বঙ্গ রাজনীতিতে জোরদার চর্চা অর্ধেক ডিসেম্বর পার হয়ে গেল। বিরোধী দলনেতার আগাম হুঁশিয়ারি কি বৃথা যাবে? শুধুই কি ফাঁকা আওয়াজ? মাঝ ডিসেম্বরে কনকনে ঠান্ডা পড়েছে বাংলাজুড়ে। এবার শীতের ঠান্ডায় কাঁপুনি ধরবে বলে মন্তব্য করেছিলেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ডিসেম্বর ডেডলাইন এক এক করে পার হয়ে যাচ্ছে। বাকি রয়েছে ২১ ডিসেম্বর। তার আগেই আরেক চমক দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে ৩০ মিনিটের বৈঠক করবেন শুভেন্দু ও সুকান্ত। যদিও নবান্নের ১৪ তলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমিত শাহর একান্ত বৈঠক নিয়ে রীতিমতো গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, পরের বছরই লোকসভা নির্বাচন। বাংলায় ১৮ আসন বা তার , বেশি পেতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। তার আগাম পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। ডিসেম্বর ডেডলাইন ঘোষণা করে আপাতত দলের ভাঙন কিছুটা আটকানো গিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে এরই মধ্যে শুভেন্দুর এক সময়ের গড় কাঁথির জনসভায় অল্প করে দরজা খুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এখনও দরজা খোলার ফল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও ওই সভার একাংশ আওয়াজ তুলেছিল এখনই দরজা খুলবেন না। যাই হোক নেতৃত্ব স্তরে বা সাংসদ-বিধায়ক স্তরে এখনও দলবদলের ঘটনা দেখা যাচ্ছে না। দু'পক্ষ শুধুই চাপের খেলা খেলে যাচ্ছে। তবে ডিসেম্বর যেহেতু এখনও চলে যায়নি তাই রাজনৈতিক মহলের কৌতুহলের শেষ নেই।
শুভেন্দুর ডেডলাইন নিয়ে বিজেপির বড় অংশই অন্ধকারে রয়েছে। তাঁদের কাছেও নাকি কোনও খবর নেই। তাহলে গত কয়েক মাস ধরে এই ডিসেম্বর ডিসেম্বর বলে চিৎকার করাও কি একেবারেই ফাঁকা আওয়াজ? বিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করার পাশাপাশি দলের কর্মীদের চাঙ্গা রাখা? সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গ রাজনীতিতে। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, এই ডিসেম্বর ডেডলাইন শুভেন্দু বারে বারে বলায় তৃণমূল কংগ্রেসও কিছু বিহ্বল হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন- আসানসোল-কাণ্ডে বিজেপিকেই দুষছে তৃণমূল, মমতার নির্দেশে আজ যাচ্ছেন বাবুল-সায়নীরা
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে ডিসেম্বরে সাবধান থাকতে বলেছেন। বহিরাগতদের ওপর নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে কোনও অশান্তি না হয়। বগটুই কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের সিবিআই হেফাজতে মৃত্যু ও আসানসোলে কম্বল বিতরণে ৩ জনের মৃত্যু শুভেন্দুর ডিসেম্বর ডেডলাইনের আগাম ঘোষণার ফল বলে তৃণমূল দাবি করেছে। মোদ্দা কথা ডিসেম্বরে আদৌ কি হবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা অব্যাহত।
শুভেন্দু শেষমেশ ঘোষণা করেছিলেন সরকার পড়ে যাওয়ার কথা তিনি বলেননি, তবে বড় ডাকাত ধরা পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলনেতা। ২১ তারিখের আগের দিন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেন্দু ও সুকান্তর বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের এত আগাম ঘোষণা কেন, তা নিয়ে সন্দিহান পর্যবেক্ষক মহল। মমতার সঙ্গে একান্তে শাহর বৈঠক হওয়ায় ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্য আগাম জানিয়ে দিলেন বৈঠকের কথা?
আরও পড়ুন- ঠান্ডার কামড় রাজ্যজুড়ে, দিন কয়েকেই হাড় কাঁপাবে শীত? জানুন লেটেস্ট আপডেট
তা আবার ডিসেম্বরের শেষ ডেডলাইন ঘোষণার আগের দিন হওয়ায় ওই বৈঠকের গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, এদিকে চিটফান্ড কাণ্ডে ফের তৎপরতা বাড়াতে পারে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। যদিও তার সঙ্গে শুভেন্দুর হুঁশিয়ারির কোনও সম্পর্ক থাকতে নাও পারে। তবে যেভাবে আগাম বড় ডাকাত ধরা পড়ার কথা ঘোষণা করেছেন তাতে ডিসেম্বরের কনকনে শীতে বঙ্গ রাজনীতিতে কতটা কাঁপুনি ধরবে সেদিকে নজর রেখেছে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে, শাহ-মমতা একান্ত বৈঠকের প্লট তৈরির পিছনে রহস্য খুঁজছে বিরোধীরা।