scorecardresearch

মোদীর রাজ্যে কাজে গিয়েছিল বাংলার কিশোর, জাতীয় সড়কের ধারে প্লাস্টিকে মোড়া দেহ উদ্ধার

মৃতের পরিবারের আশঙ্কা গুজরাটের রাজকোটের কারখানা কর্তৃপক্ষ দেবদাসকে প্রাণে মেরে দিয়ে রাতের অন্ধকারে দেহ পালসিটে ফেলে দিয়ে পালিয়ে গেছে।

Bengal minor migrant worker's body found near Burdwan's highway
রবিবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার পুলিশ পালসিটে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধার থেকে ওই পরিযায়ী শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করে। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

রোজগারের জন্য বাংলার যুবকদের ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া নিয়ে অব্যাহত রয়েছে শাসক ও বিরোধী তরজা।এই অবস্থার মধ্যেই প্লাস্টিক মোড়া অবস্থায় বাংলার জাতীয় সড়কের ধার থেকে উদ্ধার হল গুজরাটে কাজে যাওয়া এক বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের মৃতদেহ। মৃতের নাম দেবদাস মান্ডি (১৭)। রবিবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার পুলিশ পালসিটে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধার থেকে ওই পরিযায়ী শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করে। যা নিয়ে পালসিট এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃতের পরিবারের আশঙ্কা গুজরাটের
রাজকোটের কারখানা কর্তৃপক্ষ দেবদাসকে প্রাণে মেরে দিয়ে রাতের অন্ধকারে দেহ পালসিটে ফেলে দিয়ে পালিয়ে গেছে। জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন বলেন,’মৃতর পরিচয় উদ্ধার হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে’।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,হুগলি জেলার মগরা থানার দিগসুই গ্রামের বাসিন্দা দেবদাস মাণ্ডি। তাঁর দাদা দেবরাজ মাণ্ডি সোমবার মেমাারি থানায় হাজির হয়ে বলেন, বাড়িতে বাবা-মা, ঠাকুমা সবাই আছে। ভাই দেবদাস উপার্জনের আশায় বছর খানেক আগে গুজরাটে কাজে যায়। সে সেখানকার রাজকোটে একটি সিটি গোল্ডের কারখানায় কাজ করত। গত বৃহস্পতিবার কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে ফিরাজ নামে এক ব্যক্তি হঠাৎই বাড়িতে ফোন করে জানায়, ’রাতে খাওয়া দাওয়ার পর দেবদাস অসুস্থ হয়ে পড়ে । তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়েছে। শবদেহবাহী গাড়িতে করে দেবদাসের মৃতদেহ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান’।

কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে এমন ফোন পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন মাণ্ডি পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা দেবদাসের নিথর দেহ বাড়িতে আসার প্রতিক্ষায় দিন গুনতে থাকেন। বিভিন্ন জায়গায় শবদেহবাহী গাড়ি আছে,খুব শীঘ্র ওই গাড়ি বাড়িতে পৌছে যাবে বলে গত চারদিন ধরে তাঁদের বলা হচ্ছিল। কিন্তু মৃতদেহ বাড়িতে ফেরার পরিবর্তে রবিবার রাতে প্লাস্টিক মোড়া অবস্থায় পড়শি জেলা পূর্ব বর্ধমানে জাতীয় সড়কের ধারে পড়ে থাকতে দেখা যায়। মেমারি থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে
ময়নাতদন্তের জন্য সোমবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ মর্গে পাঠায়।

আরও পড়ুন লালন শেখের মৃত্যু মামলা: হাইকোর্টে মুখ পুড়ল CBI-এর

পরিবারের অভিযোগ,দেবদাসের কাজের পারিশ্রমিকের টাকা গত কয়েক মাস ধরে মালিকের কাছে চেয়েও পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি দেবদাসকে বাড়িতেও ফোন করতে দেওয়া হত না। এইসবের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবার সদস্যরা আশঙ্কা করছেন, ’কর্মস্থলেই নিশ্চয়ই দেবদাসকে খুন করা হয়েছে। তাই দায় এড়াতে ওরা রাতের অন্ধকারে পালসিটে জাতীয় সড়কের ধারে দেবদাসের মৃতদেহ ফেলে দিয়ে পালিয়েছে’।

পরিবার এমনসব অভিযোগ করলেও এনিয়ে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ মেমারি থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে মৃত্যুর কারণ বিষয়ে নিশ্চিত হবার জন্য পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, “এই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী বাংলা ছেড়ে ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে যেতে নিষেধ করেন। ভিন রাজ্যে যে পরিযায়ী শ্রমিকদের কোনও নিরাপত্তা নেই তা এই ঘটনা আরো একবার প্রমাণ করে দিল। মৃতদেহ সসম্মানে বাড়িতে পৌছে না দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যাওয়াটা যথেষ্টই অসম্মানের। এমনটা হওয়ার পিছনে কি রহস্য আছে তারও তদন্ত হওয়া জরুরী বলে দেবু টুডু মন্তব্য করেছেন“।

পাল্টা উত্তরে জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,“বাংলায় শিল্প নেই ,তাই কর্মও নেই। সেই কারণেই বাংলার যুবকদের কাজের সন্ধানে ভিন রাজ্যে যেতে হচ্ছে।“ এইসবের জন্য মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র রাজ্য সরকারের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, “রাস্তায় একজন মৃতদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে গেল, আর পুলিশ তার নাগালই পেল না।“ এটাও পুলিশি ব্যর্থতা বলে মৃত্যুঞ্জয়বাবু দাবি করেছেন।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Westbengal news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Bengal minor migrant workers body found near burdwans highway kin alleges murder