Advertisment

ত্রাতা 'বাপকে বলো', রিয়াধ থেকে বাড়ি ফিরল মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক

স্থানীয় সাংসদ, বিধায়কদের জানিয়েও সুরাহা মেলেনি বলেই দাবি পরিবারের।

author-image
Joyprakash Das
New Update
Bengal man missing in Riyadh, Baap Ke Bolo rescues him

মুর্শিদাবাদের ইকরোল গ্রামের যুবক দীর্ঘ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন সৌদি আরবের রিয়াধে।

বছর সাতাশের দিনমহম্মদ শেখ। মুর্শিদাবাদের ইকরোল গ্রামের এই যুবক দীর্ঘ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন সৌদি আরবের রিয়াধে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ওই যুবকের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। বিদেশে ছেলে নিখোঁজ, এই ভেবেই দিনরাত চোখের জল ফেলছিলেন তাঁর বাবা-মা। স্থানীয় সাংসদ, বিধায়কদের জানিয়েও সুরাহা মেলেনি বলেই দাবি। তবে শেষমেশ 'বাপ কে বলো'-র উদ্যোগে দিল্লিতে ফিরেছে দিনমহম্মদ। সে আজ, সোমবার রাতে নবগ্রামের ইকরোলের বাড়িতে ফিরছে।

Advertisment

মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের ইকরোলের বেশ কয়েকজন যুবক কাজের সন্ধানে সৌদিতে রয়েছেন। তাঁদেরই হাত ধরে মতলেব শেখ ও নরেজবান বিবির ছোটছেলে দিনমহম্মদ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের রিয়াধের একটি কোম্পানিতে কাজে যোগ দেয়। সব কিছু ভালই চলছিল কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন ঘটে দিনমহম্মদের জীবনে। কয়েক মাস পরেই বাড়ির সঙ্গে তার সমস্তরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কোনও ভাবেই তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরিবারের সদস্যরা চিন্তায় পড়ে যায়।

প্রতিবেশী হাইস্কুলের শিক্ষক মহাম্মদ কামাল হাসান ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'ওদের পরিবারের পক্ষে আমি বাপ কে বলোর পেজের সঙ্গে যোগাযোগ করি। দিনমহাম্মদ প্রথমে রিয়াধে একটা সংস্থায় কাজ করত। তারপর আর বাড়ির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না। অন্যত্র কাজ দেওয়ার কথা বললেও ও পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত। কান্দির আবু তালহা ওর ভিডিও তুলে ফেসবুকে ছেড়েছিল। সেই ছবি দেখে নিশ্চিত হয়ে আমরা ভিডিও কল করি। কিন্তু ও কথা বলতে চাইত না। তারপর আমরা বিধায়ক, সাংসদকে বলেছিলাম। কিন্তু সময় গড়িয়ে যাচ্ছিল। তারপর বাপ কে বলোতে জানানোর পর খুব দ্রুত সাড়া পাই। ভারতীয় দূতাবাস বলেছিল একটা জায়গায় ধরে রাখার ব্য়বস্থা করুন। ১৫ দিন সময় চেয়েছিল, কিন্তু ১৩ দিনেই কাজ করেছিল ভারতীয় দূতাবাস।' বাপ কে বলো যা কাজ করেছে তার জন্য় চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন বলে জানিয়েছেন মহাম্মদ কামাল।

আরও পড়ুন বগটুইকাণ্ডে বাড়ল নিহতের সংখ্যা, আরও সঙ্কটজনক অগ্নিদগ্ধ জারিনা বিবি

অ্যাসিস্ট্যান্স টু কমন পিপল ট্রাস্টের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার টিম বাপ কে বলোর অন্যতম সদস্য মাহাবুব আলাম বলেন, 'গত ২০ জানুয়ারি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর পেজের তরফ থেকে দিনমহাম্মদকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আমরা ইমেইল এবং হোয়াটসঅ্য়াপ-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করি দিনমহাম্মদ যে সংস্থায় প্রথমে কাজে যোগ দিয়েছিলেন সেখানে। কিন্তু ওই সংস্থার তরফ থেকে কোনও জবাব না পাওয়ায় আমরা রিয়াধের ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করি। সেখান থেকে সাড়া মেলে এবং তাঁরা মাদাদ পোর্টালে একটা কমপ্লেইন রেজিষ্টার করেন। কিন্তু তাতেও কোনও তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রীংলা, সৌদি আরবের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অওসাদ সঈদ এবং উপসাগরীয় অঞ্চলের জয়েন্ট সেক্রেটারি বিপুলের সঙ্গে মেইল এবং হোয়াটসঅ্যাপ-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। তার ঠিক পরের দিনই আমাদের কাছে দূতাবাস থেকে ফোন আসে।'

রিয়াধে কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পাশাপাশি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন দিনমহাম্মদ। সেটাই ছিল সব থেকে ভয়ের, বলেন মাহাবুব আলাম। এদিকে দূতাবাস থেকে যোগাযোগ করার পর সমগ্র বিষয়টি জানানো হয়। দূতাবাসের তরফে জানানো হয়, যে সংস্থার কথা বলা হয়েছিল সেখানে ওর ভিসা দেখাচ্ছে না। এখন তা অন্য এক কোম্পানিতে দেখাচ্ছে। মাহাবুব বলেন, 'তা সত্বেও তিনি আমাদের আশ্বাস দিলেন দিনমহাম্মদকে তাঁরা দ্রুত খুঁজে বের করবেন। উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে সমস্যাটির সমাধান করবেন।' প্রায় ৪ দিন পরে রিয়াধে মুর্শিদবাদের অন্য একজনের মারফত জানা যায় মানসিক পরিস্থিতির জন্য় দিনমহাম্মদকে অন্য সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। ফের তা ভারতীয দূতাবাসকে জানানো হয়।'

অবশেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়। ২ মার্চ জরুরি ভিত্তিতে ব্লাঙ্ক পাসপোর্ট এর আবেদন করে ৬ মার্চ সে পাসপোর্ট হাতে পায়। ১৩ মার্চ দিনমহাম্মাদ এর ফাইনাল এক্সিট ভিসা ইস্যু হয়।' ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এবং রিয়াধে অবস্থিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ধন্য়বাদ জানিয়েছেন তিনি। ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় দিল্লিতে পৌঁছায় দিনমহাম্মদ। নবগ্রামে ইকরোলে পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষা করছে দিন মহাম্মদের ঘরে ফেরার জন্য।

West Bengal UAE
Advertisment