মুকুল রায়ের দিল্লি যাওয়া নিয়ে যখন বঙ্গ রাজনীতি তোলপাড় তখন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কতটা আশাব্যঞ্জক তা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন রয়েছে দলের অন্দরমহলেই। সোমবার রাতে দিল্লিতে পা রাখার পরের দিন 'প্রত্য়াবর্তন' বলে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। দলের অন্দরেই প্রশ্ন, আদৌ সেই প্রত্যাবর্তন কতটা আড়ম্বরপূর্ণ হবে? দিল্লি বিজেপি মুকুল রায়কে নিয়ে কি ভাবছে সেটাই এখন মূল প্রশ্ন।
'অসুস্থ' অবস্থাতেও কি করে প্রচারের কেন্দ্রবিন্দুতে আসা যায় তা বুঝিয়ে দিয়েছেন কৃষ্ণনগরের বিজেপি বিধায়ক পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া মুকুল রায়। যদিও তাঁর কথা-বার্তায় কিছু অসংলগ্ন বিষয় উঠে আসছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এমনকী মুকুল-শুভ্রাংশু এমন পরিস্থিতি তৈরি করল যে বাংলার পুলিশকে দিল্লি ছুটতে হল। রীতিমতো সাবালক মুকুল রায় 'নিখোঁজ' বলে ঢেঁড়া পেটানো চলল। আদৌ মুকুল রায়কে কতটা গুরুত্ব দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি?
রাজধানীর বিজেপি নেতৃত্ব সূত্রে খবর, ঢাকঢোল পিটিয়ে ফের বিজেপিতে মুকুল-যোগের বাস্তবতা আছে বলে মনে করছেন না তাঁরা। প্রথমত, এই মুহূর্তে বাংলার রাজনীতিতে মুকুল রায় প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছে না কেন্দ্রীয় বিজেপির বড় অংশ। দ্বিতীয়ত, তাঁর কথা-বার্তাও মনে হচ্ছে যেন বাংলার শাসক তৃণমূল নয় সিপিএম। অর্থাৎ অসংলগ্ন কথা বলা নিয়েও তাঁরা ধন্দে রয়েছেন। সেক্ষেত্রে আড়ম্বরপূর্ণ প্রত্যাবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা মুকুল রায়ের ক্ষেত্রে অনেকটা কম বলেই মনে করছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ। বরং হঠাৎ কেন দিল্লি ছুটে এলেন মুকুল তা নিয়ে তাঁরা চর্চা করছেন। একসময় কৈলাস বিজয়বর্গীয় আর মুকুল রায়কে এক ফ্রেমে দেখে হরিহর আত্মা বলেই মনে করত রাজনৈতিক মহল। মুকুলের বক্তব্য অনুযায়ী তিনি কথা বলেছেন কৈলাস ও অমিত শাহর সঙ্গে। বঙ্গ বিজেপিতে মুকুল কতটা কার্যকরী তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দলের অন্দরেই। দলবদল ইস্যুতে বিশ্বাসযোগ্য়তার প্রশ্নও উঠছে দলে।
মুকুল রায় নিজে সাংবাদ মাধ্যমে বলেছেন তিনি দলের কাছে এসাইনমেন্ট চাইছেন। সূত্রের খবর, তাঁকে সাংগঠনিক দায়িত্ব কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেবে সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ওই সূত্রের খবর, বরং তৃণমূলের অন্দরের খবর তাঁর কাছ থেকে পেতেই বেশী আগ্রহী বিজেপি। সেটাও একটা বড় অ্যাসাইনমেন্ট বলেই তাঁরা মনে করছেন। তবে কেন মুকুল রায় দিল্লিতে এলেন? হঠাৎ মনে হল রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন তা চলে এলেন দিল্লিতে, মুকুলের এই মন্তব্য নিয়েও রীতিমতো গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এর আগে প্রথম দফায় সারদা কাণ্ডে সহযোগিতা করবেন বলে 'বিরোধ' হয়েছিল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে। তা নিয়েও বিস্তর কানাঘুষো হয়েছে পরবর্তীতে। একদিকে শুভেন্দুর তেড়েফুঁড়ে ওঠা, অন্য়দিকে মুকুল রায়ের বিজেপি বিজেপি গুনগান করা এর মধ্য়ে ন্য়ারেটিভ খুঁজছে রাজনৈতিক মহল।
মুকুল দিল্লিতে যেতেই অনুপম হাজরা লিখেছিলেন 'প্রত্য়াবর্তন'। সেই 'প্রত্যাবর্তন' কতটা আড়ম্বরপূর্ণ হবে সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।