রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে তাঁর বেলাগাম মন্তব্যের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী অখিল গিরি। 'ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ'-এর জেরেই ওই মন্তব্য করেছেন বলে দাবি রামনগরের তৃণমূল বিধায়কে। কিন্তু পদ্ম নেতাদের দাবি শুক্রবারই প্রথম নয়, অক্টোবরেও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং বিধানসভায় বিজেপির মুখ্যসচেতক মনোজ টিগ্গার রূপ নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন অখিল গিরি।
শনিবার রাতে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান মনোজ মালব্যের তরফে আরও একটি টুইট করা হয়। সেখানে গত ২৭শে অক্টোবর তৃণমূলের একটি জনসভায় মন্ত্রী অখিল গিরির বক্তব্যের ভিডিও তুলে ধরা হয়েছে। মালব্য টুইটে লিখেছেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রী অখিল গিরি এর আগেই একই দোষে অপরাধী। এর আগে, ২৭শে অক্টোবরও তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপি চিফ হুইপ এবং একজন বিশিষ্ট উপজাতি নেতা মনোজ টিগ্গা-র বিরুদ্ধে একই রকম অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন। তৃণমূল আদিবাসীদের ঘৃণা করে।'
আরও পড়ুন- বেলাগাম অখিল: দায় ঝেড়ে ফেললেও ঘুরিয়ে মন্ত্রীর হয়েই সাফাই তৃণমূলের
এই টুইটে থাকা ওই ভিডিও-তে মন্ত্রীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, 'একটু শোভনীয় কথাবার্তা বল, বিরোদী দলনেতা হয়েছো। প্রায়ই বলে দেখতে খারাপ, আহা। দেখতে খারপ, দ্রৌপদী মুর্মুকে কেমন দেখতে? মনোজ টিগ্গাকে কেমন দেখতে? তোমাকে দেখতে সুন্দর উপরেই, কিন্তু ভিতরটা পুরো টেনশনে ভর্তি।' ওই সভায় অখিল গিরি নিশানা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারীকে।
রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য বাংলার মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সোচ্চার শুভেন্দু অধিকারী। অখিল গিরিকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি, মমতার মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি ও জনজাতি নিপীড়ন প্রতিরোধ আইনে এফআইআর দায়ের ও গ্রেফতারের দাবি তাঁর। বিরোধী দলনেতা বলেছেন, 'পুলিশ অভিযোগ না নিলে তিনদিন পর কোর্টে এফআইআর হবে। এরপরও কাজ না হলে আরও তিনদিন পর হাইকোর্টে যাব। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে কোর্টই তো ভরসার জায়গা। রাষ্ট্রীয়স্তরে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে বিজেপি।' রাজ্যপাল লা গণেশনের দ্রুত কলকাতায় এসে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের দাবি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন শুভেন্দু অধিকারী।
আরও পড়ুন- রাষ্ট্রপতি অবমাননা: অস্বস্তি বাড়তেই অনুতাপ প্রকাশ মমতার মন্ত্রীর, বিধায়ক পদ খারিজের আর্জি সৌমিত্রর
অখিল গিরির দাবি, শুভেন্দু অধিকারীর লাগাতার অশ্লীল রূপ কটাক্ষের বিরুদ্ধে জবাব দিতে গিয়েই খোদ রাষ্ট্রপতিকে টেনে এনেছিলেন তিনি। পরে বিতর্ক বাড়ছে দেখে অনুতাপ প্রকাশ করে বলেন, 'শুভেন্দু অধিকারী বিভিন্ন জায়গায় আমার সম্পর্কে কটূক্তি করেছিলেন। আমি বয়স্ক মানুষ। আমার মনে ক্রোধ জন্মেছিল। রাষ্ট্রপতি মহোদয়াকে আমি কোনও অসম্মান করিনি। তাঁর প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। যে কথা আমার মুখ থেকে বেরিয়েছে, তা ক্রোধের বশে বেরিয়ে এসেছে। আমি অনুতপ্ত।
তৃণমূল অবশ্য অখিল মন্তব্যের নিন্দা করেছে। মন্ত্রীর বক্তব্যের দায়ভার নেয়নি রাজ্যের শাসক দল। 'নারীর ক্ষমতায়নের যুগে এ ধরনের দুর্ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়' বলে দাবি করা হয়েছে। তবে, ছাড়তে নারাজ বিজেপি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের অখিলের মন্তব্যকে গোটা আদিবাসী সমাজের অপমান বলে দেগে দিতে মরিয়া গেরুয়া বাহিনী।