Advertisment

Exclusive: সংবিধান হাতেই 'মহিরুহ' পতনের স্বপ্নে বিভোর ভাইজান আব্বাসের 'একা কুম্ভ' নওশাদ

রাজ্যের রাজনৈতিক গতিবিধির উপর নজর রয়েছে ভাইজানের। চলছে কৌশল রচনার কাজ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকারারে কী বললেন বিধায়র নওশাদ?

author-image
Joyprakash Das
New Update
kolkata police placed chargesheet against isf naushad and others

আব্বাস সিদ্দিকী ও বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী।

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের মুখে নতুন দল গঠন করেছিলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। তার আগে তাঁর বাড়িতে হানা দিয়েছিল রাজ্যপুলিশ। তা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন আব্বাস সিদ্দিকী। মূলত ইন্ডিয়ান সেকুলর ফ্রন্ট তথা আইএসএফ-এ মুসলিম, আদিবাসী ও দলিতদের আহ্বান করেছিলেন ভাইজান। ভাইজান হুঙ্কার ছেড়েছিলেন, বাংলায় আইএসএফ সরকার গঠনের নির্ণায়ক শক্তি হবে। নির্বাচনের ফলপ্রকাশ হতে দেখা গেল একমাত্র ভাঙড়ে জয় পেয়েছে আইএসএফ-এর চেয়ারম্যান আব্বাসের ভাই নওশাদ সিদ্দিকী। দলের ভুত-ভবিষ্য়ত নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায় মুখ খুললেন নওশাদ সিদ্দিকী।

Advertisment

প্রশ্ন- মুসলিম, দলিতরা দলে আসছে?

নওশাদ- আমরা দেখতে পাচ্ছি  যত দিন যাচ্ছে আদিবাসী, মুসলিম ও দলিত সম্প্রদায় আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ আমরা মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলছি। নির্দিষ্ট কোনও ধর্মকে প্রমোট করতে আমরা আসিনি। আমরা আনিসের হত্যা নিয়েও যেমন প্রতিবাদ করেছি তেমনই শিকারি মুরার পুলিশ কাষ্টডিয়াল ডেথ নিয়েও প্রতিবাদ করেছি। রুমা ওঁরাও, বিষ্ণুপুরে দলিত যুবকের হত্যার প্রতিবাদ করেছি। যেখানে অত্যাচার হচ্ছে সেখানে আমাদের সাধ্যমত প্রতিবাদ করছি। পিছিয়ে বর্গের মানুষরা প্রতিনিয়ত ডিপ্রাইভ হচ্ছে। তাঁদের অধিকার ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে লড়াই করছি।

প্রশ্ন- পঞ্চায়েত নির্বাচনে কতটা প্রস্তুত আইএসএফ?

নওশাদ- বুথ লেভেলে স্ট্রং না হলে পঞ্চায়েতে সমস্যা। আমরা যেখানে যেখানে প্রার্থী দেব মনে করছি সেথানে বুথ পর্যায়ে আমাদের সংগঠন মজবুত আছে। সারা রাজ্যে প্রার্থী দেব তা নয়। সর্বোচ্চ আসন জিতিয়ে আনার চেষ্টা করব।

প্রশ্ন- মূলত কোন জেলাগুলিতে নজর বেশি রয়েছে?  

নওশাদ- উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মালদা, দিনাজপুর, কোচবিহার, বীরভূমের একাংশ, বর্ধমান, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, দুই মেদিনীপুর।

প্রশ্ন- রাজ্য সম্মেলনে কি আলোচনা হবে?

নওশাদ- আগামী পঞ্চায়েতে কীভাবে লড়াই হবে, কীভাবে দল চলবে, কি লক্ষ্য থাকবে পাশাপাশি পঞ্চায়েতে ক্ষমতা পেলে মানুষকে কিভাবে পরিষেবা দেব। বিষয়গুলিকে সামনে রেখে আমাদের সম্মলেন হতে চলেছে। রাজ্য সম্মলনের পর আরও মানুষের কাছে পৌঁছাব। নির্বাচিত না হয়েও কিভাবে মানুষের পাশে থাকা যায় তা দেখতে হবে।

প্রশ্ন- তৃণমূলকে হারাতে নীচুতলায় রাম-বাম জোটের মহড়া চলছে বিভিন্ন জায়গায়। কি বলবেন?

