Advertisment

লকডাউনে আটকে ছেলে, সাইকেলে ২০০ কিমি পথ পাড়ি উদ্বিগ্ন বাবার

দুর্গাপুর কতদুর বা কতটা বড় শহর তা-ও জানা নেই। তাও বুকে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছেন বাবা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ছবি: কৌশিক সেন

বাপ হো তো অ্যায়সা"- লকডাউনের জেরে ছেলে আটকে পড়েছে দুর্গাপুরে। সেই ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে বাবার ভরসা একটা ভাঙাচোরা সাইকেল। সেই সাইকেলে চেপে নেপাল সীমান্ত লোগোয়া বিহারের আড়ারিয়া জেলার খোড়াগাঁও থেকে একদিনে প্রায় ২০০ কিমি সাইকেল চালিয়ে রায়গঞ্জ অবধি পৌঁছে গিয়েছেন। খাবারের স্টকে সাইকেলে বাঁধা ছোট একটি মুড়ির বস্তা। গায়ে দেওয়ার জন্য একটা পাতলা কম্বল, ধোকড়ার মতন কিছু একটা পেতে ৩৪ জাতীয় সড়কের পাশে মাটিতেই শুয়ে রবিবার রাত কাটালেন রায়গঞ্জে।

Advertisment

ভোর হতেই ফের শুরু দুর্গাপুরের উদ্দ্যেশ্যে সাইকেল নিয়ে যাত্রা। সঙ্গী অন্য একটি সাইকেলে সওয়ার এক আত্মীয়। দুর্গাপুর কতদুর বা কতটা বড় শহর তা-ও জানা নেই। বুকে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছেন বাবা ঋষিদেব। ১২ বছরের ছেলে নরেশ ঋষিদেবকে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন এই উদ্দেশ্যেই যাত্রা। রবিবার গভীর রাতে রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগর এলাকায় ৩৪ নাম্বার জাতীয় সড়ক লাগোয়া একটা পরিত্যক্ত দোচালার নিচে দেখা মিলল মুস্কিল ঋষিদেবের সঙ্গে।

আরও পড়ুন: বাংলায় ফের করোনা আক্রান্ত, সংখ্যা বেড়ে ২২

১২ বছরের নরেশ পাড়ার ক'জন ভিন রাজ্যের শ্রমিকের সঙ্গে ছত্তিশগড়ে কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে লকডাউনে আটকে পড়ে কোনও এক অজানা শহরে। ট্রেনেই হারিয়েছিল তার সঙ্গী মোবাইল ফোন। তাঁর কথায়, "বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় জিজ্ঞেস করতে করতে এতদূর এসেছি। এভাবেই পৌঁছে যাব দুর্গাপুর। ছেলের জন্য় মন উথালপাথাল করছে।"

মুশকিল ঋষিদেবের বক্তব্য়, "লকডাউনে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ওই শ্রমিকের দল। পথে পুলিশের নজরদারি বাঁচিয়ে চলতে গিয়ে বয়স্ক সঙ্গীদের হারিয়ে ফেলে নরেশ৷ পকেটের টাকাও শেষ হয়ে গিয়েছিল। ৮ দিন না খেয়ে হাটতে হাটতে দু'পায়ে ফোস্কা পড়ে যায় তার। এক সহৃদয় ব্যক্তি নরেশকে ডেকে খাবার দেন। তাকে হিন্দিতে নিজের অসহায় অবস্থার কথা খানিকটা বোঝাতে পারে নরেশ৷ সেই সহৃদয় ব্যক্তির মোবাইল ফোন থেকেই বাড়িতে ফোন করে নরেশ৷ নিজের দুর্দশার কথা বাড়িতে জানায়৷ আর জানায় কলকাত্তা দুর্গাপুর তার বর্তমান লোকেশন।"

মুড়ির বস্তা আর লোটা-কম্বল সম্বল করে লকডাউনে আটকে পড়া অসহায় নাবালক ছেলেকে ঘরে ফেরাতে সাইকেল নিয়ে রওনা দেওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনও রাস্তা খুঁজে পাননি বাবা৷ দীর্ঘ যাত্রাপথে সঙ্গ দিতে চলে এসেছেন এক আত্মীয়ও। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সীমান্ত সীল করার নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সব বাধা ডিঙিয়ে বিহারের এই গরীব কৃষি শ্রমিক বাবা ছেলেকে খুঁজতে সুদূর অজানার উদ্দেশ্যে চলেছেন। এমন পুত্রস্নেহ নজির সৃষ্টি করেছে তা বলাই বাহুল্য।

coronavirus West Bengal
Advertisment