রবিবার ষষ্ঠ দিনে প্রবেশ করল এনআরএসের জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। ১০ জুনসোমবার রাতে মহম্মদ সাইদ (৭৫) এর মৃত্যু এবং তৎপরবর্তী ডাক্তার নিগ্রহ ঘিরে যে বিক্ষোভের আগুন জ্বলেছিল এনআরএসে, এদিন সেই আগুনে ঘি ঢালল মৃতের পরিবার। ডাক্তারদের পাশাপাশি পুলিশের দিকেও অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে মৃতের পরিবার। সাইদের পরিবারের দাবি, সেদিনের ঘটনায় তাঁদের কয়েকজন প্রতিবেশীকে গ্রেফতার করা হলেও হামলাকারী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এমনকী মৃতের পরিবারের বিস্ফোরক অভিযোগ, ডাক্তাররা এই ঘটনাটিতে একটি "সাম্প্রদায়িক মোড়ক" যোগ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ট্যাংরার বিবি বাগান লেনের বাসিন্দা মৃত সাইদের নাতি তাইয়ুব হুসেন এদিন বলেন, "আমরা আমাদের পরিবারের একজনকে হারিয়েছি। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ডাক্তারদের হাতে মার খেয়েছি আমরাই, সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। এমনকী পুলিশ আমাদের পাঁচ প্রতিবেশীকে গ্রেফতার করে হাজতে রেখেছে। কিন্তু কোনও ডাক্তার কেন শাস্তি পেলেন না? দোষীদের অবিলম্বে শাস্তি পাওয়া উচিত"। তিনি আরও বলেন, " সেই দিন পাথরের আঘাতে একজন ডাক্তার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় আমরা অত্যন্ত ব্যাথিত। আমরা তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। কিন্তু আমরা এই আন্দোলন প্রত্যাহার করার আবেদন জানাচ্ছি। কারণ, এতে বহু মানুষ সমস্যায় পড়ছেন"।
আরও পড়ুন তৃণমূলে ফের ভাঙন! বিজেপিতে কাঁচরাপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান
উল্লেখ্য, মহম্মদ সাইদের মৃত্যু ঘিরে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে এনআরএসে। রোগী মৃত্যুর জেরে জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে মৃত রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই নিরাত্তার দাবিতে আন্দোলনে বসেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, মৃত সাইদের পরিবারের তরফ থেকে তিনজন ডাক্তারের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এনআরএসের এই ঘটনার জেরে রাজ্যের চিকিৎক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়।
আরও পড়ুন যে আন্দোলন জন্ম দেয় ‘জুনিয়র ডাক্তার’দের
এদিন মৃত সাইদের নাতি তাইয়াব ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, " সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে সব পরিষ্কার হবে। আমরা আমাদের প্রিয় মানুষকে হারিয়েছিছি। কারও মাথার ঠিক ছিলনা তখন। সেই সময় আমাদের মধ্যে থেকে একজন ডাক্তারদের হাত ধরে টানাটানি করে অনুরোধ করে রোগীকে একবার দেখার জন্য। তারপর পুলিশের সামনেই তাঁরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করেন। আমি দু'বার তাঁদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইলেও আমাদের ক্ষমা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন ডাক্তাররা। এমনকী হাসপাতাল থেকে আমার দাদুর মৃতদেহ বের করতে বাধা দেন তাঁরা। এরপর বাঁশের লাঠি, হকি স্টিক নিয়ে মারতে আসেন আমাদের। পুলিশের উপস্থিতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে"। পিতৃবিয়োগে মর্মাহত মহম্মদ শাব্বির (মৃত সাইদের পুত্র) জানান, "আমরা মনে করি হাসপাতালে আরও নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষকেও দেখতে হবে ডাক্তাররা রোগী এবং রোগীর পরিবারের সঙ্গে কী ধরনের ব্যবহার করছেন। তাঁদের মনে রাখা উচিত প্রিয়জন বিয়োগে একজন মানুষের মনের অবস্থা কেমন হতে পারে?"
আরও পড়ুন স্বাস্থ্য অধিকর্তার উপস্থিতিতেই বৈঠক চলছে এনআরএসে
সাইদের পরিবারের দাবি এই ঘটনাটিতে একটা 'সাম্প্রদায়িক রঙ' লাগানোর চেষ্টা চলছে। শাব্বির বলেন, "কেন মানুষ এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রঙ দিতে চেষ্টা করছে? এর পিছনে বিজেপির মদত রয়েছে। তারা হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে একটি বিভেদ রেখা টানতে চেষ্টা করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি"।
প্রসঙ্গত, মৃতের পরিবারের দাবি গত রবিবার মহম্মদ সাইদ অজ্ঞান হয়ে গেলে তাঁকে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার বিকেল ৫টায় হাসপাতাল থেকে তাঁদের ফোন করা হলে তাঁরা তৎক্ষণাৎ সেখানে পৌঁছান। তাঁদের বক্তব্য, "একটা ইঞ্জেকশন দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৪০ মিনিট দেরি করেছিল"। এমন বয়ানেই এদিন তাঁরা সরাসরি ডাক্তারদের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন। এমনকী তাঁদের দাবি, ডাক্তারদের হাত ধরে যারা টানাটানি করছে, তারা তাঁদের পরিবারের কেউ নয়, এমনকি পরিচিতও নয়"। বরং চার ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও কেন মৃতদেহ ছাড়া হল না, এই দাবি তুলেছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ ডাক্তাররা তেড়ে আসার পাশাপাশি পুলিশ তাঁদের ওপর লাঠিচার্য করে।
আরও পড়ুন স্নায়ুর লড়াইয়ে জয় যারই হোক, অচলাবস্থার দায় নেবে কে?
কিন্তু আন্দোলনকারী ডাক্তাররা তো দাবি করছেন, মৃতের পরিবারের তরফ থেকে এক ট্রাক লোক আনা হয়েছিল হাসপাতালে? এই প্রশ্ন উঠতেই তাইয়াব বলেন, " যিনি মারা গেছেন তিনি স্থানীয় মসজিদের ইমাম। সেই কারণেই তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে সবাই হাসপাতালে যায়। এটা সাধারণ ব্যাপার"।
Read the full story in English