নওশাদ- প্রথম কথা পূর্ব মেদিনীপুরে যে রাম-বাম জোট হচ্ছে তাতে দুরকম মতামত আছে। তবে আমরা কোনও মতে বিজেপির সঙ্গে জোট করব না। বিজেপি ও তৃণমূল ছাড়া যে কোনও সেকুলার দলের সঙ্গে প্রয়োজনে রাজনীতির জন্য তৃণমূল ও বিজেপিকে হারানোর জন্য হাত মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করব। অন্যথায় আমাদের এককভাবে লড়াই করার মতো শক্তি বা মানসিকতা তৈরি আছে। সমমানসিকতার দল থাকলে জোটের কথা ভাবা যাবে।

প্রশ্ন- বিধানসভায় জোট হয়েছে, পঞ্চায়েতে বামেদের সঙ্গে জোট নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে?

নওশাদ- আমাদের তেমন ভাবে জোট নিয়ে কোনও কথা হয়নি। বিধানসভা নির্বাচনে জোটের পর যে যার মতো কর্মকান্ড করছে। আগামী দিনে কথা বলতে এলে অবশ্যই তা বিবেচনা করা হবে। রাজ্য কমিটি, সেন্ট্রাল কমিটি আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত নেবে চেয়ারম্যান হিসাবে আমি তা মানতে বাধ্য।

প্রশ্ন- ভোটের আগে ভাইজান বলেছিলেন, এরাজ্যে নির্ণায়ক শক্তি হবে। আইএসএফ পেয়েছে সাকুল্যে ১টি আসন। মনোবল কোন জায়গায় দাঁড়িয়েছে?

নওশাদ- আমাদের মনোবল আরও বেড়েছে। কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছিল বিজেপি ও তৃণমূল যৌথ ভাবে। তার বাইরে আইএসএফকে সাড়া ৮ লক্ষ মানুষ সমর্থন করেছে। আর সংযুক্ত মোর্চাকে আরও বেশি মানুষ সমর্থন করেছে। এই বাইনারি ভেঙেছে মানুষ। আমরা দেখেছি বিভিন্ন জায়গায় কিভাবে ভোট গণনা হয়েছে। আমাদের মনোবল যতদিন যাচ্ছে বাড়ছে। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ যুক্ত হচ্ছে।

প্রশ্ন- এআইএমএম প্রধান আসাউদ্দিন ওয়েসি বিধনসভা ভোট-পর্বে এসেছিলেন ফুরফুরা শরিফে। তাঁর সঙ্গে ফের কী যোগাযোগ হচ্ছে?

নওশাদ- আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে কোনও আলোচনা হয়নি। তবে যে কোনও দল যে কোনও জায়গা থেকে এসে লড়াই করতে পারবে। আমরা কাউকে আটকাতে পারব না। সেটা উচিতও নয়। নির্বাচন কমিশনের গাইড লাইন মেনে কেউ লড়াই করলে কোনও সমস্যা নেই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যে যার মতামত রাখবে সাধারণ ভোটাররা ভোট দেবে। তবে আমাদের সঙ্গে জোট নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।

প্রশ্ন- রাজ্যে একাধিক ইস্যু রয়েছে, সেখানে আন্দোলনে কোনও খামতি আছে?

নওশাদ- দেখুন এর থেকে বড় আন্দোলন অবশ্যই নামানো যায়। মানুষ আজকে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন সক্রিয় হচ্ছে সেখানেই শাসক দলের চাপ আসছে। শাসকদলের দুষ্কৃতীদের মাঠে নামিয়ে সাধারণ মানুষ, আইএসএফ কর্মী ও সমর্থকদের ভয় দেখানো হচ্ছে। আন্দোলনকে ছোট করার চেষ্টা হচ্ছে। তারপরেও এই ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করে আন্দোলন করলে পুলিশকে দিয়ে তা রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুতরাং আমরা আমাদের ক্ষমতা মতো আগামী দিনে আরও বড় আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন- ভাঙড়ে কাজ করতে গিয়ে কোনও অসুবিধা হচ্ছে?

