আড়াই বছর আগে আইনে পরিণত হয়েছিল সিএএ। কিন্তু এখনও বিধি তৈরি সম্পূর্ণ নয়। ফলে কার্যকর হয়নি আইন। বঙ্গ বিজেপিতে এ নিয়ে ক্ষোভ কম নয়। করোনার কথা বলে অসন্তোষের আগুন চাপা দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু, ছাই চাপা আগুন ধিকি ধিকি করে জ্বলছেই। সিএএ লাগু না হওয়া নিয়ে ফের রোশ ফুটে বেরোল এক পদ্ম বিধায়কের মুখে। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন যে, '২০২৪-র মধ্যে সিএএ লাগু না হলে উদ্বাস্তুরা বিজেপির থেকে সরে যাবেন। আমিও ভোট চাইতে যেতে পারব না।'
সিএএ কার্যকর না হওয়ায় শুক্রবার ফোঁস করেছেন হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার। রীতিমত বোমা ফাটিয়েছেন তিনি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে এই কবিয়াল বিধায়ক বলেছেন, '২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সিএএ আইন পাস হয়েছে। ২২ সালেও তা লাগু হল না। উদ্বাস্তুদের মধ্যে তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। তবে উদ্বাস্তু মানুষগুলোর বান্ধব বিজেপিই। কারণ অন্যরা এই আইনের বিরোধীতা করেছে। ২০২৪ সালের আগে সিএএ কার্যকর না হলে আমি মানুষের কাছে ভোট চাইতে যেতে পারব না। উদ্বাস্তুরাও বিজেপির থেকে সরে যাবেন।' ইতিমধ্যেই নিজের উপলব্ধির কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন অসীমবাবু।
মতুয়া সম্প্রদায়ের অধিকাংশই দেশভাগের পর ওপার বাংলা থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন। তাঁদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতেই সিএএ-র প্রণয়ন। পদ্ম শিবির ক্ষমতায় এলেই সিএএ লাগু হবে- এই আশা থেকেই মতুয়ারা ক্রমে বিজেপির ভোট ব্যাংক হয়ে উঠেছে। ১৯-য়ের লোকসভা বা ২১-য়ের বিধানসভায় মতুয়াদের ঢালাও ভোট পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু, দিন কাটলেও সিএএ বাস্তবে কার্যকরের মুখ দেখিনি। স্বাভাবিকভাবেই উদ্বাস্তুদের মধ্যে আশঙ্কা দানা বাঁধছে। রীতিমত অসন্তুষ্ট তাঁরা।
এই ক্ষোভের কথা কয়েক মাস আগেই তুলে ধরেছিলেন মতুয়াদের অন্যতম প্রতিনিধি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সেই সময় করোনা অতিমারীকে ঢাল করেছিল অমিত শাহ ও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ঘোষণা করা হয়, আইন যখন হয়েছে তা লাগুও হবে, তবে করোনা কাটলে সব সম্পন্ন হবে।
বিধায়ক অসীম সরকার করোনার দোহাইকে স্রেফ অজুহাত বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, 'করোনা আসলে অজুহাত। ওসব বাজে কথা বলে লাভ হবে না। এই ইন্টারনেটের যুগে করোনা সিএএ লাগু না হওয়ার কোনও কারণ হতে পারে না।'
অসীমবাবু জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের মধ্যে সিএএ লাগু না হলে তিনি ভোট চাইতে যাবেন না। একই পথের পথিক হবেন কী বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর? বঙ্গ বিজেপির অন্দরে ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্ন উঠে গেল।
জল্পনা সিএএ লাগু না হওয়ার ক্ষোভে একাধিক মতুয়া বিধায়কও নাকি তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন। অসীম সরকারও কী তাহলে ফুল বদলের তালিকায় রয়েছেন? জবাবে হরিনঘাটার বিজেপি বিধায়ক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেছেন, 'আমার তৃণমূলে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে একদমই তা ভাববেন না। কারণ বিজেপি সিএএ আইন করেছেন। বিজেপি ভাল, ডাল, মাছ, তরকারি রান্না করে ফ্রিজে রেখেছেন। আমাদের খাবার চাইতে হচ্ছে শুধু। কিন্তু, তৃণমূল রান্না করা খাবার ফ্রিজ থেকে বার করে একদম ড্রেনে ফেলে দেবে। তাই তৃণমূলে যাওয়ার প্রশ্নই নেই।'