দুষ্কৃতীদের বোমার আঘাতে নিহত তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখের দেহ মঙ্গলবার বগটুই গ্রামে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্বজনরা। তার ঠিক ২০০ মিটার দূরে রাস্তার ওপারে ভস্মীভূত একাধিক বাড়ি। মহিলা-শিশু সহ ৮ জনের দেহ ঝলসানো দেহ পাওয়া গিয়েছে এখান থেকেই। কোথাও কোথাও এখনও পুড়ে যাওয়া জায়গা থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। কোথায় পড়ে বোমার সুতলি। সোমবার রাতের বেনজির ভয়াবহতার সাক্ষী হয়েছে রামপুরহাটের এই গ্রাম।
এদিন ভাদুর দেহ গ্রামে আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার। তাঁর স্ত্রী তেবিলা বিবি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "পুলিশের সঙ্গে কথা বলব না। আমার স্বামীর খুনিদের শাস্তি চাই। বিনা দোষে আমার পরিবারের ছেলেদের গ্রেফতার করেছে। মিথ্যা কেসে ফাঁসানো হয়েছে। ওসি সব জানে। ওঁদের ফাঁসানো হচ্ছে। হাসপাতালে ছিল ওঁরা, ওখান থেকেই গ্রেফতার করেছে। আমার স্বামীকে যারা খুন করল তাদের কেন গ্রেফতার করা হল না। আমাদের ছেলেদের না ছাড়লে আমি স্বামীর কবরে মাটি দেব না। চোখের সামনে ফাঁসি দেখতে চাই আমার স্বামীর খুনিদের।"
এদিন, দুপুরের দিকে বগটুই গ্রামে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, প্রাক্তন মন্ত্রী তথা রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ফিরহাদদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ভাদুর স্ত্রী ও পরিজনরা। মন্ত্রীকে ফের তেবিলা বিবি বলেন, "আমার ছেলেদের ছেড়ে দিতে হবে কথা দিন। নাহলে আমি স্বামীর কবরে মাটি দেব না। ওঁরা নির্দোষ, ওঁদের ছেড়ে দিন।" ফিরহাদ এবং অনুব্রত তাঁকে এবং নিহত তৃণমূল নেতার পরিবারকে আশ্বাস দেন, দোষীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে। দোষীদের রেয়াত করা হবে না।
আরও পড়ুন ‘রামপুরহাটে গণদাহ-গণহত্যা’, কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাইলেন শুভেন্দু
এর পর রাস্তার ওপারে অগ্নিদগ্ধ বাড়িগুলি ঘুরে দেখেন ফিরহাদরা। আগেই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। পুলিশের সঙ্গেই পোড়ো বাড়িগুলি পরিদর্শন করেন মন্ত্রী। ভাদুর পরিবারের এক সদস্য সমীর শেখ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানিয়েছেন, "মন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের নির্দোষ ছেলেদের ছেড়ে দেবেন। ওঁদের উপর আমাদের আস্থা আছে। আর দোষীদের শাস্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।"
সূত্রের খবর, নিহত তৃণমূল নেতার পরিবারের এক সদস্য চাকরি দিতে পারে রাজ্য সরকার। এদিকে, সোমবার রাতে বীভৎসতার পর গোটা এলাকায় আতঙ্ক গ্রাস করেছে। এক সঙ্গে এতগুলো মানুষের মৃত্যুতে বীরভূমেই বহু বছর আগে নানুর ও সুচপুর গণহত্যার স্মৃতি ভেসে উঠেছে। বিরোধী দলগুলি বলছে, এটা গণহত্যা। বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। সব মিলিয়ে এলাকায় পরিস্থিতি এখনও অগ্নিগর্ভ।