দার্জিলিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। আলিপুরদুয়ারে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। হাওড়ায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি জুবিন ইরানি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মাকালীর ছবিসহ সাধুসন্তদের নিয়ে ছুটলেন রাজভবনে। বাম আমলে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একাধিকবার রাজ্যপালের কাছে দরবার করতে গিয়েছেন। এখন সেই পথে চলেছেন শুভেন্দু। এদিন দলের কান্ডারীদের পথেই হাটলেন আলিপুরদুয়ারে অভিষেক, হাওড়ায় স্মৃতি ইরানি। একজন দলীয় কর্মীর বাড়িতে মধ্য়হ্নভোজন সারলেন, আর একজন শিশুকে কোলে তুলে আদর করলেন। ঢুকে পড়লেন সাধারণের বাড়িতে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন ধূপগুড়িতে জনসভায় যাওয়ার আগে পথে ময়নাগুড়িতে বাজারের মধ্যে নেমে পড়েন। সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনেন। মুহূর্তে ফোন করে কৈফিয়ত তলব করেন জেলা পরিষদের সদস্যের। দেখা যায় ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়ে আলতো আদর করছেন অভিষেক। এক কিশোর আবার অভিষেকের সঙ্গে সেল্ফিও তোলে। এক সাধারণ পরিবারে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে কাপ-প্লেট ধরে চা-পানও করেন তৃণমূলের যুবরাজ। এদিনের সফরে তিনি মাকালীকে হাঁটুগেড়ে প্রণামও সেরেছেন।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই এই ধারায় জনসংযোগ বজায় রেখেছেন। বিরোধীনেত্রী থাকাকালীন বা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও সরাসরি এমন জনসংযোগ দেখে আসছে রাজ্যবাসী। এদিনও পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রী ফুচকা তৈরি করে বাচ্চাদের হাতে তুলে দিলেন। রাজনৈতিকে মহলের মতে, এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও তৃণমূল সুপ্রিমোর অনুকরণে সাধারণের সঙ্গে মিশলেন। 'আমিও তোমাদেরই লোক' বোঝাতে চাইলেন অভিষেক। ভবিষ্যৎ জানান দেবে কতটা সফল তাঁর এই জনসংযোগ।
বাংলা দখল করতে নানা পন্থা অবলম্বন করেছিল বিজেপি। এর আগে ধাপে ধাপে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এসেছেন এরাজ্যে। এবারও দফায় দফায় তাঁরা আসতে শুরু করেছেন। তারইমধ্যে তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বঙ্গে এসে মধ্যাহ্নভোজন সেরেছেন দলিতসহ একাধিক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে। কখনও উত্তরবঙ্গ, কখনও জঙ্গলমহল আবার কখনও দক্ষিণবঙ্গে। এমনও দেখা গিয়েছে যে, বিজেপি কর্মীর বাড়িতে আহার সেরেছেন অমিত শাহ, সেই কর্মী তারপরি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কর্মীর বাড়িতে ভোজন রাজনীতি শোরগোল ফেলে দিয়েছিল বাংলায়। পরবর্তীতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডাও সেই পথ অবলম্বন করেছেন। এবার বাংলায় সেই ভূমিকায় দেখা গেল কেন্দ্রীয়মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে। হাওড়ার বালিটিকরি এলাকায় বিজেপি কর্মীর বাড়িতে আহার সারলেন স্মৃতি ইরানি। সেই মাটির থালার কলাপাতা, মাটির বাটি, মাটির ভাড়ে পানীয় জল। খাবার পরিবেশনেও রয়েছে অদ্ভুত মিল।
রাজনৈতিক মহলের মতে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা স্মৃতি ইরানিরা শীর্ষনেতৃত্বের অনুকরণেই জনসংযোগ মন দিয়েছেন। এটা সাধারণ মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া খুব জরুরি 'আমরা তোমাদের মতোই সাধারণ'। পাশাপাশি নানা কারণে স্থানীয় মানুষজনের সরকার বা দলের প্রতি ক্ষোভ থাকলেও সরাসরি শীর্ষ নেতৃত্ব কথা বললে তা সামাল দিতেও এই পন্থা অনেকটা কার্যকরী বলে মনে করছে অভিজ্ঞমহল।