ভরা বৈশাখেও দেখা নেই কালবৈশাখীর (Kalbaisakhi)। তীব্র দহনে দগ্ধ গোটা বাংলা। মাত্রাছাড়া গরমে হাঁসফাঁস দশা থেকে পরিত্রাণ পেতে আট থেকে আশি, প্রত্যেকেই মুষলধারে বৃষ্টির পথ চেয়ে বসে রয়েছেন। শুধুই বৃষ্টির প্রার্থনা চলছে দিকে-দিকে। কিন্তু ভাবলে অবাক হবেন, এরাজ্যেই এমনও অনেকে আছেন যাঁদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে এই তীব্র দহন। তাঁরা এখন কিছুতেই ঝড়-বৃষ্টি চাইছেন না। বরং তাঁদের আশা, রোদ আরও খাঁ খাঁ করুক, দহন আরও চলুক বেশ কিছুদিন।
রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman)। এই জেলার বোরো চাষিরাই চাইছেন আপাতত এই দহন চলুক। কারণ, তাঁদের চাষের জমির বোরো ধান এখন সবে পেকে সোনালি হয়েছে। সেই ধান কেটে ঝেড়ে গোলায় তুলতে এখনও বেশ কিছুদিন বাকি রয়েছে। তাই এখন এমনই দহন পরিস্থিতি চলতে থাকলে দ্রুত সেই ধান পেকে তোলার অবস্থায় চলে আসবে। তাই এখনই বৃষ্টি চাইছেন না এই বোরো চাষিরা।
কৃষিতে পশ্চিমবঙ্গের অগ্রগণ্য জেলাগুলির মধ্যে অন্যতম পূর্ব বর্ধমান। ধানই এই জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল। সুগন্ধি ধান সহ উন্নত প্রজাতির ধান চাষেও এই জেলার সুনাম রয়েছে। বোরো ধানের চাষও এই জেলায় ব্যাপক পরিমাণে হয়। জেলা কৃষি দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবছর পূর্ব বর্ধমান জেলায় ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।
মূলত আমন ধান চাষের মরশুম শেষ হওয়ার পরেই বোরো চাষের মরশুম শুরু হয়। বোরো ধান রোপনের কাজ সাধারণত বাংলার কার্তিক মাসের মাঝামাঝি অর্থাৎ ইংরেজির অক্টোবর-নভেম্বর মাস জুড়ে চলে । ধান গাছ কাটা ও ঝাড়ার কাজ চলে বাংলার বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ অর্থাৎ ইংরেজির এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত। আবহাওয়া এবছর বোরো ধান চাষের পক্ষে যথেষ্টই সহায়ক রয়েছে। কালবৈশাখীও 'পাকা ধানে মই' দেয়নি। তাই দহনে দগ্ধ হতে হলেও জমিতে ধানের ভালো ফলন দেখে খুশিতে ডগমগ জেলার চাষিরা।
জেলার কৃষি আধিকারিক নকুল চন্দ্র মাইতি বলেন, “এবছর আমাদের জেলায় বোরো ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে অস্বস্তি বেড়েছে ঠিকই। তবুও আমি চাইব উপরওয়ালা যেন চাষিদের প্রতি সদয় থাকেন। চাষিরা তাঁদের জমির ধান গাছ কেটে ঝেড়ে ভালোভাবে ঘরে তুলে নিক। তাতে চাষিরা লাভবান হবেন। তার পর কালবৈশাখী এলে আসুক।"
আরও পড়ুন- Madhyamik Result 2024 Toppers: এবারের মাধ্যমিকে প্রথম দশে কারা? ঝটপট দেখুন সম্পূর্ণ মেধাতালিকা
আবহাওয়া ও জলবায়ু চাষিদের মুখে কখনও হাসি ফোটায় কখনও বা কাঁদায়। প্রবল ঝাড়-বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি কিংবা খরা বা বন্যায় চাষের ক্ষতি চাষিদের কাঁদিয়ে ছাড়ে। তখন আত্মহননের পথও বেছে নিতে বাধ্য হন কোনও কোনও চাষি। আবার আবহাওয়া ও জলবায়ু যখন ধান, আলু কিংবা সবজি চাষের অনুকুল থাকে, ফসল যখন ভালো হয় তখন চাষিদের মুখে হাসি ফোটে। যেমনটা এখন ঘটেছে এই বোরো ধান চাষের ক্ষেত্রে।
এখনকার এই তীব্র দহন পরিস্থিতিতে বোরো ধান চাষিরা যে কতটা খুশিতে রয়েছেন তা পূর্ব বর্ধমানের ভাতার, রায়না, মেমারি ও জামালপুরে গেলে জানা যাবে। ভাতারের প্রবীণ চাষি শেখ আবুলের কথায়, “এবছর প্রায় ৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করছি। ধান গাছে ফলনও ভালো এসেছে। তবে আমার সব জমির ধান গাছ এখনও সম্পূর্ণভাবে পাকেনি। ঝড়-বৃষ্টি না হয় যেন। এমন তীব্র তাপপ্রবাহ আরও অন্তত ১০-১২ দিন স্থায়ী হোক। আমার জমির দিকে তাকিয়েই আমি আরও দহন চাইছি।"
একই কারণে দহনের আরও স্থায়িত্ব চাইছেন রায়না, মেমারি ও জামালপুরের আরও অনেক বোরো ধান চাষি। তাঁদের সবারই বক্তব্য, এই দহন তাঁদের বোরো চাষের পক্ষে যথেষ্টই সহায়ক।