Birbhum missing adivasi woman: দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছর পরে খোঁজ মিলল নিখোঁজ আদিবাসী মহিলা রূপালি হেমরমের। ২০০১ সালের ১৬ জুন বীরভূম জেলার লাভপুর থানার অন্তর্গত লাঘাটা গ্রামের আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা রূপালি হেমরম নিখোঁজ হয়ে যান। সেই সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও মেলেনি তাঁর কোনও হদিস। ইতিমধ্যে রূপালির প্রয়াণের সমস্ত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। অবশেষে এক ভিনরাজ্যের ফোন কল নতুন করে আশার আলো দেখাল রূপালির পরিবারকে।
মঙ্গলবার দুপুর প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ লাঘাটার স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী সুবীর মণ্ডলের মোবাইলে আসে এক অচেনা নম্বর থেকে ফোন। প্রথমে হিন্দিতে কথা হওয়ায় এবং ভিনরাজ্যের নম্বর দেখে কিছুটা দ্বিধায় পড়লেও পরে ফোন রিসিভ করেন তিনি। জানা যায়, ফোনটি করা হয়েছে রাজস্থানের ভরতপুর জেলা থেকে। গুগল ম্যাপে সার্চ করে তারা লাঘাটার এই হোটেলের নম্বর সংগ্রহ করেছে।
ফোনে থাকা ব্যক্তি নিশ্চিত হতে চান, এটি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর থানার লাঘাটা গ্রাম কিনা। কথোপকথনের একপর্যায়ে উঠে আসে রূপালি হেমরমের নাম। তখন সুবীর মণ্ডল ছবি আদানপ্রদান করেন ও রূপালির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভিডিও কলে কথা হয় রূপালির স্বামী বিশু হেমরম ও তাঁর সন্তানদের সঙ্গে। তাঁরা নিশ্চিত করেন, আশ্রমে থাকা মহিলাই রূপালি হেমরম।
জানা গেছে, বর্তমানে রূপালি হেমরম রয়েছেন রাজস্থানের ভরতপুর জেলার ‘আপনা ঘর’ নামক একটি আশ্রমে। মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় আশ্রমে পৌঁছানোর পর, ধীরে ধীরে নিজের কিছু পরিচয় মনে পড়ে তাঁর। এই সূত্র ধরেই আশ্রম কর্তৃপক্ষ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন।
এদিকে রূপালির খবর পাওয়ার পরই চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা এলাকায়। জানা যায়, দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকায় রূপালির এক সন্তানের মৃত্যুর পর রূপালিরও প্রয়াণের সমস্ত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। বর্তমানে রূপালির বয়স ৬০ বছরের বেশি।
খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রূপালির পরিবার ও স্থানীয়রা লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি তৎক্ষণাৎ রাজস্থানের আশ্রম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, একটি প্রতিনিধি দল রাজস্থানে পাঠানো হবে।
আজই রওনা হয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি দল, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ নিজে। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন রূপালির পরিবারের সদস্য, আদিবাসী সেলের নেতা নাড়ু হেমরম এবং আরও কয়েকজন স্থানীয় প্রতিনিধি।
প্রত্যেকেই এখন অপেক্ষায়, কবে ফিরবেন রূপালি হেমরম। দীর্ঘ দুই যুগ পরে হারিয়ে যাওয়া মাকে ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গুনছে তাঁর পরিবার। গ্রামে ফিরে এলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হবে বলেই মনে করছেন এলাকার মানুষজন।
রূপালির ফিরে আসা শুধু একটি পরিবারের জন্য নয়, গোটা গ্রামের কাছে যেন এক অলৌকিক ঘটনা। বহু বছর ধরে যে মহিলাকে মৃত ভেবে কার্যত আশা ছেড়ে দিয়েছিল পরিবার ও প্রতিবেশীরা, তাঁর জীবিত অবস্থায় খোঁজ মেলার ঘটনা কেবল বিস্ময়কর নয়, বরং মানবিকতার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।