ভাটপাড়ায় দুষ্কৃতী-পুলিশের গুলির লড়াইয়ে প্রাণ খোয়াল ১৭ বছর বয়সি রামবাবু সাউ। বৃহস্পতিবার দুপুরে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠা কাঁকিনাড়ার কাছারি রোডে প্রাণ গেল ওই ফুচকা বিক্রেতার। রামবাবুর পরিবারকে ঘিরে ছিলেন কাছারি রোডের প্রতিবেশীরা। তাঁদের দাবি, কেন পুলিশের লক্ষ্য হয়ে উঠলেন নিরীহ মানুষ? রামের মৃত্যুতে পুলিশকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন তার পরিবার। রামের কাকা মুন্না বলেন, "আমার ভাইপোর দোষটা কোথায়? ও তো কোনওদিন রাজনীতি করেনি। ফুচকা বিক্রি করে সংসার চালাতো। কেন কাঁকিনাড়া বাজারে গুলি চালায় পুলিশ? মুসলিম প্রভাবিত এলাকাতেই বোমা ও গুলিবর্ষণ করা হয়।"
রামবাবুর এই মৃত্যুতে কার্যত স্তম্ভিত তার মা রেখা সাউ। ছেলের এই মৃত্যুকে কোনওভাবেই মেনে নিতে পারেন নি তিনি। শোকাহত মা বারবার বলছেন, "আমার ছেলে মরে নি। দূরে কোথাও আছে। কালকে নিশ্চয়ই ও চলে আসবে।" তিন সন্তানের মধ্যে এখন রাহুল (৮) এবং সন্দীপ (২০) তাঁর দায়িত্বে। বড় ছেলে রামের এহেন মৃত্যুকে এখনও বাস্তব বলে মেনে নিতে পারে নি সাউ পরিবারের কেউই।
আরও পড়ুন: ফের বোমাবাজি থমথমে ভাটপাড়ায়!
উল্লেখ্য, কাছারি রোডের এই বস্তিতে বেশিরভাগই হিন্দিভাষীদের বসবাস। হিংসার জেরে প্রাণ খুইয়েছেন ধর্মবীর সাউ (৪০) নামে অপর এক ফুচকা বিক্রেতা। তাঁর মৃত্যুও মেনে নিতে পারেন নি তাঁর স্ত্রী, ১৪ বছরের পুত্র এবং ১২ বছরের কন্যা। ধর্মবীর সাউয়ের ভাই রাজকুমার সাউ বলেন, "পুলিশের যদি গুলি ছুড়তেই হয়, তাহলে শূন্যে গুলি ছুড়ল না কেন? কেন নিরীহ মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হল? আমাদের পরিবারের কেউই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। যে পুলিশ এই ঘটনা ঘটিয়েছে তার শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।" রাজকুমার বলেন, "ধর্মবীরের সন্তানদের পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাব।"
আরও পড়ুন: চিটফান্ড কেলেঙ্কারি তদন্তে রোজভ্যালি-কর্তাকে ফের সিবিআই-এর জিজ্ঞাসাবাদ
বাসিন্দাদের দাবি, নির্বাচনের পর থেকেই অশান্তের আবহে দিন কাটাচ্ছে ব্যারাকপুর পুরসভার অন্তর্গত ভাটপাড়া বিধানসভা এলাকার এই অংশ। এমনকি ভোটের দিন ব্যারাকপুরের নির্বাচন, এবং ভাটপাড়ার উপনির্বাচন ঘিরেও চলে তুমুল বিক্ষোভ। এক সংবাদপত্র বিক্রেতা কেশর সাউয়ের কথা, "ভোটের পর থেকে অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেস এখানে হেরে যাওয়ার পরেই হিংসার ঘটনা আরও বেড়েছে। ভাটপাড়া এলাকা থেকে কিছু মানুষ কাঁকিনাড়ায় এসে গন্ডগোল বাঁধানোর চেষ্টাও করে যাচ্ছে। গতকাল যখন বাজার করছিলাম, ঠিক সেই সময় পুলিশ আমাদের দিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ঘটনায় জখম পাঁচজন এখনও হাসপাতালে।"
হিংসার জেরে এলাকায় বিশাল পুলিশ এবং র্যাফ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। রুট মার্চ জারি হয়। এমনকি ভাটপাড়া, জগদ্দল এবং সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারাও জারি করা হয়। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জগদ্দল-ভাটপাড়া এলাকায় বন্ধ করা হয় ইন্টারনেট পরিষেবাও। ভুল খবর, উস্কানিমূলক কোনও খবর যাতে না ছড়ায় তাই এই সিদ্ধান্ত, জানায় জেলা প্রশাসন।
Read the full story in English