২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর একের পর এক বিজেপি নেতৃত্ব ঘাসফুল শিবিরে ভিড়েছেন। সম্প্রতি ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং বিজেপি ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। একাধিক আদি বিজেপি নেতৃত্ব দলবদল না করলেও বসে গিয়েছেন। এদিকে একবছরও বাকি নেই বঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন, তারপরই ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে দলকে উজ্জীবিত করতে এরাজ্যে দুদিনের সফরে এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। আলিপুরে জাতীয় গ্রন্থাগারে দলীয় সভায় একাধিক টোটকা প্রয়োগ করেছেন নাড্ডা।
এদিন নাড্ডা বারে বারেই বোঝাতে চেয়েছেন রাজনৈতিক পরিস্থিতি চিরকাল এক থাকে না। বাংলাতেও যে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে তা একাধিক উদাহরণ টেনে বলতে থাকেন জেপি নাড্ডা। কড়া আক্রমণ করেছেন মমতা-অভিষেককে। এদিন নাড্ডা দলীয় নেতৃত্বের উদ্দেশে বলেন, 'রাজনীতিতে কখনও কিছু স্থায়ী থাকে না। যা আজ আছে তা কাল থাকবে না। যা কাল থাকবে তা পরশু থাকবে না। রাজনৈতিক দৃষ্টিঙ্গিতে দেখতে হবে কোন শক্তির সঙ্গে লড়াই করে এগোতে হবে। পাশাপাশি নিজের শক্তির আন্দাজ থাকতে হবে।' নাড্ডার বক্তব্য, 'রাজনীতিতে ৪০ বছর ধরে আছি। তখন কংগ্রেসের নেতারা বলতেন আমি নাকি রাজনীতি বুঝি না। আমি নাকি ভুল দলে ঠিক লোক। আজ কী অবস্থা।'
এই সভায় তৃণমূলকে কড়া আক্রমণ করেছেন নাড্ডা। তিনি বলেন, 'বিজেপিতে নেতা আছে নীতিও আছে। তৃণমূলে নেতা আছে নীতি নেই। সব কমিশনই মিশন। ওখানে কার্যকর্তার নামে সিন্ডিকেট চলে। কোনও কর্মী নেই। সব সিন্ডিকেট। তৃণমূল পিসি-ভাইপোর দলে পরিণত হয়েছে।' একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি তৃণমূল সরকার নিজের নামে চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে দলীয় কর্মীদের প্রচারে নামার নির্দেশ দেন নাড্ডা।
একসময় এরাজ্যে বিজেপির দুজন সাংসদ ছিলেন। দীর্ঘ বছর পর বিজেপি এরাজ্যে বিরোধী দলে পরিণত হয়েছে। নাড্ডার কথায়, '২০১৪-এর পর ৩ শতাংশ ভোট ৩৮ শতংশ হয়েছে। ১৮জন সাংসদ, ৭৭জন বিধায়ক হয়েছে। কে কোথায় যাবে। এখানেই ফিরে আসতে হবে। ধমকি, হুমকি, কাটমানি চলবে।'
আরও পড়ুন- মমতাকে কৃতজ্ঞতা আপ্লুত রেণুর, বললেন- ‘উনি মায়ের মতো’
বিজেপি সভাপতি আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ যাবদের উদাহরণ টেনেছেন। তাঁর কথায়, 'বিহারেও বিজেপি সরকারে এসেছে। কেউ ভাবেনি মুলায়ম যাবে। তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রে সরকার গড়ব। খুব তাড়াতাড়ি গণতান্ত্রিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গেও সরকার করবে বিজেপি। রাজনীতিতে যে যত দাবাবে তত শক্তি বাড়বে।'
তৃণমল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন গেট খুলে দিলেই এখানে বিজেপি দলটা উঠে যাবে। তারপরই দলে এসেছেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। তার আগে আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে এসে বিধায়কও হয়ে গিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলে ভাঙন রোধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি। এর আগে রাজ্যে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অমিত শাহ, এবার এলেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। তবে এই দাওয়াই কতটা কাজে আসবে তা সময়ই বলবে।
এদিকে, গতকালের পর বৃহস্পতিবারও ঠাসা কর্মসূচি নাড্ডার। সকালে বেলুড় মঠে বিজেপির শীর্ষ নেতা। বেলায় নিউটাউনের হোটেলে বৈঠক দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে। দুপুরে সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে দলের প্রদেশ মণ্ডল সভাপতিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন নাড্ডা। বিকেলে কলামন্দিরে নাগরিক সম্মলনে উপস্থিত থাকবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি।