন নয় কুমারীর পুজো দেখতে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে উপস্থিত হন। 

মন্দিরের পুরোহিত অরুণ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, প্রথা মেনেই নবমী তিথিতে সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে নয় কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়। সেই রাজ-আমল থেকে আজও একই ভাবে সাবেকি  রীতি মেনেই পুজো পাঠ  হয়ে আসছে। পুজোর চারদিন ষোড়শোপচারে দেবী আরাধনা হয় সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। আগে মহিষ ও পাঁঠা বলি হত। এখন বলি বন্ধ। আগে সন্ধিপুজোর মহালগ্নে কামান দাগা হত। ১৯৯৭ এ  বিস্ফোরণের পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় সেই প্রথা।রাজ আমল এখন আর নেই ঠিকই,তবে দেবী আরাধনা ঘিরে ভক্তদের আবেগ একটুও কমেনি। পুজোর পাঁচদিন এখানে তিলধারণের জায়গা থাকে না। হাজারে হাজারে ভক্ত পুজো দিতে সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে সমবেত হন।

burdwan Durgapuja