Purulia Howrah MEMU Train: রাঢ় বঙ্গের ‘বড় দুঃখের রেল’ এখন ইতিহাস! পুরুলিয়া-বাঁকুড়া-হাওড়া রুটে চালু ট্রেন পরিষেবা, স্বপ্নপূরণ যাত্রীদের

Purulia Howrah MEMU Train: কোন কোন স্টেশনে ট্রেন থামবে, সেটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী সোমবার থেকে আপ ৬৮১২১ হাওড়া-পুরুলিয়া মেমু প্যাসেঞ্জার ট্রেন নিয়মিত চলবে।

Purulia Howrah MEMU Train: কোন কোন স্টেশনে ট্রেন থামবে, সেটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী সোমবার থেকে আপ ৬৮১২১ হাওড়া-পুরুলিয়া মেমু প্যাসেঞ্জার ট্রেন নিয়মিত চলবে।

author-image
Pradip Kumar Chattopadhyay
New Update
বড় দুঃখের রেল  পুরুলিয়া বাঁকুড়া হাওড়া ট্রেন  BDR রেল পরিষেবা  মসাগ্রাম জংশন ট্রেন  বাঁকুড়া মসাগ্রাম হাওড়া মেমু  Purulia Howrah MEMU Train  Bankura Railway Development  পূর্ব রেল দক্ষিণ পূর্ব রেল সংযোগ  রাঢ় বঙ্গ ট্রেন পরিষেবা  ভারতের প্রাচীন রেল ইতিহাস  হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনের সংযোগ  রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব উদ্বোধন  মেমু ট্রেন টাইমটেবিল বাঁকুড়া

পুরুলিয়া-বাঁকুড়া-হাওড়া রুটে চালু ট্রেন পরিষেবা, স্বপ্নপূরণ যাত্রীদের

Purulia Howrah MEMU Train:  রাঢ় বঙ্গের রেল যাত্রীদের দুঃখের অবসান ঘটাতে অনেক দিন আগেই পূর্ব রেল ও দক্ষিণ পূর্ব রেল পথের মিলন ঘটানো হয়ে গিয়েছিল। তবে পথের মিলন ঘটে গেলেও দুঃখ জিইয়ে ছিল। অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেই কলকাতায় পৌছাতে হচ্ছিল বাঁকুড়া সহ পূর্ব বর্ধমান জেলার দক্ষিণ দামোদর এলাকার বাসিন্দাদের। সেই কারণে  বি.ডি.আর রেল তাদের কাছে “বড় দুঃখের রেলে" হিসাবেই পরিচিতি হয়েছিল। শনিবার রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সেই পরিচিতির অবসান ঘটালেন। 

Advertisment

দিল্লি থেকে সরাসরি এল বিরাট আপডেট, এখন কেমন আছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়?

ভার্চুয়ালি এদিন তিনি পুরুলিয়া থেকে বাঁকুড়া ভায়া মসাগ্রাম হয়ে সোজা হাওড়া ট্রেন পরিষেবা উদ্বোধন করেন। আগামী ৩০ জুন থেকে চালু হচ্ছে পুরুলিয়া- হওড়া ভায়া মসাগ্রাম ট্রেন চলাচল।  
স্বাভাবতই খুশি রাঢ় বঙ্গের বাসিন্দারা । শুধু ট্রেন পরিষেবার উদ্বোধনই নয় ট্রেন চলাচলের সময়সূচিও ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে পূর্ব রেল। 

কোন কোন স্টেশনে ট্রেন থামবে, সেটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী সোমবার  থেকে আপ ৬৮১২১ হাওড়া-পুরুলিয়া মেমু প্যাসেঞ্জার ট্রেন নিয়মিত চলবে। আরও জানানো হয়েছে, আগামী মঙ্গলবার অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে পুরুলিয়া-হাওড়া মেমু প্যাসেঞ্জার ট্রেন নিয়মিত চলবে। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ছ'দিন হাওড়া-পুরুলিয়া-হাওড়া মেমু প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানো হবে। তবে পুরুলিয়া-হাওড়া মেমু প্যাসেঞ্জার ট্রেন শুধুমাত্র শনিবার চলবে না। রেল দফতর থেকে এও  জানানো হয়েছে,'মসাগ্রাম-সহ ৫০ টি  স্টেশনে দাঁড়াবে পুরুলিয়া-হাওড়া মেমু ট্রেন'।এ ই ট্রেন পরিষেবা চালু হওয়ায় পুরুলিয়া যাওয়া যেমন সহজ হল তেমনি ইন্দাস, সোনামুখী-সহ বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকার মানুষেরও প্রভূত উপকার হল। বর্ধমান কর্ড শাখার যাত্রীরাও উপকৃত হবেন। 

Advertisment

নারীবিদ্বেষ? গর্জে উঠলেন মহুয়া মৈত্র! কাদের নিশানা?

