কুরুক্ষেত্র ভাটপাড়া। বুধবার সকাল থেকেই দফায় দফায় বোমাবাজিতে অশান্ত হয়ে ওঠে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এলাকার ভাটপাড়া। এদিনের অশান্তিতে ইতিমধ্যে নিহত দুই, গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহতের সংখ্যা পাঁচ। বুধবার এক যুবকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এদিন ফের চরমে ওঠে সংঘর্ষ। ভাটপাড়ার ৪ এবং ৫ নং রেল সাইডিংয়ে বোমাবাজি করে দুষ্কৃতীরা। জানা যাচ্ছে, আজ ভাটপাড়া তদন্তকেন্দ্রকে ভাটপাড়া থানা হিসেবে উদ্বোধন করার কথা পুলিশের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্তার। ভাটপাড়ায় এতদিন কোনও থানা ছিল না, জগদ্দল থানার অধীনেই ছিল এই এলাকা। কিন্তু এদিন নতুন থানার উদ্বোধন ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ভাটপাড়া, এমনটাই খবর। থানার ২০০ গজের মধ্যে চলে গুলি ও বোমাবাজি। দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে এখনও পর্যন্ত কেউ আহত না হলেও কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এলাকায় নামানো হয়েছে র্যাফ,ইতিমধ্যে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়েছে পুলিশ। জানা যাচ্ছে, দুষ্কৃতীদের হটাতে শূন্য কয়েক রাউন্ড গুলিও ছোঁড়া হয়েছে।
আরও পড়ুন অশান্ত ভাটপাড়া, চলল গুলি, চরমে তৃণমূল-বিজেপি সংঘাত
ভাটপাড়ার এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে ওই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সদ্য পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, "ভাটপাড়ায় হিংসার রাজনীতি করছে অর্জুন সিং এবং বিজেপি দলের সমর্থকেরা। একের পর এক খুন, রাহাজানি চলছেই। এলাকা শান্ত করতে আইপিএস অফিসার অজয় ঠাকুরের উপস্থিতিতে শান্তি মিছিলে বিজেপি দুর্বৃত্তরা পুলিশকে মারতে যায়, এটা বলতেও আমার লজ্জা করছে। আমি প্রশাসনকে বলব আরও কঠোর থেকে কঠোরতম পদক্ষেপ নিতে"। তবে মদন মিত্র যাই বলুক, ভাটপাড়ার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তথা ব্যারাকপুরের সদ্য বিজয়ী বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং শাসকদল তৃণমূল এবং প্রশাসনের কাঁধেই দায় চাপিয়ে বলেন, "কী করে শান্তি থাকবে এলাকায়? পুলিশই গন্ডগোল করছে। পুলিশই গুলি ছুড়ছে, হিন্দুদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে লেলিয়ে দিচ্ছে গুলি চালাতে। পুলিশের মেইন লোক মাথায় গুলি করে মেরেছে লোকটাকে। এমনকি পুলিশের আস্কারাতেই কামারহাটিতে গুন্ডারা এখানে আসে রাত্রিবেলায়"। তবে মদন মিত্রের দাবি, "প্রশাসন যাতে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ না করতে পারে সেই কারণে দোষারোপ করা হচ্ছে। ২৯৪টি বিধানসভার একটা ভাটপাড়া, ২৯৩টি বিধানসভায় ন্যূনতম শান্তি আছে আর ভাটপাড়ায় এরকম আগুন জ্বলবে তা হতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে আমরা কিন্তু চুপ করে বসে থাকতে পারি না"।
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভাটপাড়া। এমনিতেই দুষ্কৃতিরাজের জন্য 'খ্যাত' এই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এলাকা। তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা অর্জুন সিংয়ের বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই এলাকায় দাবানলের ন্যায় অশান্তি ছড়ায় বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের। এরপর অর্জুন জেতার পর এই এলাকার রাজনৈতিক আকচাআকচি ভিন্ন মাত্রা পায়। নির্বাচন মিটতেই ভাটপাড়ায় ঘাসফুল শিবির ছেড়ে পদ্মশিবিরে নাম লেখানোর হিড়িক চোখে পড়ে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার চার তৃণমূল বিধায়ক পদ্ম পতাকা হাতে নেওয়ায় এই জেলায় তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ কার্যত নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিছুদিন আগেই ভাটপাড়া লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের ঘরছাড়া কর্মীদের ঘরে ফেরাতে নৈহাটিতে সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের রাশ শক্ত করতে কাঁচরাপাড়াতেও ব্লক কর্মীদের নিয়ে সভা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। পুলিশকেও যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশ দেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা। কিন্তু এসবের পরও অশান্তি না কমে বরং বেড়েছে। ভাটপাড়া তথা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে রাজ্যে রাজনীতিতে এই মুহূর্তে যে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সে জন্য তৃণমূলের জমি হারানো এবং বিজেপির উগ্র আগ্রাসনকেই দায়ী করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।