নওশাদ- বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শাসকদলের নেতারা নানা মন্তব্য করছে।  নির্বাচিত প্রধান বলছে মাথায় মারবে না অন্যত্র মারবেন। মাথায় মারলে কেস হয়ে যায় জানো না। এই প্রধানই বলেছিল ১০০ দিনের কাজ করতে হলে তৃণমূলের ঝান্ডা ধরতে হবে। এই ধরনের অসাংবিধানিক কথা বলে বেড়াচ্ছে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব যাই বলুক মাঠে-ঘাটের নেতা-নেত্রীরা মানে না। নিজের সাম্রাজ্যে করে-কম্মে খাচ্ছে। দল ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

প্রশ্ন- পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল নেতারা তো হুঙ্কার ছেড়়ে চলেছেন। কি বলবেন?

নওশাদ- এই ভাষাগত আক্রমণ কোনও ভাবেই বরদাস্ত করি না। করব না। আমরা গণতান্ত্রিক ভাবে দেশ সেবা, জণগনের সেবার জন্য। রাজনীতিটা রোজগারের জায়গা করে নিয়েছে বলে এই ধরনের অবাঞ্ছিত মন্তব্য করছে। সত্যি যদি রাষ্ট্র সেবার চিন্তা থাকত তাহলে এসব মন্তব্য করত না।

প্রশ্ন- আনিস-হত্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত তদন্ত করে নিষ্পত্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন…..

নওশাদ- উনি অনেক কিছু বলেন, আনিস হত্যা নিয়ে আইনি লড়াই যেমন করছি, তেমনি আইনের বাইরেও লড়াই করছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক সময় অনেক কথা বলেছেন কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে বিস্তর ফারাক আছে। ভোটের আগে বলেছিলেন ডাবল ডাবল চাকরি দেব। এখন ডাবল গ্রেফতার দেখতে পাচ্ছি। তো উনি সেই  সময় জনমানসের ক্ষোভটা আটকে রাখার জন্য যাতে তা ছড়িয়ে না পড়ে তাই বলেছিলেন। আশা করব তাঁর দফতরের মাধ্যমে আনিস সঠিক বিচার পাবে।

প্রশ্ন- সংবিধানের বই নিয় আপনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুলিশকে কি বোঝানো যাচ্ছে?

নওশাদ- বোঝানো যাবে না কেন? আমাদের হাতে সংবিধান আছে, আমরা কেন আশাহত হব? হয় তো পুলিশ আজকে বুঝছে না, কালকে বুঝতে বাধ্য হবে। নওশাদ সিদ্দিকী একা সংবিধান পড়ছে বুঝছেন না, বাকি বিরোধীরা যাঁরা আছে, যাঁরা সংবিধানকে মান্যতা দেয় সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পুলিশ কেন প্রশাসনের যে কোনও কর্তাদের বোঝায় তখন মানতে বাধ্য হবে। হয় তো আজকে আমার কথাটা মানছে না আমি একা বলে আমার মতো আরও ২০ জন যখনের ফোর্স তৈরি হবে তখন মানতে বাধ্য হবে। আমি এখনও বলতে বাধ্য হচ্ছি দিনের শেষে আমার সংবিধান জয় হবে। অসাংবিধানিক, অনৈতিক কাজ করছেন তাঁরা পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হবে।

প্রশ্ন- দলের প্রতি নজর রাখছেন ভাইজান?

নওশাদ- অবশ্যই। তিনি আমার দলের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর সবসময় নজরে আছে। আমাদের কমিটি কি করছি না করছি তা তাঁর পর্যবেক্ষণে আছে

tmc bjp Mamata Banerjee Bhangar CPIM West Bengal Abbasuddin Siddiqui ISF naushad siddiqui
Advertisment