Junior Doctors Strike: থ্রেট কালচার, স্বাস্থ্য সচিবের পদত্যাগ, হাসপাতালে যথাযথ নিরাপত্তা এই তিন বিষয়ে আজ বুধবার নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষ হল আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের। জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে এদিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন ২ জন স্টেনোগ্রাফারও। প্রায় আড়াই ঘন্টা পর শেষ হল রাজ্যের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক। চলছে কার্যবিবরণী লেখার কাজ। আজকের বৈঠকে কি জট কাটল? উঠবে কর্মবিরতি? গোটা দেশের নজর এখন সেদিকেই।
সূত্রের খবর, নবান্নের আজকে ইতিবাচক বৈঠক হয়েছে সরকার ও আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের মধ্যে। জানা গিয়েছে, আট দফার মধ্যে সাত দফা দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য সচিবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ছাড়া সবকটি দাবি মেনে নিয়েছে রাজ্য, এমনটাই সূত্রের দাবি। হাসপাতালের সুরক্ষা থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে খালি বেড বরাদ্দের বিষয়ে তথ্য প্রদানের পাশাপাশি থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে জুনিয়র চিকিৎসকদের।
এখন দেখার আজকের এই ইতিবাচক বৈঠকের পর কী সিদ্ধান্ত নেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আদৌ কী উঠবে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি? সুপ্রিম নির্দেশ মেনে পাশাপাশি রাজ্যের আহ্বান মেনে কাজে ফিরবেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা? এদিকেই নজর গোটা দেশের।
নবান্নে রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক জুনিয়র ডাক্তারদের। আজ মুখ্য সচিবের সঙ্গে আলোচনা হয় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের। পাঁচ দফা দাবির চার ও পাঁচ নম্বর দাবির উপর জোর দিয়েই আজকের এই বৈঠক বলে জানানো হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে। এদিকে রাজ্যের তরফে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টা বেজে ১৫ মিনিটে নবান্নে পৌঁছান জুনিয়র ডাক্তারদের ৩০ জনের প্রতিনিধিদল। এরপর থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে আজকের এই বৈঠক।
বন্যা পরিস্থিতি দেখতে বিপত্তি! নদীতে উল্টে গেল স্পিড বোট, অল্পের জন্য রক্ষা বিধায়ক-সাংসদের
ডাক্তারদের তরফে ৩০ জনের প্রতিনিধিদল আজ সন্ধ্যায় নবান্নে বৈঠকে অংশ নেন। প্যান জিবি বৈঠকের পর এমনই সিদ্ধান্ত জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে। থ্রেট কালচার থেকে শুরু করে হাসপাতালে ডাক্তারদের নিরাপত্তা একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে আজকের এই বৈঠকে। এর আগে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের বৈঠকে ডাক্তারদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মুখ্যসচিবের তরফে করা ইমেলেও দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজ যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিন আন্দলনে যাওয়ার আগে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেখানে বলা হয়েছে, "রাজ্য সরকার আন্দোলনের চাপে নতি স্বীকার করেছে। সরানো হয়েছে স্বাস্থ্য, পুলিশ আধিকারিকদের। অভয়ার বিচারের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টেও লড়ে চলেছি আমরা। সিবিআইও আমাদের চাপের কারণেই টালা থানার ওসি ও সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে। সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলিতে স্বাস্থ্যকর্মীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আমরা কাজে ফিরতে ভয় পাচ্ছি"।
এদিন জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে বলা হয়, "উপরোক্ত দাবি পূরণ না হলে কাজে ফিরতে পারব না তাও আমরা সরকারকে জানিয়েছি। আমরা চাইছি প্রতিটি মেডিকেল কলেজে রেস্ট রুম , বাথরুম, প্যানিক বোতাম, নারী পুলিশ কর্মী মোতায়েন করতে হবে। কলেজ ভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠনের দাবিও জানানো হয়েছে। হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলিতে রোগী পরিষেবাকে উন্নত করতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে কর্মী নিয়োগ, হাসপাতালের পরিকাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে। জনমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি কলেজে থ্রেট কালচারকে বন্ধ করতে হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা। কমিটি গঠন করতে হবে। গণতান্ত্রিক পরিসরকে বিস্তৃত করতে হবে হাউসস্টাফ নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে"। স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে সওয়াল করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে বসার দাবি মেনে নিল রাজ্য সরকার। বুধবার সন্ধেতেই নবান্ন সভাঘরে আন্দোলনকারী সঙ্গে দেখা করবেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সন্ধে ৬.৩০ মিনিটে ডাক্তারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়ে ই-মেল গিয়েছে আন্দোলনকারীদের কাছে। ৩০ জন প্রতিনিধিকে সন্ধে ৬.১৫ মিনিটের মধ্যে নবান্নে পৌঁছে যেতে বলা হয়েছে। মুখ্যসচিবের ই-মেল পেয়ে জেনারেল বডির বৈঠক শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করার পর বুধবার সকালেই মুখ্যসচিবকে ই-মেল করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ই-মেলে তাঁরা উল্লেখ করেন, তাঁদের দাবির কয়েকটি বিষয় এখনও সমাধান হয়নি। সেই দাবি সমাধানের আশাতেই মেল করেছেন আন্দোলনকারীরা। ই-মেলে তাঁরা রাজ্য সরকারের তরফে ইতিবাচক উত্তরের আশায় রয়েছেন বলে লেখেন।
মুখ্যসচিবকে পাঠানো ই-মেলে মূলত যে দুটি বিষয়ের উপর তাঁরা জোর দিয়েছেন সেগুলি হল, তাঁদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে চার এবং পাঁচ নম্বর দাবি এখনও মেটেনি। সেই নিয়ে বুধবার মুখ্যসচিবের সঙ্গে তাঁরা বসতে চান বলে জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ওই বৈঠকে রাজ্যের তৈরি করা টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের থাকার কথাও উল্লেখ করেছেন আন্দোলনকারীরা। তবে কর্মবিরতি বা ধরনা তোলার বিষয়ে ই-মেলে কিছু স্পষ্ট করেননি জুনিয়র ডাক্তাররা।
এবিষয়ে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, সরকারের তরফে কী উত্তর আসে তা দেখার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ। অর্থাৎ একথা প্রায় স্পষ্ট যে কর্মবিরতি এখনই তুলছেন না জুনিয়র ডাক্তাররা।
আরও পড়ুন আজই বৈঠক চাই, মুখ্যসচিবকে ই-মেল জুনিয়র ডাক্তারদের, কর্মবিরতি উঠছে কি?
কী লিখেছেন মুখ্যসচিব?
মুখ্যসচিবের তরফে জুনিয়র ডাক্তারদের পাঠানো ই-মেলে বলা হয়েছে, 'বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের নিরাপত্তা বিষয়ক আপনাদের দাবিদাওয়া রয়েছে তা বিবেচনা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছেন। আপনার নিশ্চয়ই অবগত যে, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এই মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা আবার আপনাদের কাজে ফেরার অনুরোধ করছি। আমি এবং টাস্ক ফোর্সের বাকি সদস্যরা আপনাদের ৩০ জন প্রতিনিধির সঙ্গে সন্ধে ৬.৩০টায় নবান্নের সভাঘরে বৈঠকে বসব। আপনাদের ৬.১৫ মিনিটের মধ্যে নবান্নে পৌঁছে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে।'