কর্নাটকের হিজাব পরে স্কুলে যাওয়া নিয়ে দেশ উত্তাল হয়েছে। বিতর্ক ছড়িয়েছিল দেশজুড়ে। হিজাব পরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেণ বর্ডার পার করেছে হুগলির উত্তরপাড়ার শখেরবাজারের বিতস্তা গুপ্তা। ডাক্তারি পড়ুয়া বিতস্তা গতকাল, মঙ্গলবার রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্ট থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানে দিল্লি এসে পৌছায়। এদিন ফিরেছে কলকাতায়।
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। জীবন-জীবীকার জন্য লড়াইতে ইউক্রেণে গিয়ে মরণ-বাঁচন অবস্থা ভারতীয় ছাত্র-চাত্রীদের। মুহূর্মুহু দম ফাটানো শব্দ, নাওয়া-খাওয়া বন্ধ, ফাঁকা জায়গায় স্নো-ফলসে দাঁড়িয়ে রাত কাটানো, সীমান্ত পেরনো নিয়ে রুদ্ধশ্বাস হাল, বাড়িতে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন, অবশেষে দেশে ফিরে হুগলির উত্তরপাড়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বিতস্তা গুপ্তা। সীমানা পেরিয়েছেন হিজাব পরে। মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র ছাত্ররা হিজাব পরিয়ে তাঁদের সঙ্গে সীমানা পার করিয়েছেন বিতস্তাকে। অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস উত্তরপাড়ার গুপ্তা পরিবারে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, সোমবার বিতাস্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়েছিল, 'ফাইনালি বর্ডার ক্রশ করলাম।' গতকাল বিমান ধরেছিল সে। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ দিল্লি পৌছায় পঞ্চম বর্ষের এই ডাক্তারি পড়ুয়া।
যুদ্ধ শুরু হতে সন্ধ্যা থেকেই টার্নিপেল শহর ব্লাক আউট হয়ে যেত। রান্নার স্টোভ বা গ্যাস ধরানো যেত না। বিতস্তার দাদা সৌরভ দাস বলেন, 'যুদ্ধ শুরুর দেড় দিনের মাথায় কলেজের মাধ্যমে বাসে রোমানিয়া বর্ডারদের দিকে রওনা দেয় বিতস্তা। সেখানে পৌঁছে রুমমেটের সঙ্গে হাত ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ও টেনশনে পরে যায়। ওই রুমমেট সীমানা পার হয়ে যায়। সীমান্তে আটকে যায় বিতস্তা। ওকে সীমানা পার করতে দেয়নি। সোমবার ভোর রাতে তিনটে নাগাদ বাবাকে ফোন করে বলে আমাকে ভিসা দিচ্ছে না। আমার রুমমেটের সঙ্গে হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। আমাকে বের হতে দিচ্ছে না। এখানে খাওয়ার-দাবার নেই। টয়লেট নেই। স্নোফলস হচ্ছিল।'
আরও পড়ুন- ২৪ ঘন্টায় পেরিয়েছেন ৬০০ কিমি, ‘শত্রুর সঙ্গেও যেন না হয়’, দুঃসহ স্মৃতিতে কাঁটা মুম্বইবাসী পড়ুয়া
বুধবার বিতস্তা বলেন, 'স্নোফলসের মাধ্যয়ে খোলা আকাশের নীচে ঘন্টার ঘন্টার পর বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কোনওরকমে আধপেটা খাওয়ার যোগার হয়েছিল। সে এক চূড়ান্ত অব্যবস্থার মধ্যে পড়েছিলাম। কী করে বর্ডার পার করব সেই চিন্তায় পাগল হওয়ার যোগার। তারওপর যোগাযোগ করার জন্য ফোনে চার্জ করার ব্যবস্থা নেই।'
ইউক্রেণের টার্নিপোল ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির পঞ্চম বর্ষের ছাত্রী বিতস্তা গুপ্তা। ২০১৫-তে মাধ্যমিক, ২০১৭-তে উচ্চমাধ্যমিক। মঙ্গলবার বিতস্তার বাবা দেবাশিস গুপ্তা বলেন, 'আজ মেয়ে জানিয়েছে পাকিস্তানের ছাত্ররা তাঁকে হিজাব পরিয়ে ইউক্রেন সীমানা পার করিয়েছে। ওই ছাত্ররা বিতস্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ বর্ষের ছাত্র।' এই ঘটনায় আপ্লুত দেবাশিসবাবু। 'রেমানিয়া সীমান্ত থেকে ১১ ঘন্টা বাস জার্নি করে বুখারেস্ট পৌছায় বিতস্তা। রাত দুটো নাগাদ ক্যাম্পে ঢোকে। তারপরের দিন এয়ারপোর্টে গিয়ে উরানের টিকিট পায়।' জানিয়েছেন দাদা সৌরভ। মঙ্গলবার দুপুরে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বিতস্তা। রাতে বঙ্গভবনে থাকার ব্যবস্থা ছিল। শেষ পর্যন্ত এদিন সন্ধ্যায় বিতস্তা ফিরলেন কলকাতায়। ঘরের মেয়ের চোখের দেখা মিলেছে, বুধ-সন্ধ্যায় স্বস্তিতে গুপ্তা পরিবার।