দেখাই হল না বাবা-মেয়ের। ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিল সদ্যোজাতের বাবার। কোচবিহারের দেওয়ানবশ গ্রামে শোকের ছায়া। বৃহস্পতিবার জয়পুর থেকে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন সুভাষ রায়। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সুভাষের। শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম।
কোচবিহারের দেওয়ানবশ গ্রামেরই যুবক সুভাষ রায়। বছর ছাব্বিশের যুবক কর্মসূত্রে থাকতেন রাজস্থানের জয়পুরে। সেখানে একটি কেবল তার তৈরির কারখানায় কাজ করতেন গত ১৫ বছর ধরে। তাঁর পরিবারে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা, মা, বউ ও তাঁর দুই ছেলে ও আড়াই মাসের কন্যা। গত ৬ মাস আগে তিনি ছুটি নিয়ে শেষবার এসেছিলেন গ্রামের বাড়িতে। আবার ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসছিলেন নিজের সদ্যোজাত কন্যাকে দেখতে। সুভাষের বাড়ি ফেরা নিয়ে পরিবারের সকলে খুব আনন্দেই ছিলেন। তবে সুভাষ ঘরে ফিরল না।
জানা গিয়েছে, বিকানে-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের ১০ নম্বর কোচে চড়ে কোচবিহারে ফিরছিলেন সুভাষ রায়। বিকেল ৫ টা নাগাদ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিকানের এক্সপ্রেস। ট্রেনের শৌচাগার থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয় সুভাষের দেহ। টিভিতে দুর্ঘটনার খবর দেখার পরেই বারবার সুভাষের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেন পরিবারের সদস্যরা। তবে মোবাইল ফোন বেজে গেলেও তাঁর সঙ্গে কথা না হওয়ায় উগ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
সুভাষের দাদা সুবল রায় ভাইয়ের খোঁজ নিতে গাড়ি ভাড়া করে ছোটেন দুর্ঘটনাস্থলে। সেখানে গিয়ে ভাইয়ের খোঁজ না মেলায় প্রথমে ময়নাগুড়ি গ্রামীন হাসপাতাল ও পরে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যান তিনি। জলপাইগুড়ি হাসপাতালে গিয়েই শায়িত অবস্থায় তাঁর ভাইয়ের দেহ দেখতে পান সুবল।
আরও পড়ুন- ট্রেনের ইঞ্জিনের ত্রুটিতেই ময়নাগুড়িতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, এমনই দাবি রেলমন্ত্রীর
সুভাষের বৃদ্ধ মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ''বিকেল চারটে নাগাদ শেষবার কথা হয় সুভাষের সঙ্গে। খুব আনন্দ নিয়ে ও বাড়ি ফিরছিল। এই প্রথম আড়াই মাসের মেয়েকে ও দেখত। মেয়ের জন্য পোশাক, খেলনা কিনে আনছিল ছেলে। আমার জন্য নিমকি কিনে ফিরছিল ছেলে।''
এদিকে, শুক্রবার সকালে সুভাষের দেহ শনাক্ত করার জন্য রেলের তরফে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর বউকে। সেখানেই ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে মরদেহ। তরতাজা ছেলে অকাল মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম। সুভাষের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর স্ত্রীকে রেলে চাকরির দাবি জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবারের মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কোচবিহারেরই চিরঞ্জিত বর্মন নামে আরও এক যুবকের। ওই যুবকও জয়পুরে পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন।