রাজপরিবারের উত্তরাধিকারারীরা বর্ধমানে স্থায়ী বসবাস ছেড়েছেন অনেক যুগ আগেই। রাজপরিবার প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দির, রাধাবল্লভ মন্দির, সোনার কালিবাড়ি, বিজয়বাহার-সহ কয়েকটি রাজসম্পত্তি এখনও রয়েছে। রাজবাড়ি এখন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অফিস। গোলাপবাগ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। রাজ্যপাট না থাকলেও এখনও রাজঐতিহ্য মেনে বর্ধমান শহর আগামিকাল, শনিবার রঙের উৎসবে মেতে উঠবে। বর্ধমান-রাজাদের কুলদেবতাদের দোলপূর্ণিমায় আবির-রঙ উৎসর্গ করা হয়। দেবতাদের সম্মানার্থে দোলপূর্ণিমার দিন সাধারণ মানুষ রং খেলেন না। সেই প্রথা এখনও বিদ্যমান।
বর্ধমান রাজবাড়ির নিকটেই কূলদেবতা লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর মন্দির। এই মন্দিরে এখনও দীর্ঘ বছরের প্রথা মেনে পূর্ণিমার দিন দোল উৎসব পালিত হয়। দেবতাদের হোলি হয়। বর্ধমান রাজ পরিবারের উত্তরাধিকারী ড. প্রণয়চাঁদ মহতাব সস্ত্রীক এদিন লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে হাজির হতেন। তিন বছর ধরে করোনা আবহে আসতে পারেননি ছোট রাজপুত্র। জাঁকজমক এখন ইতিহাস, উৎসব আগের তুলনায় ম্রিয়মান। তবে রাজঐতিহ্য ও প্রথা মেনেই হয় দেবতার দোল। বর্ধমানবাসীও একটা দিন বাড়তি অপেক্ষা করে থাকেন হোলিতে রং খেলবেন বলে।
লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত উত্তম মিশ্র বলেন, 'আনুমানিক তিনশো সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো এই মন্দির। একসময় জাঁকজমক সহকারে হোলি উৎসব হতো। দেবতাদের রং খেলা হয়, তাই বর্ধমানবাসী পরের দিন রং খেলে। প্রণয়চাঁদ মহতাব মাঝে-মধ্যে আসেন। তবে আগেকার মতো জৌলুষ না থাকলেও এই মন্দিরে প্রথা মেনে হোলি উৎসব হয়ে আসছে। মহারাজাদের পরিবার আগে দেবতাদের পায়ে রং দিতেন। ওই দিন প্রজারা রং খেলতেন না। পরের দিন রঙের উৎসবে মাততেন প্রজারা। এখনও সেই প্রথা চলে আসছে শহরে।'
অবাঙালিদের হোলি উৎসব হয় দোলপূর্ণিমার পরের দিন। বর্ধমানের মহারাজারাও বাংলার বাইরে থেকে এসেছিলেন। তারওপর দোলপূর্ণিমার দিন দেবতার হোলি। দুইয়ে মিলে শুক্রবার নয়, শনিবার বর্ধমান মাতবে রঙের উৎসবে। তবে বিগত কয়েকবছর ধরে কয়েকটি সংস্থা শহরে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করছে দোলের দিন। রাজপরিবারের বংশধর বিষাণচাঁদ কাপুর বলেন, 'রাজপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই মন্দির স্থাপন করা হয়। ঠাকুরের দোলের দিন শহরে কেউ হোলি খেলে না। এটাই প্রথা। সাধারণ মানুষ হোলি খেলে পরের দিন। কালের সঙ্গে জাঁকজমক হারিয়ে গিয়েছে।'