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়,ভারতের প্রাচীন রেল পথ গুলির অন্যতম হল বি.ডি.আর। অর্থাৎ বাঁকুড়া দামোদর রেলওয়ে বা বাঁকুড়া দামোদর নদী উপত্যকা রেলওয়ে। দেশ তখন পরাধীন। ইংরেজ শাসন কালে সূচনা হয় বাঁকুড়া দামোদর রেলওয়ের।সূচনা কালে বি.ডি.আর 'ম্যাকলেওড’স লাইট রেলওয়েজ কোম্পানি’ দ্বারা পরিচালিত ছিল’। পরে ১৯১৪ সালের ৩০ মার্চ বাঁকুড়া-দামোদর রিভার রেলওয়ে কোম্পানি নথিভুক্ত হয়। তারপর ওই বছরের ১ মে শুরু হয় 'ন্যারো গেজ’ লাইন নির্মাণের কাজ। ১৯১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাঁকুড়া থেকে অধুনা পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না পর্যন্ত ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ন্যারোগেজ লাইনটি চালু হয়। এই রেল পথই সেই সময় বাঁকুড়া ও অবিভক্ত বর্ধমান জেলার মধ্যে সংযোগ রক্ষা করতো। 

ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে 'বি.ডি.আর’ রেলের উপর নজর পড়ে  ভারতীয় রেলের। ১৯৬৭ সালের জুলাই মাসে দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে অধিগ্রহণ করে 'বি.ডি.আর’ কে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে লোকসানে চলার কারণে ’বি.ডি.আর’ এর প্রতি আগ্রহ হারায় দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে। ১৯৯৫ সালে এই রেল উঠিয়ে দেওয়া হয়। ভারতীয় রেল দফতরের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেন না বাঁকুড়া ও বর্ধমান জেলার বাসিন্দারা। তারা পুণরায় 'বি.ডি.আর’ রেল চালুর দাবি তুলে চলেন। দাবির বিষয়টি নিয়ে তারা বারে বারে ভারতীয় রেল দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণও করে যান।

পুরীতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, প্রবল ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ৩, রাজ্য জুড়ে শোকের ছায়া

কেন্দ্রে এনডিএ সরকার গঠিত হওয়ার পর অটল বিহারীবাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হন। সেই মন্ত্রী সভায় ভারতের রেলমন্ত্রী করা হয় তদানিন্তন এনডিএ সরকারের অন্যতম শরিক তৃণমূল কংগ্রেস দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রেলমন্ত্রী হওয়ার পর বি.ডি.আর’ কে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার সিদ্ধান্ত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উদ্যোগেই পুরানো ন্যারো গেজ লাইনটিকে ব্রড গেজ লাইনে রুপান্তরিত করার পরিকল্পনা গৃহীত হয় । ঠিক হয়,সাউথ ইস্টার্ণ রেলওয়ের অধীন ’বি.ডি.আর’ রেল লাইনটিকে পূর্ব বর্ধমানের মসাগ্রামে থাকা ইস্টার্ন রেলের হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার লাইনের সঙ্গে যুক্ত করার।পরিকল্পনা মত অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেলে কাজও শুরু হয়ে যায়।তারই মধ্যে কেন্দ্রে সরকার বদল ও রেলমন্ত্রী বদল ঘটলেও কাজে ব্যঘাত ঘটেনি। 

প্রথম দফায় বাঁকুড়া থেকে সোনামুখী পর্যন্ত ৪১ কিলোমিটার ব্রড গেজ লাইন তৈরির কাজ ২০০৫ সালে শুরু হয়। তারপর ২০০৮ সালে চালু হয় সোনামুখী থেকে পূর্ব বর্ধমানের রায়নগর পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রড গেজ লাইন।এরপর শুরু হয় রায়নগর থেকে মসাগ্রাম পর্যন্ত লাইন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ।দামোদর টপকে লাইন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম ও দাদপুরের  মাঝে দামোদরের উপর রেল সেতু তৈরি করা হয়।সেতু তৈরি হয়ে যেতেই লাইন রায়নগর থেকে মসাগ্রাম পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজও সম্পূর্ণ হয়ে যায়।

চূড়ান্ত বৃষ্টির বৃষ্টির চরম সতর্কতা! বাংলা জুড়ে তুমুল দুর্যোগ কতদিন? জানাল আলিপুর আবহাওয়া দফতর

প্রথম দিকে 'বি.ডি.আর’ রেল পথে ’ডি.এম.ইউ’ ট্রেন চলাচল করলেও এখন আর তা নেই।২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বাঁকুড়া-মসাগ্রাম পর্যন্ত রেল পথের বৈদ্যুতীকরণ কাজ সম্পূর্ণ হয়েযায়।একই সময়ে শুরু হয়ে যায় ’জংশন স্টেশনের’ মর্যাদা পাওয়া মসাগ্রাম স্টেশনকে নতুন রুপ দেওয়ার কাজ।২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষের দিক থেকে এই রেল পথে 'মেমু ট্রেন' চালু করা হয়। সর্বশেষ পর্যায়ে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে তৈরি হয় নতুন ইতিহাস। মসাগ্রাম জংশনে সাউথ ইস্টান রেলের অধীন বি.ডি.আর’ রেলের লাইনকে জুড়িয়ে দেওয়া হয় ইস্টার্ন রেলের অধীন হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার লাইনের সঙ্গে।এখন বাঁকুড়া থেকে ট্রেনে চেপে সরাসরি ১৮৫ কিলোমিটার দূরের হাওড়া স্টেশন পৌছে যাওয়া শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা মাত্র । ভারতের রেল দফতর রথযাত্রার পরদিন পুরুলিয়া থেকে বাঁকুড়া ভায়া মসাগ্রাম হয়ে হাওড়া যাবার ট্রেন পরিষেবা উদ্বোধন করায় রেল যাত্রায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হল। রাঢ় বঙ্গের বাসিন্দাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নেও এই রেল পথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। 

Indian Rail