ফের রাজ্যের চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্ত নিয়ে গা-ঝাড়া দিচ্ছে সিবিআই। ইতিমধ্যে বর্ধমান সানমার্গ চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতারও করা হয়েছে কয়েকজনকে। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচনের আগে একটু বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো। তবে বর্ধমান শহর কেন্দ্রীক চিটফান্ড সংস্থাও যে কোটি কোটি টাকা আমানতকারীদের থেকে তুলে গায়েব করে দিতে পারে তাতে তাজ্জব বনেছেন তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রের খবর, বর্ধমান সানমার্গ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কর্নধার সৌম্যরূপ ভৌমিকের সঙ্গে রাজনীতি থেকে পুলিশ-প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল।
সূত্রের খবর, প্রথমে সানমার্গ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি রাজ্যজুড়ে আমানত সংগ্রহের কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে টাকা পয়সার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে গন্ডগোলের সূত্রপাত হয়। তখনই পুরনো সংস্থা থেকে বেরিয়ে এসে সৌম্যরূপ ভৌমিক বর্ধমান সানমার্গ ওয়েলফেয়ার অর্গানাজেশন তৈরি করে। উদ্দেশ্য খোলা বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা। বর্ধমান শহরের বীরহাটায় অফিস তৈরি করে আমানত সংগ্রহ করা শুরু করে। বিশেষত দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে নানা জায়গায় অফিস খুলে দেদার টাকা তুলতে শুরু করে। সেবির নিষেধ সত্বেও নানা কায়দায় বন্ড ছেড়ে টাকা তোলা চালিয়ে যায় সংস্থাটি।
সিবিআই সূত্রের খবর, মান্থলি ডিপোজিট স্কিমের পাশবইতে এলআইসির লোগো ব্যবহার করে আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্য করে আমানত সংগ্রহ করতে থাকে। বর্ধমান সানমার্গ ইনসিওরেন্স অ্য়াডভাইসর লিমিটেড নামেও আমানত উঠতো। সারদাসহ যখন বিভিন্ন চিটফান্ড কাণ্ডের কেলেঙ্কারি সামনে আসে তখন আমনতকারীরা টাকা ফেরতের জন্য বর্ধমান সানমার্গের অফিসগুলিতে গিয়ে ভিড় করতে থাকে। বিক্ষোভও চলে। তখন বেগতিক বুঝে সৌম্যরূপ ভৌমিকসহ সংস্থার কর্তারা গা ঢাকা দেয়। জানা গিয়েছে, সেন্ট্রাল জোন মার্কেটিং লিমিটেড নামে আরও একটি সংস্থা খুলেছিল বর্ধমান সানমার্গ। বর্ধমান সানমার্গের অর্থানুকূল্যে দুর্গাপুর থেকে ভক্স নামে একটা টেলিভিশন মিডিয়া সম্প্রচার শুরু হয়েছিল। কলকাতার স্যাটেলাইট চ্যানেল থেকে বেশ কয়েকজন সেখানে যোগও দিয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়। সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা খোঁজ নিচ্ছেন কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এই সংস্থার একটি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক ও পুলিশ-প্রশাসনের কোন কর্তাব্যক্তিরা হাজির ছিলেন।
ইতিমধ্যে বর্ধমান পুরসভার প্রাক্তন প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান তৃণমূল নেতা প্রণব চট্টোপাধ্য়ায়কে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তিনি এখন জামিনে রয়েছেন। তাঁর স্ত্রীর 'টক অব দ্য়া টাউন' ভবনেই ছিল বর্ধমান সানমার্গের অফিস। এরপর এই চিটফান্ড কাণ্ডে প্রোটেকশন মানি নেওয়ার অভিযোগে হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান রাজু সাহানীকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তাঁর বাড়ি থেকে ৮০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, 'কেন আমাকে গ্রেফতার করেছে সেটাই বলতে পারব না। ভাড়ার টাকা পর্যন্ত বাকি ছিল।' রাজু সাহানী চেনেন না বলেও তিনি জানিয়েছেন।